ডিন এন এ স্টোরেজ ব্যবস্থা
কেমন হয় যদি পুরো পৃথিবী কে একটি কাপে ঢুকিয়ে ফেলা যায়? অবাক হলেন! আচ্ছা বাদ দিন, সহজ করে বলি পুরো পৃথিবীর যাবতিয় সকল তথ্য একটি কাপের যায়গায় রাখা সম্ভব ? আপনার আমার কাছে তা অসম্ভব মনে হলেও তাকে সম্ভব করে তুলেছে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়।
আসুন এবার বিস্তারিত জানি। আমরা ডি.এন.এ সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানি। জীবের তথ্যেও ধারক ও বংশের বাহক বলা হয়। ডি.এন.এ টেস্ট নাম টা তো আমরা নাটক সিনেমা দেখে খুব ভাল মতো শুনেছি ।
মূলত প্রতিটি জীবের যে কোন অংশ থেকে ডি.এন.এ সংরক্ষণ করা যায় এবং ঐ ডি.এন.এ থেকে জীবের যাবতীয় তথ্যাদি জানা যায় । যেমনটি আমরা দেখে থাকি প্রাণীদেও পাওয়া হাড় থেকে ডি.এন.এ সংরক্ষণ করে কতবছর আগে প্রাণীটির অস্তিত্ব ছিল, এর আকৃতি , প্রকৃতি ইত্যাদি সব পাওয়া যায়। ঠিক এই ধারণা কে কেন্দ্র করে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক তৈরী করেন একটি কৌশল যার নাম দেওয়া হয় ডি.এন.এ স্টোরেজ । তারা ২০১২ সালে তাদেও গবেষণা ফল প্রকাশ করেন । পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি আগ্রহী দল ডি.এন.এ তে ডাটা স্টোরেজ তথা সংরক্ষণ করেন এবং পুনরায় তা উদ্ধার করে। যেখানে ছিল ৩টি ছবি ।
মূলত ডি.এন.এ ৪টি প্রোটোটাইপ যা অ,ঞ,ঈ,এ যথাক্রমে অ্যাডেনিন, থাইমিন, সাইটোসিন, গুয়ানিন দিয়ে গঠিত হয় এবং এরা একটি ধারা বজায় রাখে। যাকে বলাহয় কোডন। অ,ঈ=০ ; ঞ,এ=১ ধরে ( কেননা কম্পিউটার ০,১ ছাড়া কিছু বোঝে না ) ডি.এন.এ কে সাজানো হয় যা থেকে কৃত্তিম ডি.এন.এ কোডন সজ্জিত হয় পরবর্তীতে ঐ কোড বিন্যস্ত করে আবার তথ্য উদঘাটন করা যায় । নিচের চিত্রে দেখলে বুঝবেন।
এবার আসুন এত বক বক কেন করছি কি আছে এতে । বলব অনেক কিছুাই আছে যা আপনাকে অবাক করার জন্য যথেষ্ট ! প্রতিনিয়ত আমরা ডাটা স্টোর করে থাকি মাঝে মাঝে তা নষ্ট ও হয় কিন্তুডি.এন.এ তে তা থাকবে যুগ যুগ ধরে কেননা কোটি কোটি বছর আগের লাশ থেকেও ডি.এন.এ’র মাধ্যমে জন্ম কুন্ডুলি বের করা যায়। নিচের লাইব্রেরি টা দেখুন
যদি বলি এই লাইব্রেরির জন্য ডাটা স্টোরেজ এর জন্য জায়গা কীরকম লাগবে ? হয়তো বলবেন ৮/১০ হাজার জিবি যার জন্য জায়গাও লাগবে ১টি টি-টিবিলের সমান । কিনÍু ডি.এন.এ স্টোরেজ-এ এর জন্য জায়গা দরকার মাত্র ১ ফোটা । কী চাপা-বাজ মনে হচ্ছে ? মনেহলেও ইহা সত্য । মাত্র ১ গ্রাম ডি.এন.এ তে স্টোরেজ হয় ১হাজার কোটি জিবি ডাটা । একটি ড্রপার দিয়ে এক ফোটা তরল ফেললে তার আয়তন হয় ১মিলি মিটার৩ আয়তন আর এই মিলি মিটার৩ আয়তনে ডি.এন.এ স্টোরেজ করা সম্ভব ১এক্সা বাইট (১০০ কোটি জিবি) , যদি আয়তন হয় ১ সেন্টি মিটার৩ তাহলে তাতে রাখা যাবে ১জেটা বাইট (১ লক্ষ কোটি জিবি) । পুরো পৃথিবীর সকল সার্ভার , ক্লাউড ও নানা জায়গার তথ্য সংরক্ষণ করলে তা হবে আনুমানিক ১৫ জেটা বাইট তথ্য আর এ তথ্যেও জন্য দরকার ১৫ সেন্টিমিটার৩ আয়তন ডি.এন.এ যা কিনা একটি ছোট গ্লাস বা মাঝারি আকৃতির কাপের সমান। নিচে যে সাপের মতোন প্যাঁচানো জিনিস দেখছেন তা ডি.এন.এ এবং এটি আপনার মাথার চুলের গোড়ার ১০ লক্ষ ভাগের ১ভাগ এর সামান্য আংশ ।
সম্প্রতি ঈঊঘওঝণঝঝ নামের এক প্রতিষ্ঠান ডি.এন.এ স্টোরেজ পেনড্রাইভ বাজারজাত করছে । তারা বলছে ডি.এন.এ তথ্য সংরক্ষণ করুণ ভবিষ্যতে তা থেকে আপনার ক্লোণ বানানো যেতে পাওে ।
কিন্তু ভাই কথায় আছে ”যত গুর তত মিষ্টি, পিপড়া করে অনাসৃষ্টি” ডি.এন.এ স্টোরেজ এর ব্যয় ভার এত বেশি যে
ধারণা করা হয় ২০২৫ সাল এর দিকে মানুষ এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারবে । সেই সাথে আর একটি সমস্যা হলো এর ডাটা রিকভার অনেক ধীর গতি সম্পন্ন। আর এই সমস্যা সমাধানের লক্ষে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা ।
বিস্তারিত আরো জানতে সার্চ করুন “উঘঅ ংঃড়ৎধমব”
আশা করি ২০২৫ সালে এই জিনিস পেনড্রাইভ এর দামে এবং দ্রুত ডাটা রিকভারের সাথে পাওয়া যাবে ।
তথ্যসূত্র:-
১) বিবিসি রিপোর্ট ৪ জুলাই ২০১৩ (http://www.bbc.com/future/story/20130724-saving-civilisation-in-one-room)
২) এন ডেইলি নিউজ (http://www.nydailynews.com/news/national/usb-stores-dna-cloned-future-article-1.2074896)
৩) ইউটিউব