গেমিং থেকে গেমার হওয়ার গল্প
মাঠের খেলাধূলা থেকে নিজেকে প্রায় গুটিয়ে নিয়ে মন দিয়েছেন কম্পিউটার গেমিংয়ে। ইউনিভার্সিটি ফুটবল টিমের গোলকিপার হিসেবে সুনাম আছে তার। নাম তার আবরার ফাইয়াজ-উল হক, প্রাইভেট ভার্সিটি (নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি) অধ্যয়নরত, বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র। তবে মাঠের চেয়ে সফলতা বেশি কম্পিউটারেই!!
মানুষের দ্বারা যে সকল ভালো কাজ করা সম্ভব, সেগুলো অর্জন করা আর জীবনকে উপভোগ করাই হচ্ছে তার জীবনের লক্ষ্য। শখ হচ্ছে কম্পিউটার গেমিং আর ফুটবল। অবসর সময়ে মূলত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই কাটানো হয়। তার প্রিয় উক্তি হচ্ছে “আমি ১০০% পরিশ্রমী কিন্তু ০% মেধাবী”!!
আসছে ফারক্রাই ৫
ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার গেমিংয়ের প্রতি আবরারের আকর্ষন ছিল। বড় হয়ে যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে প্রফেশনাল গেমিং বলতে আসলে একটা জিনিস রয়েছে, তখনই তিনি সেটাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রথম দিকে তিনি এন.এফ.এস মোস্ট ওয়ান্টেড গেম দিয়েই শুরু করেছিলেন।
বন্ধু আবিদ আর ফারাবীকে দেখে অনুপ্রাণিত হতেন তিনি। এরা দুজনেই ছিলেন সেই সময়ের নাম করা গেমার। আবিদ দুবার ওয়ার্ল্ড কম্পিউটার গেমিং প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের কাছেই হাতেখড়ি।
এরপর ২০০৯ সালে এন.এফ.এস মোস্ট ওয়ান্টেড গেম খেলে আবরার ওয়ার্ল্ড কম্পিউটার গেমিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উত্তীর্ণ হন। প্রতিযোগিতায় আবরার প্রথম ৮ জনের মধ্যে অবস্থান করেন। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, যদি গেমিংয়ের পেছনে কঠোর পরিশ্রম করা হয় তাহলে ভালো করার ক্ষমতা তার রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ২০১০ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
কিন্তু আবরারের মধ্যে আসল পরিবর্তন তখন আসে যখন, তাসবিরের সাথে পরিচয় হয় এবং ভয়েড নামক গেমিং সংস্থায় যোগদান করেন। ভয়েড’এ যোগদানের পরে আবরারের চোখ খুলে যায়। গেমিং সংস্কৃতি সম্পর্কে এখানে পরিস্কার ধারণা পান তিনি। আবরারের ভাষায়, “ভয়েড’এ দুই বছর কাটানো সময়টা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।”
ওয়ার্ল্ড কম্পিউটার গেমিং প্রতিযোগিতার আগ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর তারা অপরাজিত ছিলেন। রিজিওনাল ফাইনাল জেতার পর তাদের দল সকলের দৃষ্টিতে পড়ে। এই দেড় বছর সময়ের মধ্যে তারা ৫০ টিরও বেশি শিরোপা জেতেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আর গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়ার্ল্ড কম্পিউটার গেমিং-২০১২ শিরোপা জয়।
সেই প্রতিযোগিতায় টানা ৬ ঘন্টা গেম খেলে তাদের দল ফাইনালে উঠেছিল। পুরো টিম তখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা শিরোপাটা অর্জন করে। দক্ষিণ কোরিয়াতে তাদের অভ্যর্থনা দেখে সবাই অবাক হয়। দলে দলে ছেলে মেয়েরা এসে তাদের অটোগ্রাফ নিচ্ছিল!!
বর্তমানে আবরার নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডে ইন্টার্নশিপ করছেন। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে নিজের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাড় করানো। আর এর পাশাপাশি গেমিং নিয়ে এগিয়ে চলা তো থাকবেই।
Courtesy -pusb group