অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনসোশ্যাল মিডিয়া

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি ও প্রতিকার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন-ফেসবুক, হোয়াটসএপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম প্রভৃতির জনপ্রিয়তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। আজকাল আমরা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পরেছি যে, মোবাইল হাতে নিলে নিজের অজান্তেই আঙ্গুল ফেসবুক কিংবা হোয়াটসএপ আইকনের ট্যাপ করে বসে। শুধু তাই নয়। হোয়াটসএপ থেকে ফেসবুক; ফেসবুক থেকে ইন্সটাগ্রাম; আবার ইন্সটাগ্রাম থেকে হোয়াটসএপ। জীবনটা যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো একে অপরের সাথে এমন ভাবে যুক্ত থাকে যে একটার পর আরেকটা ব্যবহার করতে ইচ্ছা হয়। তাই আমরাও এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিনা। কেননা আমরা এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে এখন এর থেকে বেরিয়ে আসাটা আসলেই মুশকিল। তবে এই বাজে অভ্যাসটি আমাদের জন্য মোটেও সুফলদায়ক নয়। বিশেষ করে আজকের তরুণ প্রজন্ম উৎপাদনমুখী কাজে যোগ না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যা থেকে পরিত্রান পাওয়া দরকার।

আসক্তির কারণঃ

১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যে আমাদের তা বার বার ব্যবহারের ইচ্ছা জাগে। বিশেষ করে এর মোবাইল এপগুলো। গত কয়েক বছরে ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামের ডিজাইন এবং প্লাটফর্মে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। অটোপ্লে, বিরামহীন স্ক্রলিং, নিয়মিত আপডেট যোগ্য টাইমলাইন, নোটিফিকেশন প্রভৃতি ফিচার একে ব্যবহারকারীর নিকট অনেক আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

২. ডেস্কটপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যবহার তেমন জনপ্রিয় না হলেও মোবাইলে সর্বাধিক জনপ্রিয়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, মানুষ আজকাল কম্পিউটারের চেয়ে মোবাইল ব্যবহারের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও সেভাবেই ডিজাইন করা  হয়েছে; যাতে মোবাইল এপ আকারে ব্যবহার করা যায়। ফেসবুক এবং টুইটার ওয়েবসাইট আকারে যাত্রা শুরু করলেও, এর ডেস্কটপ ভার্সন অপেক্ষা মোবাইল ভার্সনের ব্যবহার বেশি।

৩. প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আসক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করে নিউইওর্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অ্যাডেম অল্টার বলেন,”সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ডেস্কটপে ব্যবহারের চেয়ে মোবাইলে ব্যবহার করা বেশি সুবিধাজনক। এতে আনন্দও বেশি। নিউজ ফিড দেখার জন্য যখন কেউ স্ক্রল করে তখন কম্পিউটারে বসে মাউস বাটন স্ক্রল করার চেয়ে মোবাইলে হাতের আঙ্গুল ব্যবহার করে স্ক্রল করা আরও বেশি সহজ মনে হয়। মাউসে স্ক্রল করতে সময় ও শক্তি দুটোই বেশি লাগে। সে তুলনায় সবাই আরামে আঙ্গুল দিয়ে স্ক্রল করাটাই হয়তো বেশি পছন্দ করে। তাই ঘুম থেকে উঠে সবাই আগে নোটিফিকেশন চেক করে। শুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পর পর নোটিফিকেশন চেক করা, নিউজ ফিড দেখার নেশা তার লেগেই থাকে।

৪. তাছাড়া মানুষ আজকাল অনেক অলস হয়ে পড়েছে। তারা তাদের অবসর সময় শুয়ে, বসে কাটাচ্ছে। ওই সময়গুলোতে একাকীত্বতা কাটাতে তারা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে।

পরিত্রানের উপায়ঃ

১. এপ আনইন্সটল করুনঃ আপনি আপনার মোবাইল থেকে সব সামাজিক যোগাযোগ এপগুলো আনইন্সটল করে দিন। সেগুলোর পিসি ভার্সন আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করে নিন। সেক্ষেত্রে বার বার কম্পিউটার খুলে নিউজফিড দেখা কিংবা নোটিফিকেশন পড়ার ইচ্ছা আর জাগবেনা। দিনে হয়তো একবার চেক করা হবে।

২. নোটিফিকেশন বন্ধ করুনঃ ফোনের নোটিফিকেশন অপশন বন্ধ করে দিন। বার বার নোটিফিকেশন আসা মানে অনলাইনে কিশু হচ্ছে। আর এই খেয়াল আপনাকে আপনার দৈনন্দিন কাজ হতে দূরে থেকে দেয়।

৩. নিজেকে ব্যস্ত রাখুনঃ নিজেকে সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত রাখুন। অনলাইনে বসার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নিন।

৪. নিজের শখের কাজগুলো করুনঃ অবসর পেলে নিজেকে মোবাইলের দিকে ঠেলে না দিয়ে নিজের পছন্দের অন্য কাজ করুন। বই পড়ুন, গান শুনুন কিংবা নতুন কোন শখের কাজ করুন। আপনার সময় অপচয় হবেনা।

৫. পরিবারকে সময় দিনঃ অনলাইনে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে চ্যাট না করে তাদের নিয়ে ঘুরতে যান। আড্ডা দিন। কোন ক্লাব বা সংঘে যোগ দিন। সেখানে বন্ধু- বান্ধব তৈরি করুন। নিজের পরিবারকে সময় দিন। তাদের সাথে গল্প করুন। এতে আপনার সময় ও ভাল কাটবে সেই সাথে সামাজিক বন্ধন ও বাড়বে।

উপরোক্ত উপায়গুলো চেষ্টা করলে দেখা যাবে, ধীরে ধীরে এই আসক্তিগুলো অনেকাংশে কমে যাবে। আর আপনি  আপনার দৈনন্দিন অন্যান্য কাজেও মনোনিবেশ করতে পারবেন। মোবাইল ছেড়ে বই পড়ার কাজে কিছুটা সময় ব্যয় করতে পারবেন। এতে করে কোন অংশে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না; বরং লাভবান হবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।