অনুপ্রেরণা

ব্লগ ব্লগিং কি, ব্লগার কারা?

ব্লগ কি, ব্লগিং কি, আর ব্লগার ই বা কারা, স্বচ্ছ ধারনা পেতে টেকপ্রেমী সজীব আজকে হাজির হয়েছেন ব্লগ, ব্লগিং ও ব্লগার কি? নিয়ে। চলুন পড়ি বিস্তারিত।

blogব্লগ, সেটা আবার কি?

প্রশ্নটা আপনার মনে আসতেই পারে। বাস্তবিকভাবে আমাদের অধিকাংশ তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে থেকেও বেশিরভাগ বাংলাদেশের জনসাধারণ এ সম্পর্ক সুস্পষ্ট ধারণা রাখি না।


ব্লগ কি?


এটা যতটা পারি সহজ ভাবে সোজা বাংলায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো…

ব্লগ হচ্ছে এক প্রকার ওয়েবসাইট।
প্রশ্ন আসতে পারে যে

“কোন প্রকার ওয়েবসাইট?

নাস্তিকের ওয়েবসাইট?”

উত্তরে আমি বলবো- যে এটা এমন এক প্রকার ওয়েবসাইট যা আপনি ফ্রিতে পাবেন। ডোমেইনের জন্যে টাকা খরচ করতে হবে না। এখানে আপনি ফেইসবুকের মত বরং আরো সুন্দর করে পোস্ট দেয়া তো বটেই আরো মিডিয়া ফাইল এখানে আপলোড দিতে পারবেন। এর জন্যে আপনাকে ওয়েব কোডিং যেমন – HTML, CSS, Javascript, Php জানতে হবে না।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নে যে ” এটা কি নাস্তিকের জন্যে?”
বর্তমানে ২০১৩-১৫ সালে যেহেতু প্রচুর নাস্তিক ব্লগে নাস্তিকতা নিয়ে ব্লগিং করে ব্লগার হিসেবে খ্যাতি পেতে গিয়ে খুন হচ্ছে সেহেতু আপনার মনে এই প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক।

যাই হোক তার উত্তরটা হলো- না, ব্লগ এ ব্লগিং করা শুধু নাস্তিকের জন্যে সীমাবদ্ধ না।
raif-yellow-630x630আপনি চাইলে এখানে প্রযুক্তি, কাব্য, উপন্যাস, গল্প, প্রতিদিনের বিভিন্ন আপডেট কিছু কিংবা নিজের যা মনে চায় তা লিখতে পারেন আপনাকে কেউ বাধা দিবে না। আপনি যদি ফটোগ্রাফার হন তাহলে আপনার সকল ছবি আপনার ব্লগে আপলোড দিয়ে সবার জন্যে উন্মুক্ত করতে পারেন… এটাও ব্লগিং এর মধ্যে পরে। তাছাড়া সম্প্রতি সময়ের অনেক অনলাইন নিউজ পেপারও এক একটা ব্লগ।

অর্থাৎ ব্লগ হচ্ছে এমন এক উন্মুক্ত প্লাটফর্ম যেখানে আপনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা শেয়ার করতে পারবেন এবং সেখানে সকলে মতামতও প্রকাশ করতে পারবে।

সম্প্রতি সময়ে কিছু নাস্তিক লেখক ব্লগিং করে আমাদের মস্তিষ্কে ব্লগ এবং নাস্তিক এই দুটি শব্দকে এক করে ফেলেছে তাই আমাদের ব্লগিং শব্দটা শুনলে মনে মনে শুরু হয়ে যায় গোলযোগ এবং কেউ ব্লগার শুনলেই ভেবে বসে থাকি সে ব্যাক্তি একজন নাস্তিক!
ব্লগ কি? এ ব্যাপারে তো মোটামুটি সহজ সরল ধারণা পেলেন। এবার আসি সে কথায় যে কিভাবে হবেন একটা ব্লগের মালিক…!
iStock_000008508482XSmall


যেভাবে হবেন ব্লগারঃ


 

www.wordpress.com এবং www.blogspot.com এগুলোর মত অনেক সাইট আছে যেখানে আপনি ফেইসবুকের মত সহজ সরল নিয়মে সাইন আপ করে নিজের ব্লগ তৈরী করে নিতে পারবেন। সাইন আপ করলে আপনার একটা প্রোফাইল হয়ে যাবে আর সেটা দিয়ে নিজে একটা ইউনিক এড্রেস দিয়ে ব্লগটি খুব সহজেই খুলে ফেলতে পারবেন। তারপর নানা রকম থিমের উপর ভিত্তি করে সহজেই ব্লগটিকে বিভিন্ন রকম করে সাজাতে পারবেন। এ কাজ গুলো খুবই সোজা। একবারেই একটা ব্লগ নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে বুঝে যাবেন।
আর না বুঝলে ইন্টারনেটে এ নিয়ে হজারো টিউটোরিয়াল তো আছেই…

আর হ্যা আমার উপরের লেখায় দুটো ছোট্ট সীমাবদ্ধতা আছে যেটা এখন এই দ্বিতীয় ধাপে বলবো,  সেটা হলো আমি বলেছিলাম ব্লগ কোন টাকা পয়সা ছাড়াই ফ্রিতে খোলা যায়। কথা সত্য কিন্তু সব রকম ব্লগ না। প্রিমিয়াম ব্লগ খুলতে টাকা লাগে।

দাড়ান খুলে বলছি, সেটা হলো আমি আমার এই ব্লগ খোলার সময় যে ইউনিক নামটি দিয়েছিলাম তা হলো- sajidurshajib এবার আমার ব্লগটির এড্রেস দাড়ালো- www.sajidurshajib.wordpress.com
যেহেতু আমি wordpress এ খুলেছি তাই সে আমার সাইটের নামের পিছনে ঝুলে থাকছে..!
কিন্তু আমি যদি এটাকে টাকা খরচ করে প্রিমিয়াম ব্লগে পরিণত করি তাহলে এটা দাড়াবে- www.sajidurshajib.com

বুঝেছেন তো এবার? প্রিমিয়াম আর ফ্রি ব্লগের পার্থক্য?  আপনি হয়তো ভাবছেন শুধু  নামে পার্থক্য, আসলে শুধু নামে নয় প্রিমিয়াম ব্লগের সাথে ফ্রি ব্লগের অনেক পার্থক্য আছে সেখানে আমরা যাবো না। বেশি আলোচনা আবার আপনাদের কাছে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
(ব্লগের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে মূলত প্রিমিয়াম ব্লগই লাগে।)
css-html-in-email
আর দ্বিতীয় যে কথাটায় আমার সামান্য ভুল ছিল তা হলো কোন কোডিং জানা লাগবে না। আসলে ঠিক তা নয়। html ও css জানা থাকলে আপনি ব্লগিং আরো সুন্দর করে করতে পারবেন। তবে এখন ব্লগে ভিজ্যুয়াল যে সুবিধা পাওয়া যায় তাতে করে এসব না জানলেও চলে আর এসব জেনে রাখাও কঠিন কোন ব্যাপার না।

ওয়েব কোডিং শিখতে চাইলে webcoachbd.com ভিজিট করে দেখতে পারেন।

আচ্ছা উপরে লেখায় আমি সীমাবদ্ধতা রেখে তার সমাধান কেন পরের আরেক ধাপে দিলাম?
কারণ আমার মনে হয়েছিল প্রথমেই এই লেখা গুলো ঐদিকে লিখলে আপনাদের মনে কিছুটা চিন্তার জটলা পাকাতে পারে। তাই ইচ্ছে করে ওটা পরে লিখলাম।
blogging-image
এবার যদি আপনার কাছে যদি মনে হয় নিজের এভাবে ব্লগ সাইট খুলে ব্লগে লিখালিখি করা ঝামেলার তাহলে আপনি অন্যান্যদের ব্লগে ব্লগার হিসেবে লিখতে পারেন। যেমন- www.somewhereinblog.net তারপর www.amarblog.com (বেশ জনপ্রিয় দুটো ব্লগ)এরকম অনেক ব্লগ আছে।
যেখানে আপনি নিজের একাউন্ট খোলার মাধ্যমে একজন ব্লগার হিসেবে লিখালিখি করতে পারবেন।
আবার www.techmasterblog.com এর নাম তো শুনেছেন নিশ্চয়ই?
বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখির ব্লগ।
সেখানেও আপনি একজন টেকপ্রেমী অর্থাৎ ব্লগার হিসেবে যোগ দিতে পারেন। তাছাড়াও টেকটিউনস সহ আছে আরো অনেক ব্লগ
এই ব্লগ গুলো মূলত ডোমেইন কিনে তৈরী করা হয়েছে অর্থাৎ প্রিমিয়াম ব্লগ।
50353_56099542259_407306_n1


ব্লগের প্রয়োজনীয়তা এবং সুবিধাঃ


 

ব্লগ কেন প্রয়োজন এবং তা আমাদের কিরূপ সুবিধা দিয়ে থাকে এ প্রশ্নটা এখন আপনার মাথায় ঘুরপাক খাবেই… তাই তো?

এতক্ষণ পড়ে যা বুঝলেন তাতে বলে বসতে পারেন এটা তো ফেইসবুকে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করার মতই…!
আসলে ঠিক তা নয়…!
আপনার টাইমলাইনের লেখা সব সময় থাকবে না আর ব্লগের লেখাগুলো আপনার আজীবন থাকবে।

আর সবচেয়ে মজার ব্যাপারটার জন্যে ব্লগ জনপ্রিয় তা হলো কেউ যদি গুগল কিংবা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনে এমন কিছু লিখে সার্চ দেয় যা কিনা আপনার ব্লগের কোন লেখার সাথে মিলে যায় তাহলে তা গুগল বা আন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন আপনার ব্লগের সে লেখাটা দেখাবে।
IMG_20150528_074521
যেমন “বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট” লিখলে সবার আগে আমার ব্লগের রেজাল্ট গুগলে দেখায় কারণ এ সম্পর্কে আমি বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি আর এ নিয়ে অন্যান্য ব্লগে লেখার চেয়ে আমার ব্লগে লেখা বেশি ছিল বলে ভিজিটর বেশি ছিল তাই সবার আগে গুগল আমার এই লেখা প্রদর্শন করে।

এভাবে আপনার ব্লগে ভিজিটর বাড়বে যদি বেশিরভাগ মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয় সম্বলিত হয় আপনার ব্লগ। ভিজিটর বাড়ানোর কিছু উপায়ও অবশ্য আছে যাকে seo(search engine optimization) বলে সেগুলো নিয়ে এখানে বিস্তারিত লিখতে চাচ্ছি না। লেখা বড় হয়ে যাবে বলে।
অবশ্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত www.webcoachbd.com তে দেয়া আছে।
seo
এবার তো একটা জিনিস বুঝতে পারছেন গুগল কিংবা গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিন গুলো কিভাবে আমাদের বিভিন্ন চাহিদা মিটিতে থাকে আর সাম্প্রতিক বিশ্বে ব্লগের প্রয়োজনীয়তা…?


বাংলাদেশে ব্লগ এবং ব্লগিং


 

আমাদের দেশে ব্লগিং এর ক্ষেত্রে যে নাস্তিক আস্তিকতা নিয়ে সাইবার স্পেসে কি পরিমাণে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা তো বুঝতেই পেরেছেন?
এবার আমি আরেকটা বিপত্তিকর দিকে যাই।
তা হলো বর্তমানে কিছু কুৎসিত মনমানসিকতার মানুষ পর্ণোগ্রাফিমূলক বিষয় নিয়ে ব্লগিং করছে । তারা এসব ব্লগে এমনকি মা বাবা’র মত সম্পর্ক গুলো নিয়েও আজে বাজে লেখা লিখতে পিছু হটছে না।
আর তারা বাংলায় ব্লগিংগুলো করছে বলে আমরা বাংলা কিছু শব্দ নিয়ে সার্চ দিলেই এমন সব ব্লগ সার্চ ইঞ্জিন প্রদর্শিত হতে শুরু করে কারণ সার্চ ইঞ্জিন তো তাই দেখাবে যা কিনা আপনার সার্চ দেয়া শব্দের সাথে মিলে যায়।
ধরুন আপনি জেমসের “মা” গানটি খুজছেন তাই মা লিখে সার্চ দিলেন এমন সময় ঐসব বাজে ব্লগের মা নিয়ে লেখা খারাপ কন্টেন্ট গুলা দেখাতে লাগলো….
বুঝতেই পারছেন কিভাবে আমাদের সাইবার স্পেস দূষিত হচ্ছে।  এমন অবস্থা রুখে দাড়াতে প্রয়োজন আমাদের মধ্যকার সুস্থ মনমানসিকতার মানুষদের ব্লগিং করে এসব ব্লগ থেকে মানুষকে দূরে রাখা এবং সাইবার স্পেসে আমাদের ভাল কিছু লিখে বাংলা শব্দমালা দিয়ে সমৃদ্ধ করা।

আর আমাদের মধ্যে বাংলা ব্লগিং করে অনেকেই অনেক ভাল ভাল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।
যার ফলে এখন আমাদের ইংরেজি ব্লগ গুলোতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে কিছুটা ঝামেলা কম পোহাতে হয়।

ব্লগিং এর খারাপ এবং ভাল দিক সম্পর্কে এতক্ষণে আশাকরি কিছুটা জানলেন।

ব্লগিং নিয়ে অনেক কথা বললাম।
অনেকেই হয়তো এত বড় পোস্ট দেখে বিরক্ত বোধ করেছেন এই ভেবে যে সামান্য ব্যাপার নিয়ে এভাবে বিস্তারিত লেখার কি দরকার ছিল..!
কথা ঠিক এই ছোট্ট বিষয়টা নিয়ে এভাবে না লিখলেও পারতাম কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই যে, এই ছোট্ট ব্যাপারটা বাংলাদেশের খুব কম মানুষই জানে।
ব্লগিং সম্পর্কে তাই একটা স্বচ্ছ ধারণা যাতে সবার মনে জাগে তাই এই লেখাটি তার ক্ষুদ্র একটা প্রয়াস মাত্র…
(আরো বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ দিতে থাকুন)

লেখাটা ভাল লাগলে এবং যুক্তি যুক্ত মনে হলে ফেইসবুক বা অন্যান্য সোস্যাল সাইটের বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন…

আমাকে ফেইসবুকে পেতে এখানে  ক্লিক  করুন।

সজীব

ভালবাসি পড়তে ও চেষ্টা করি লিখতে। লিখতে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় বলে মানুষের গল্প শুনি, মানুষের সাথে কথা বলি, আড্ডা দেই... এভাবেই কিছু শিখি, সেভাবেই লিখি। এখানে আমার নিজের কৃতিত্ব নেই। সব আপনাদের, মানে আপনারা যারা কিনা আমার সাথে আড্ডা দেন তাদের...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।