সেরা ফ্রি পিসি সফটওয়্যার ২০১৭ (১ম পর্ব)
বর্তমান যুগে মানুষ কম্পিউটারের চেয়ে মোবাইল ব্যবহার করাকেই বেশি পছন্দ করে। তাই বলে আমরা কম্পিউটারের যুগকে পেছনে ফেলে আসিনি। দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। আর কম্পিউটারে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করার জন্য চাই বিভিন্ন সফটওয়্যার।
দামি সফটওয়্যার ব্যবহার করলেই যে তা আপনার উপকারে আসবে এমন কোন কথা নেই। সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ভাল না হলে দামি সফটওয়্যার ব্যবহার করেও কোন লাভ হয়না। অনেক ফ্রি সফটওয়্যার যুগ যুগ ধরে কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে সুপ্রসন্ন করেছে।
এখানে ২০১৭ সালের সেরা ১৭৮টি ফ্রি সফটওয়্যারের নাম দেয়া হল, যা উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, লিনাক্স, আইওএস, অ্যানড্রয়েড, অ্যামাজন ফায়ারওএস, ক্রোমওএস সহ প্রায় সকল ধরণের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়।
অ্যান্টি ম্যালওয়্যার
১. অ্যাভাস্ট ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস (২০১৬)
অ্যাভাস্ট হল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য(!) ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এটি আপনার নেটয়ার্ক সিস্টেমে যেয়ে রাউটারকে সুরক্ষা প্রদান করবে। এই বছর এতে পাসয়ার্ড ম্যানেজারও যোগ করা হয়েছে। যদিও অ্যাভাস্ট এর আওতাধীন সিসি ক্লিনার অ্যান্টিভাইরাসে ম্যালওয়্যার পাওয়া গিয়েছে।
২. এভিজি অ্যান্টিভাইরাস ফ্রি (২০১৭)
এভিজি এ বছর নতুন রুপে এসেছে। এর নতুন বিল্ট-ইন ভার্সন অনেক কার্যকরী।
৩. পান্ডা ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস (২০১৬)
ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার হিসেবে পান্ডা নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। এটি সহজে ব্যবহার করা যায়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউএসবি ডিভাইস পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদান করে।
অডিও
৪. এলএমএমএস
প্রো টুলস কিংবা গ্যারেজ ব্যান্ড কেনার অর্থ না থাকলে এই নতুন সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন। এই সফটওয়্যারটি সব ধরণের উইন্ডোজে কাজ করে এবং অনেক দ্রুত মাল্টি-ট্র্যাক রেকর্ডিং করে।
৫. অডাসিটি
এত সফটওয়্যারটি অডিও ফাইল রেকর্ড করতে পারে। একটি অডিও ফাইল থেকে মাল্টি-ট্র্যাক ফাইল এডিট করতে পারে। এটি নতুন এবং পুরাতন সকল ধরণের ব্যবহারকারীই সহজে ব্যবহার করতে পারে।
ব্যাকআপ ও সমন্বয়
৬. ড্রপবক্স
ড্রপবক্স হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাকআপ সফটওয়্যার। ড্রপবক্সে যেকোনো ফাইল আপলোড করলে তা ক্লাউডে সংরক্ষিত হয়। তারপর আপনার একাউন্ট থেকে যখন খুশি যেকোনো ডিভাইস থেকে ফাইল নামিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ভুলে কোন ফাইল ডিলিট করে ফেললে তা আবার ফিরে পাওয়া যায়। ড্রপবক্সে একাউন্ট খুললে ২ জিবি খালি জায়গা পাওয়া যায়।
৭. মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভ
ব্যাকআপ টুলগুলোর মধ্যে ওয়ানড্রাইভ এর ব্যবহার সবচেয়ে সহজ। মাইক্রোসফট অফিস এবং উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি প্রধান ক্লাউড স্টোরেজ। বন্ধু-বান্ধবকে রেফার করে এই ড্রাইভে ১৫ জিবি এবং অফিস স্যুট ৩৬৫ হোম ব্যবহার করে ১ টেরাবাইট খালি জায়গা পাওয়া যায়।
৮. বক্স
বক্স এ একাউন্ট খুললে ১০ জিবি খালি জায়গা পাওয়া যায়। এতে ২৫০ এমবি এর বেশি বড় সাইজের ফাইল রাখা যায়না। বক্স এর সেবার মান এখন আরও অনেক উন্নত হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফাইলকে ক্লাউডে সংরক্ষণ করে এবং বিভিন্ন ফাইলের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
৯. আইড্রাইভ
আইড্রাইভে ফাইল ব্যাকআপের জন্য ৫ জিবি খালি জায়গা পাওয়া যায়। যদিও এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা নয়; তবুও আইড্রাইভের সেবায় আপনি মুগ্ধ হবেন। এটি ফেসবুক থেকে আপনার ছবি এবং ভিডিও ব্যাকআপ করতে পারে।
১০. এজ ইউএস টোডো ব্যাকআপ ফ্রি
ব্যাকআপ মানেই ক্লাউডে ফাইল সংরক্ষণ করা নয়। যা এই সফটওয়্যারটি দেখে বুঝা যায়। এজ ইউএস টোডো আপনার পুরনো হার্ড ড্রাইভ ক্লোন করে, অন্য ড্রাইভে হার্ডড্রাইভের একটি অংশ ব্যাকআপ করে, তাৎক্ষনিক ডাটা পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফাইলগুলোর ব্যাকআপের ব্যবস্থা করে। এটি আউটলুক ইমেইলও ব্যাকআপ করে।
ব্রাউজার
১১. মজিলা ফায়ারফক্স
বহুল পরিচিত পুরনো এই সফটওয়্যারটি নতুন আঙ্গিকে এসেছে। ব্রাউজার হিসেবে এর অবস্থান সবার উপরে। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল। আইফোনেও এটি এখন ব্যবহার করা যায়।
১২. গুগল ক্রোম
২০০৮ সাল থেকে এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্রাউজার হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্রাউজারের গতিও চরম। আপনি যদি গুগল ব্যবহারের ওপর বেশি নির্ভরশীল হন তবে এই ব্রাউজারটি ব্যবহার করা উচিত। তবে নিরাপত্তা বিষয়ে গুগল ক্রোম তেমন নির্ভরযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা উচিত।
১৩. অপেরা
কয়েক বছর ধরে অপেরা ব্রাউজার তার নিজের অবস্থানটি ধরে রেখছে চমৎকার ভাবে। এর ফিচারগুলোই একে অন্য ব্রাউজারগুলো থেকে আলাদা করেছে। যেমন- ব্রাউজারটিকে নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্য ভিপিএন সেবা, বিজ্ঞাপন ব্লকার, টার্বো মোড,ব্যাটারি সেভারের মতো অনেক ফিচার আছে এতে। এর মোবাইল ভার্সন ‘অপেরা মিনি’ আছে, যা লোড হওয়ার আগে পেইজকে সংকুচিত করে অর্থাৎ পেইজকে মোবাইল ভার্সনের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে লোড করে।
ক্লিনআপ/রক্ষণাবেক্ষণ
১৪. সি ক্লিনার
সি ক্লিনার মানে হল ক্র্যাপ ক্লিনার। ক্লিনআপ সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে এটি ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ। যেকোনো ধরণের অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে। যেকোনো সিস্টেম চালু রাখার জন্য অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো নিজে থেকে মুছে দেয়।
১৫. ডি ফ্র্যাগলার
‘পিরিফরম’ সফটওয়্যার হাউজের আরেকটি রত্ন হল ডি ফ্র্যাগলার। এটি দ্রুত পিসির অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে পিসির গতি বাড়ায়। এটি সলিড-স্ট্যাট ড্রাইভেও কাজ করে।
১৬. সিম ক্লিনার ফ্রি
এটি পিসির রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত প্রায় সব ধরণের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যায়। এটি সব ধরণের ফাইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ও সে অনুযায়ী কাজ করে। ফ্রিতে পিসি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকরী এপ।
১৭. গ্ল্যারি ইউটিলিটিস ৫
উইন্ডোজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক ধরণের কার্যকরী সফটওয়্যার আছে। তবে গ্ল্যারি ইউটিলিটিস ৫ ব্যবহার করে উইন্ডোজ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি আপনি পেতে পারেন চমৎকার গতি এবং ঝামেলাবিহীন সেবা।
১৮. অটোরানস
উইন্ডোজ চালু করলে অনেক ধরণের সফটওয়্যার চালু হয় যা পিসিকে স্লো করে দেয়। অটোরানস এর মাধ্যমে ওই সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলোর কাজ বন্ধ করে দেয়া যায়।
কনফারেন্সিং
১৯. মাইক্রোসফট স্কাইপ
ভিডিও কনফারেন্সিং এর নাম শুনলে সর্বপ্রথম যার কথা আমাদের মাথায় আসে তা হল মাইক্রোসফট স্কাইপ। সফটওয়্যারটি অনেক কার্যকরী এবং প্রায় সব ধরণের ডিভাইসে কাজ করে। স্কাইপে একজন কিংবা অনেকের সাথে একই সাথে ভিডিও কল করা যায়।
২০. গুগল হ্যাংআউট
গুগল টক এর বিকল্প হিসেবে এসেছে নতুন গুগল হ্যাংআউট। তবে গুগল টকে শুধু বার্তা পাঠানো গেলেও, গুগল হ্যাংআউটে ভয়েস ও ভিডিও ক্লিপও পাঠানো যায়। এর কোন ইন্সটলারের প্রয়োজন নেই। যেকোনো ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহার করেই এটি চালানো যায়। এর মাধ্যমে ফ্রিতে এক সাথে ৯ জনের সাথে ভিডিও চ্যাট করা যায়।
২১. গো টু মিটিং ফ্রি
সর্বোচ্চ ৩জন মিলে এতে ফ্রিতে ভিডিও চ্যাট করতে পারে এবং ইউআরএল শেয়ারের মাধ্যমে স্ক্রিন শেয়ার করতে পারে। এতে গুগল কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে একাউন্ট খোলা যায়। এটি ওয়েব ভিত্তিক তাই লিনাক্স, ম্যাক, উইন্ডোজ, ক্রোমবুক প্রভৃতি অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কাজ করে।
২২. অ্যাপেয়ার.ইন
অ্যাপেয়ার.ইন অনেকটা গো টু মিটিং এর মতোই। কারণ উভয়ই ব্রাউজারে ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য ‘ওয়েব আরটিসি’ নামে উন্মুক্ত ওপেন-সোর্স ব্যবহার করে। টকি, ইমো, গ্রুভেও সফটওয়্যারগুলোও ওয়েব আর টিসি ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কেউই অ্যাপেয়ার.ইনকে অতিক্রম করতে পারেনি। এর মোবাইল এপটি দ্বারা ৮ জন মিলে একসাথে ভিডিও কনফারেন্সিং করতে পারে।
ই-বুক এবং ডিজিটাল কমিক্স
২৩. কমিক্সোলোজি কমিক্স
অ্যামাজন কর্তৃক অধিকৃত কমিক্সোলোজি কমিক্স এপটি কমিক বই পড়ুয়াদের জন্য একটি বিস্ময়। এই এপটিতে বাজারে প্রকাশিত নতুন কমিক্সগুলো এইচডি কোয়ালিটিতে পাওয়া যায়। নতুন কমিক্সোলোজি আনলিমিটেড আপনাকে দিচ্ছে প্রতি মাসে কমিক্সের এক বিশাল ভান্ডার পড়ার সুযোগ।
২৪. কিন্ডল
অ্যামাজন কিন্ডল এপ এর মাধ্যমে অ্যামাজন থেকে যেকোনো ই-বুক ক্রয় করা যায়। এর মাধ্যমে বই কেনার আগে অ্যামাজনের কিন্ডল বুক স্টোর ঘুরে আসা এবং পছন্দমত বই বাচাই করা যায়। এপটি বিভিন্ন নোট, বুকমার্কও সংরক্ষণ করে রাখে।
২৫. নুক রিডিং এপ
‘বার্ন্স ও নোবেলস’ এর নুক হল ই-বুকের এক বিশাল ভান্ডার। এতে লিখিত গদ্য ছাড়াও অডিওবুক ও পাওয়া যায়।
২৬. ক্যালিবার
আপনার কাছে যদি অনেকগুলো ই-বুকের সমারোহ থাকে তাহলে তা সুসংগঠনের জন্য ক্যালিবার এর প্রয়োজন। এটি ফাইলকে বিভিন্ন ফরম্যাটে রুপান্তরিত করে। এটি বিভিন্ন ডিভাইসে কাজ করে।
২৭. কমিকর্যাক
কমিকস পড়ার জন্য এই এপটি সর্বোত্তম। এই এপের মাধ্যমে কমিকস শেয়ার করা যায়। কমিকস বিষয়ে নতুন আপডেট পাওয়া যায়।
ইমেইল
২৮. আউটলুক.কম
যাদের মাইক্রোসফট একাউন্ট আছে তারা আউটলুক.কম এ একাউন্ট খুলতে পারেন। এটি ওয়েব ভিত্তিক যেকোনো মেইল প্রেরণের জন্য আদর্শ। উইন্ডোজ ও ম্যাক এর নিজস্ব আউটলুক প্রোগ্রাম আছে। এর আইওএস ভার্সনটি সবচেয়ে চমৎকার।
২৯. জিমেইল
ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ইমেইলের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার এটি। এটি গুগল কন্টাক্টস এর সাথে সমন্বিত হয়ে কাজ করে। এর মোবাইল এপও আছে। এছাড়া এর আছে সেরা স্প্যাম ফিল্টার।
৩০. থান্ডারবার্ড
এর ফিচারগুলোই একে আলাদা ভাবে পরিচয় দিয়েছে। এর একাউন্ট সেটআপ উইজার্ড, বৈচিত্রময় ভাষা, ট্যাবড ইন্টারফেস, দারুণ সার্চিং ক্ষমতা, অবাঞ্চিত মেইল দূর করার টুল প্রভৃতি দক্ষতা একে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। উইন্ডোজে পুরনো থান্ডারবার্ড ভার্সন থেকে নতুন আপগ্রেড ভার্সনে মেইল স্থানান্তর করা যায়।