সেরা ১০ স্মার্টওয়াচ ২০১৭
বর্তমান স্মার্টওয়াচগুলো সুন্দর ও আকর্ষণীয়। শুধু সময় দেখানো ছাড়াও এটি আরও অনেক কাজ করতে পারে যা হয়তো আপনার ধারনার বাইরে। বিভিন্ন এপ ধারণ করা, স্মার্টফোনের নোটিফিকেশনগুলো প্রদর্শন করা, হৃদস্পন্দন মাপাসহ আরও অনেক কাজ করতে সক্ষম এই স্মার্টওয়াচগুলো। তবে কোন স্মার্টওয়াচটি ভাল তা অবশ্যই যাচাই করে কিনতে হবে। এক্ষেত্রে নিচের বিবেচ্য বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
বিবেচ্য বিষয়ঃ
১. ডিভাইসের সাথে সামঞ্জস্যতাঃ
স্মার্ট ওয়াচ কেনার পূর্বে সবার আগে জানতে হবে তা আপনার স্মার্টফোনের সাথে সামঞ্জস্যতা বিধান করতে পারবে কিনা। যদিও বর্তমানে প্রায় সব স্মার্টওয়াচই অ্যানড্রয়েডগুলোর সাথে সুসামঞ্জস্য করে তৈরি করা হয়। যাতে স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হয়। যে স্মার্টওয়াচগুলো অ্যানড্রয়েড ভার্সনে কাজ করে তাদের প্রায় সবাই আইফোনেও কাজ করে। তবে ‘অ্যাপল’ কর্তৃক তৈরিকৃত স্মার্টওয়াচ কেবল আইফোনে ব্যবহার করা যায়। তবে আমাদের বাছাইকৃত এমন কোন স্মার্টওয়াচ নেই যা ব্ল্যাকবেরি কিংবা উইন্ডোজ মোবাইলে কাজ করে।
২. এপসঃ
সাধারণ ঘড়ি আর স্মার্টওয়াচের মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য হল স্মার্টওয়াচে অনেক ধরণের এপস ব্যবহৃত হয়। স্মার্টওয়াচগুলো উবার থেকে শুরু করে সাধারণ ক্যালকুলেটর পর্যন্ত সব ধরণের এপ এর সমাবেশ করতে পারে নিজের মধ্যে। তাই এপ ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় রেখে স্মার্ট ওয়াচ কেনা উচিত। তবে এপ এর বিষয়টি বিবেচনা করলে সবচেয়ে ভাল হয় ‘অ্যাপল’ প্রকাশিত স্মার্টওয়াচগুলো ব্যবহার করলে । কেননা সর্বাধুনিক ও সর্বাধিক সংখ্যক এপ অ্যাপল স্মার্টওয়াচেই পাওয়া যাবে।
৩. ফিটনেসঃ
স্মার্টওয়াচের আরেকটি দারুণ ব্যবহার হল ফিটনেস ট্র্যাকার হিসেবে এর ব্যবহার। বেশির ভাগ স্মার্টওয়াচই হাঁটাচলার পদক্ষেপ হিসাব করতে পারে। তবে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ‘অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩’ কিংবা ‘নিক+’ সংস্করণ ২টিতে বিল্ট-ইন জিপিএস এর ব্যবহার হয়েছে। যা আপনার দৌড়ানোর গতি, হৃদস্পন্দন প্রভৃতি মাপতে সক্ষম।
৪. স্মার্টফোনের সাথে যোগাযোগ দক্ষতাঃ
স্মার্টফোনের সাথে স্মার্টওয়াচের যোগাযোগ করার ক্ষমতা অবশ্যই থাকা উচিত। কারণ এতে করে স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করেই আপনি ফোন কল, বার্তা পাঠানো, গান স্ট্রিমিং, এপস ডাউনলোডসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক যেকোনো কাজ করতে পারবেন। আপনার স্মার্টফোন আপনার থেকে দূরে থাকলেও কোন সমস্যা নেই।
৫. ব্যাটারি লাইফঃ
আফসোসের বিষয় হল স্মার্টওয়াচে চার্জ বেশি সময় থাকেনা। ভাল মানের অ্যাপল এবং অ্যানড্রয়েড ভিত্তিক স্মার্টওয়াচগুলো একবার চার্জ করলে একদিন বা ২৪ ঘন্টা চার্জ থাকে। তাই প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে একে চার্জে বসিয়ে শুতে হবে আপনাকে।
৬. মূল্যঃ
স্মার্টওয়াচগুলোর দাম অনেক বেশি হতে পারে। তারমানে এইনা যে সুলভ মূল্যে আপনি ভাল স্মার্টওয়াচ পাবেন না। অ্যাপল এর সিরামিক নির্মিত স্মার্টওয়াচগুলো বেশ মূল্যবান যার বিনিময়ে কয়েকটা আইফোন কেনা যাবে। তাই আপনি যদি এই প্রথম কোন স্মার্টওয়াচ কিনতে যান তবে স্বল্পমূল্যের একটা কিনে যাচাই করে নেয়াই ভাল। কারণ আপনার স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা খারাপও হতে পারে।
৭. সৌন্দর্যঃ
আপনার স্মার্টওয়াচটি যেন দেখতে আকর্ষণীয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। মনে রাখবেন আপনি এটিকে সারা জীবনের জন্য কিনছেন না। যেহেতু এটি একটি ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট এটি নষ্ট হয়েও যেতে পারে। আবার সব সময় একই ডিজাইনের ঘড়ি পড়তে আপনার ভাল নাও লাগতে পারে। স্মার্টওয়াচের ডিজাইন নিয়মিত পরিবর্তিত হয়। তাই যেহেতু আপনি এটি হাতে পড়বেন তাই এর সৌন্দর্যের দিকেও খেয়াল রাখুন।
আমাদের বাছাইকৃত সেরা ৫টি স্মার্টওয়াচ হলঃ
- ১. অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১
- ২. অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩
- ৩. ফিটবিট আয়োনিক
- ৪. হুয়াওয়ে ওয়াচ ২
- ৫. স্যামসাং গিয়ার এস২ ক্লাসিক
১. অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১ অ্যাপল কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত স্মার্টওয়াচ। এটি অ্যালুমিনিয়াম নির্মিত। এতে আছে আপডেটেড ‘এস১পি’ ডুয়েল কোর প্রসেসর। এর মূল্য তুলনামূলক ভাবে কম। সহজে যেকোনো এপ নামিয়ে ব্যবহার করা যায়। ফোন কল করা ও বার্তা পাঠানো যায়। গান শোনা যায়। এতে জিপিএএস এবং গতিবিধি নির্নায়ক যন্ত্র আছে। হাঁটা-চলা, খেলাধুলা, ঘুমানোসহ এটি আপনার সকল গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ক্যালরি ব্যয়ের পরিমাপ নির্নয় করতে পারে। হৃদস্পন্দন মেপে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে পারে।
২. অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩
অ্যাপল কোম্পানি নির্মিত আরেকটি দারুণ স্মার্টওয়াচ হল অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৩। এটি পানি রোধী। এর মাধ্যমে ফোন কল করা ও বার্তা পাঠানো যায়। ‘অ্যাপল মিউজিক’ ব্যবহার করে প্রায় ৪০ মিলিয়ন গান স্ট্রিম করা যায়। ‘সিরি’ এর মাধ্যমে রিমাইন্ডার, ক্যালেন্ডার ইনভাইটেশন প্রভৃতি কাজ করতে পারে। আপনার আইফোন বাসায় ফেলে গেলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ সব নোটিফিকেশন দিবে আপনাকে। আপনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কতটুক হাটঁলেন বা উচুঁতে উঠলেন তা মাপতে পারে। তাই এটি হাইকিং এবং লং ড্রাইভে আপনার সঙ্গী হতে পারে সহজে।
৩. ফিটবিট আয়োনিক
এই স্মার্টওয়াচটি আপনাকে দিতে পারে আপনার চাওয়ার চেয়েও বেশি কিছু। এটি পানিরোধী এবং এর পর্দায় কোন দাগ পড়েনা। এর মধ্যে আছে ‘পারসোনাল কোচিং’ ব্যবস্থা। তাছাড়া এটি আপনার হৃদস্পন্দন মাপতে পারে। ঘুমের সময় পর্যবেক্ষণ করতে পারে। হৃদপিন্ডের বিশেষ যত্ন নেয়। যা আপনাকে শারীরিক সুস্থতা রক্ষায় সাহায্য করবে। এতে আছে বিল্ট–ইন জিপিএস সিস্টেম। গান স্ট্রিম করা এবং গান শোনা যায়। ‘প্যান্ডোরা স্ট্যাশন’ ব্যবহার করা যায়। ব্লুটুথ হ্যাডফোন ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া এতে জনপ্রিয় এপগুলো ব্যবহার ও বিভিন্ন বিল প্রদান করা যায়। এর ব্যাটারি কয়েকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
৪. হুয়াওয়ে ওয়াচ ২
হুয়াওয়ে কোম্পানির এই স্মার্ট ওয়াচটি পানি ও বালিরোধী। অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এটি আপনার গতিবিধি পরিমাপ করতে পারে। হৃদস্পন্দন মাপতে পারে। এতে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস, এফপিএস আছে। এর মাধ্যমে বার্তা ও ইমেইল পাঠানো যায়। একবার চার্জে প্রায় ২দিন ব্যবহার করা যায়।
৫. স্যামসাং গিয়ার এস২ ক্লাসিক
স্যামসাং কোম্পানির এই স্মার্টওয়াচটি স্টেইনলেস স্টিল নির্মিত। এই স্মার্টওয়াচটির সারফেস বেল্ট সহজেই পরিবর্তন করা যায়। সাধারণ স্মার্টফোনের সব ফিচারই এতে পাওয়া যায়। এটি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম, হৃদস্পন্দন, পানি এবং ক্যাফেইন গ্রহণের মাত্রা, পালস, পদক্ষেপ, শারীরিক কসরতের ধরণ প্রভৃতি নির্ণয় করতে পারে। তাছাড়া এটি আপনাকে ফিট থাকার নানা মোটিভেশনাল বার্তাও দেয়। এতে আছে ওয়ারলেস চার্জিং এর ব্যবস্থা এবং প্রায় ৩০০টি গানের প্লেলিস্ট তৈরি করার সুযোগ।
৬. আসুস জেনওয়াচ ৩
অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ স্মার্টওয়াচটিতে আপনি পাবেন ফিটনেস ট্র্যাকার। এতে ব্যবহৃত হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ওয়্যার ২.০ অপারেটিং সিস্টেম। এই ঘড়ির বেল্ট এবং সার্ফেস পরিবর্তন করা যায় নিজের ইচ্ছামতো। ঘড়িটি স্টেইনলেস স্টিল নির্মিত এবং এর বেল্টটি চামড়ার তৈরি। তাই পড়তে আরামদায়ক। এটি পানিরোধী। এর ব্যাটারি ১৫ মিনিটে প্রায় ৬০% চার্জ হয়।
৭. এলজি ওয়াচ স্টাইলঃ
এই স্মার্টওয়াচটি অনেক হালকা এবং রুচিসম্মত। এর ওজন মাত্র ১.৬ আউন্স। এতে আছে ১.২ ইঞ্চির প্লাস্টিক নির্মিত ওএলইডি ডিসপ্লে। এই ঘড়িটি স্টেইনলেস স্টিল নির্মিত। এতে ১.১ গিগাহার্জ কোয়ালকোম স্ন্যাপড্রাগন ওয়্যার ২০০০ প্রসেসর এবং ৫১২ মেগাবাইট র্যাম ব্যবহৃত হয়েছে। এতে ফিটনেস ট্র্যাকার ও নোটিফিকেশন ব্যবস্থা আছে। সকল প্রকার অ্যান্ড্রয়েড এপস ব্যবহার করা যায় এতে। একবার চার্জে ১০-১২ ঘন্টা ব্যবহার করা যায়।
৮. স্যামসাং গিয়ার এস৩
অন্যান্য স্মার্টওয়াচগুলোর তুলনায় এই স্মার্টওয়াচটি একেবারেই ভিন্ন। এর মাধ্যমে কল করা, বার্তা পাঠানো, টিভি দেখা, আবহাওয়ার খবর পাওয়া সহ আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। এই ঘড়ির সার্ফেস ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা যায়। এতে ‘কুইক লঞ্চার’ এর ব্যবহার আছে। অসংখ্য এপস এর সমাবেশ আছে এতে। হেলথ ট্র্যাকার, স্টেপ ট্র্যাকার, ক্যালরি কাউন্টারের মাধ্যমে এটি আপনার স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখবে।
৯. জেডটিই কোয়ার্টজ
কোয়ার্টজ হল ‘জেডটিই’ এর প্রথম স্মার্টওয়াচ। এতে ব্যবহার হয়েছে ১.১ গিগাহার্জ কোয়ালকোম স্ন্যাপড্রাগন ওয়্যার প্রসেসর এবং ৭৬৮ মেগাবাইট র্যাম। এর ডিসপ্লেটি ১.৪ ইঞ্চি বিশিষ্ট। এর বেল্টটি অত্যন্ত আরামদায়ক। এতে আছে গতিমাপক, ব্যারোমিটার, জিপিএস এবং গায়রোস্কোপ। এটি হৃদস্পন্দন মাপতে পারে। সাধারণ স্মার্টওয়াচগুলোর তুলনায় এটি বেশ মোটা এমন ভারী। এর ব্যাটারি একবার চার্জে ৩৬ ঘন্টা সার্ভিস দেয়।
১০. এলজি গিজমো গ্যাজেট
এই স্মার্টওয়াচটি মূলত স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য নির্মিত। এতে ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়েছে। এর পেছন দিকে মাইক্রো ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে এটি চার্জ করা যায়। এর মাধ্যমে ফোন কল করা যায় এবং বার্তা পাঠানো যায়। ছেলেমেয়েরা বিশেষ হাস্যকর ইমোজি ব্যবহার করতে বার্তায়। ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ এপ এর মাধ্যমে পিতা-মাতা সন্তানের অবস্থান জানতে পারেন। এমনকি সন্তান নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে চলে গেলে পিতা-মাতা সে ব্যাপারেও নোটিফিকেশন পেয়ে থাকেন।
বাজারে অনেক ধরণের অ্যানড্রয়েড এবং অ্যাপল এর স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়। এখানে দেওয়া মডেলগুলোই যে সর্বোত্তম তা কিন্তু নয়। বাজারে আরও অনেক নামিদামি স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়। তাই সবদিক যাচাই করে নিজের চাহিদা এবং রুচি মতো বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের স্মার্টওয়াচটি। তবে এমন একটি স্মার্টওয়াচ কিনুন যাতে অ্যানড্রয়েড ওয়্যার ২.০ ভার্সন ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ এটি সর্বাধুনিক ভার্সন যা প্রায় সব ধরণের অ্যানড্রয়েডে ব্যবহার করা যায়। আর অ্যাপল কোম্পানির স্মার্টওয়াচ কিনলে অবশ্যই মনে রাখবেন যে, তা কেবল আইফোনকেই সাপোর্ট করবে অ্যানড্রয়েডকে না।