চীনের ইন্টারনেট সেন্সরশীপ
চীনে ‘ইন্টারনেট সেন্সরশীপ নীতি’ অনুযায়ী প্রায় ৩,০০০ বৈদেশিক ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছে। ফলে চীনবাসী নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে পারেনা। বিভিন আইন ও প্রশাসনিক বিধিবিধানের কারণে চীনে ‘ইন্টারনেট সেন্সরশীপ’ চরম আকার ধারণ করেছে। চীন সরকার ৬০টিরও বেশি ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রতিবিধান তৈরি করেছে যা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সকল আইএসপি, কোম্পানি এবং সংস্থাগুলোর সকল প্রাদেশিক শাখায়ও মেনে চলা হয়। চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এত নিয়ন্ত্রনাধীন ব্যবস্থা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি এবং উন্নত বলে মনে করা হয়। চীন সরকার কেবল নীতিমালা তৈরী করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং এ ব্যাপারে নিয়মিত তদারকি ও করে থাকে যা ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ নামে সুপরিচিত। ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ হল ইন্টারনেট ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য চীনের রাষ্ট্রীয় আইন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের এক বিশেষ সমন্বিত প্রক্রিয়া। চীনে বর্তমানে সাইবার অপরাধীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে চীন এই প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েছে।
ওয়েবসাইট ব্লকের কারণঃ
১. দেশের সংবিধান, আইন এবং প্রশাসনিক নীতি যাতে কেউ ভাংতে না পারে।
২. সরকার ও সমাজের নিয়ম-কানুন যাতে সকলে সঠিকভাবে মেনে চলে।
৩. কেউ যাতে দেশ ভঙ্গের চেষ্টা করতে না পারে কিংবা জাতীয় ঐক্যে আঘাত হানতে না পারে।
৪. অন্যান্য দেশের সাথে ঘৃণা ও বৈষম্য সৃষ্টি করতে না পারে।
৫. সত্যকে বিকৃত করে কিংবা গুজব ছড়িয়ে সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি না করতে পারে।
৬. কুসংস্কার, যৌনতা, সহিংসতা, খুন, জুয়া প্রভৃতির প্রচার বন্ধ হয়।
৭. সন্ত্রাসবাদ কিংবা অপরাধমূলক কাজে কেউ উদ্দীপ্ত না হয় প্রভৃতি।
তবে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল যেমন-‘হংকং’ ও ‘ম্যাকাও’তে এই ওয়েবসাইটগুলো ব্লক হয়নি। কারণ ওইসব অঞ্চলে চীনের আইন-কানুনের বেশির ভাগ অংশই পালন করা হয়না। আমাদের তালিকার বেশির ভাগ ওয়েবসাইট অঞ্চলভেদে ব্যবহার করা যেতে পারে আবার নাও যেতে পারে।
এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশের একমাত্র উপায় হল ‘ভিপিএন সার্ভিস’ ব্যবহার করা। তবে এই কাজটি অবশ্যই আইনসম্মত নয় তাই নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নিয়ে ‘ভিপিএন’ ব্যবহার করতে হবে। এক্সপ্রেস ভিপিএন, ভাইপার ভিপিএন, পিওর ভিপিএন হল চীনে সর্বাধিক ব্যবহৃত ‘ভিপিএন সার্ভিস’।
তবে সম্প্রতি ‘ব্লুমবার্গ’ এর সেপ্টেম্বরের এক প্রকাশনায় বলা হয়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস হতে চীন সরকার ভিপিএন সার্ভিসও বন্ধ করে দিবে। তবে এ ব্যাপারে সত্যতা জানা যায়নি। যদিও চীন সরকার এ ব্যাপারে অসম্মতি প্রকাশ করেছে। তবে এটাও সত্য যে, এই বছর জানুয়ারি মাস থেকে চীন ‘ভিপিএন’ ব্যবহারের বিষয়েও তদারকি করছে। বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানিকে অনুমোদনবিহীন ভিপিএন সেবা প্রদানের বিরুদ্ধে সতর্কও করেছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী কয়েক মাসে বেশির ভাগ ভিপিএন সার্ভিসই বন্ধ হয়ে যাবে।
ব্লককৃত ওয়েবসাইটসমূহ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
১. ফেসবুক
২. টুইটার
৩. ইন্সটাগ্রাম
৪. পিন্টারেস্ট
৫. গুগল
৬. স্ন্যাপচ্যাট
৭. হোয়াটসএপ
৮. ওয়ার্ডপ্রেস.কম
৯. ব্লকস্পট
১০. ব্লগার
১১. ফ্লিকার
১২. সাউন্ডক্লাউড
১৩. লাইন
১৪. পিকাসা
সার্চ ইঞ্জিনঃ
১. গুগল
২. ডাক ডাক গো
৩. টেকনোরাটি
সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদ এজেন্সি ওয়েবসাইটঃ
১.দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
২. দ্য অয়াল স্ট্রিট জার্নাল
৩. দ্য ইকোনমিস্ট
৪. ব্লুমবার্গ
৫. গুগল নিউজ
ভিডিও ওয়েবসাইটঃ
১. নেটফ্লিক্স
২. ইউটিউব
৩. ভিমো
৪. হুলু
৫. ডেইলিমোশন
উইকিঃ
১. উইকিপিডিয়া
২. উইকিলিকস
ওয়ার্ক টুলসঃ
১. জিমেইল
২. গুগল ম্যাপ
৩. গুগল ড্রাইভ
৪. গুগল ডকস
৫. গুগল ক্যালেন্ডার
৬. ড্রপবক্স
৭. শাটারস্টক
৮. আইস্টক ফটো
এপসঃ
১. গুগল প্লে
২. উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটগুলোর সকল এপ ভার্সন
তাছাড়া সকল প্রকার পর্ণোগ্রাফি, জুয়া, অসামাজিক ও অপরাধমূলক ওয়েবসাইট বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রচলিত ওয়েবসাইটসমূহ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
১. লিংকড ইন
২. রেডিট
৩. উইচ্যাট
৪. উইবো
৫. কিউকিউ
সার্চ ইঞ্জিনঃ
১. বাইডু
২. থ্রিসিক্সটি
৩. শৌগো
৪. বিং
সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদ এজেন্সি ওয়েবসাইটঃ
১. সিএনএন
২. বিবিসি
ভিডিও ওয়েবসাইটঃ
১. ইউকু টুডো
২. টেন্সেন্ট ভিডিও
৩. শোহু ভিডিও
উইকিঃ
১. কিওরা
২. ঝিহু
৩. বাইডূ বাইক
৪. হুডং বাইক
ওয়ার্ক টুলসঃ
১. গুগল ট্রান্সলেট
২. এভারনোট
৩. স্কাইপ
৪. ট্রেলো