মেমরি কার্ড কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়
অনেকের কাছে মেমরি কার্ড কেনা হয়তো তেমন কোন চিন্তারই বিষয় নয়। হোক সেটা কোন ফোন, ক্যামেরা কিংবা অন্য কোন গ্যাজেটের জন্য। কিন্তু এইসব হেয়ালিপনার কারণে অনেকেই বেশি দামে মেমরি কার্ড কিনে ফেলেন। আবার অনেক মেমরি কার্ড ভাল পারফরম্যান্সও দেয়না। কখনো কখনো ডিভাইসেই সাপোর্ট করেনা। আর নকল মেমরি কার্ডের ঝামেলা তো আছেই।
তাই মেমরি কার্ড কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা উচিত সেগুলো হলঃ
১. মেমরি কার্ডের আকৃতি
২. ডিভাইস উপোযোগিতা
৩. ধারণ ক্ষমতা
৪. মেমরি কার্ডের গতি
৫. নকল মেমরি কার্ডে সতর্কতা
৬. ব্র্যান্ডের প্রতি গুরুত্বারোপ
১. মেমরি কার্ডের আকৃতিঃ
মেমরি কার্ড মূলত ৩ ধরণের আকৃতি বিশিষ্ট হয়।
(ক) ফুল-সাইজঃ বড় আকৃতির ফুল-সাইজ এসডি মেমরি কার্ডগুলো সাধারণত কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ডিজিটাল ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়।
(খ) মিনিঃ মিনি এসডি মেমরি কার্ডগুলো স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ডিজিটাল ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়।
(গ) মাইক্রোঃ মাইক্রো এসডি মেমরি কার্ডগুলো অনেক পাতলা এবং ছোট। এগুলো সাধারণত স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়া মেমরি কার্ডের সাথে অ্যাডাপ্টার থাকে। যার মাধ্যমে যেকোনো ধরণের ডিভাইসে যেকোনো আকৃতির মেমরি কার্ড ব্যবহার করা যায়।
২. ডিভাইস উপোযোগিতাঃ
বাজারে মূলত ৩ ধরণের মেমরি কার্ড পাওয়া যায়। ডিভাইস অনুযায়ী তাদের ব্যবহার ও কাজ ভিন্ন। সবগুলো মেমরি কার্ডই ‘এসডি’ শ্রেনীভুক্ত। এগুলো হলঃ
(ক) এসডি (SD)ঃ ‘এসডি’ বা ‘সিকিওর্ড ডিজিটাল’ মেমরি কার্ডে সর্বোচ্চ ২ জিবি পর্যন্ত জায়গা পাওয়া যায়। যেকোনো ডিভাইসের ‘এসডি’ স্লটে ব্যবহার করা যায়। মূলত পুরনো মডেলের ফোনগুলোতে ‘এসডি’ মেমরি কার্ড ব্যবহার করা হয়।
(খ) এসডিএইচসি (SDHC)ঃ ‘এসডিএইচসি’ বা ‘সিকিওর্ড ডিজিটাল হাই ক্যাপাসিটি’ মেমরি কার্ডে সর্বনিম্ন ২ জিবি থেকে সর্বোচ্চ ৩২ জিবি পর্যন্ত জায়গা পাওয়া যায়। এসডি মেমরি কার্ডের তুলনায় এর স্পিড অনেক বেশি। ‘এসডিএইচসি’ এবং ‘এসডিএক্সসি’ স্লট বিশিষ্ট যেকোনো ডিভাইসের ব্যবহার করা যায়।
(গ) এসডিএক্সসি (SDXC)ঃ ‘এসডিএক্সসি’ বা ‘সিকিওর্ড ডিজিটাল এক্সটেন্ডেড ক্যাপাসিটি’ মেমরি কার্ডে সর্বনিম্ন ৩২ জিবি থেকে সর্বোচ্চ ২ ট্যারাবাইট পর্যন্ত জায়গা পাওয়া যায়। এর ডাটা ট্রান্সফার স্পিড সবচেয়ে বেশি। ‘এসডি’, ‘এসডিএইচসি’ এবং ‘এসডিএক্সসি’ স্লট বিশিষ্ট যেকোনো ডিভাইসের ব্যবহার করা যায়।
৩. ডিভাইসের ধারণ ক্ষমতাঃ
(ক) প্রতিটি ডিভাইসেই মেমরি কার্ড ব্যবহার করার একটি সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা থাকে। যেমন-বেশির ভাগ স্মার্টফোনেই ৩২ জিবি এর বেশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মেমরি কার্ড ব্যবহার করা যায়না। এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত।
(খ) আপনি কি পরিমাণ ও কোন কোয়ালিটির ডাটা সংরক্ষণ করবেন তার উপর মেমরি কার্ডের ধরণ নির্ভর করে। যদি আপনি এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও সংরক্ষণ করতে চান তাহলে বেশি ধারণ ক্ষমতা ও উচ্চ গতি সম্পন্ন মেমরি কার্ড ব্যবহার করা উচিত।
(গ) আর যদি সাধারণ পারিবারিক ছবি ও ফাইল সংরক্ষণ করতে চান তাহলে ১৬ জিবির আদর্শ একটি মেমরি কার্ড হলেই চলে।
(ঘ) আরেকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে, সব মেমরি কার্ড সব ধরণের ডিভাইসে কাজ করেনা। তাই কেনার পূর্বে ম্যানুয়্যাল দেখে কিনুন। যেমন-এসডি কার্ড এসডিএইচসি স্লটে কাজ করলেও এসডিএইচসি কিংবা এসডিএক্সসি কার্ড এসডি স্লটে কাজ করবেনা। তাই এই বিষয় গুলো ভালভাবে জেনে কেনা ভাল।
৪. মেমরি কার্ডের গতিঃ
বিভিন্ন মেমরি কার্ডে ডাটা ট্রান্সফার বিভিন্ন গতিতে হয়। তাছাড়া মেমরি কার্ডে সংরক্ষিত ভিডিও আপনি ভাল গতিতে দেখতে পাবেন কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। তবে মেমরি কার্ডের গতি শুধুমাত্র এর স্পিড ক্লাসের উপরি নির্ভর করেনা। সেই সাথে আপনার ডিভাইসটি কেমন তার উপরও নির্ভর করে। আর আপনি যদি ফোরকে কোয়ালিটির ভিডিও শ্যুট করতে কিংবা চালাতে চান তাহলে অবশ্যই উচ্চ গতি সম্পন্ন মেমরি কার্ড ব্যবহার করতে হবে। তাই এই দিকগুলো বিবেচনায় আনতে হয়।
মেমরি কার্ডের গতিকে স্পিড ক্লাসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন-‘সি স্পিড ক্লাস’ এবং ‘ইউএইচএস স্পিড ক্লাস’।
(ক) সি স্পিড ক্লাসঃ সি স্পিড ক্লাসে ৪ ধরণের গতি পাওয়া যায়। যা ৪টি ভিন্ন প্রতিকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
১. ক্লাস ২ঃ ২ এমবিপিএস
২. ক্লাস ৪ঃ ৪ এমবিপিএস
৩. ক্লাস ৬ঃ ৬ এমবিপিএস
৪. ক্লাস ১০ঃ ১০ এমবিপিএস
একটি বড় ‘C’ এর ভিতর ২,৪,৬,১০ লিখে এর গতিবেগ প্রকাশ করা হয়। ‘C’ এর ভিতর ২ লেখা মানে হল এটি ২ মেগাবাইট/সেকেন্ড হারে কাজ করতে পারে। তেমনি ৪ এর জন্য ৪ মেগাবাইট/সেকেন্ড, ৬ এর জন্য ৬ মেগাবাইট/সেকেন্ড এবং ১০ এর জন্য ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড বুঝায়।
(খ) ইউএইচএস স্পিড ক্লাসঃ ইউএইচএস স্পিড ক্লাস অনেকটা সি স্পিড ক্লাস এর মতই। একে ২টি ভিন্ন প্রতিকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
১. ক্লাস ১ঃ ১০ এমবিপিএস
২. ক্লাস ৩ঃ ৩০ এমবিপিএস
একটি বড় ‘U’ এর ভিতর ১,৩ লিখে এর গতিবেগ প্রকাশ করা হয়। ইউএইচএস স্পিড ক্লাস এবং সি স্পিড ক্লাস এর মধ্যে তফাৎ হল এখানে প্রতিটি সংখ্যার ১০ গুন হারে ডাটা ট্রান্সফার হবে। যেমন-‘U’ এর মাঝে ১ লেখা মানে হল হল এর গতিবেগ ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড এবং ৩ এর জন্য ৩০ মেগাবাইট/সেকেন্ড।
৫. নকল মেমরি কার্ডে সতর্কতাঃ
যেহেতু মেমরি কার্ড কেনার সময় অনেকেই সতর্ক থাকেন না; তাই অনেক সময় তাদেরকে প্রতারণার শিকার হতে হয়। তাই মেমরি কার্ড কেনার সময় কোন বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে কিনুন। যদি অনলাইন থেকে কিনতে যান তাহলে আগে ভালোভাবে রিভিউগুলো পড়ে নিন। রেটিং কম থাকলে তা কিনতে যাবেন না।
আর যদি আপনি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হন তাহলে ‘গুগল প্লে স্টোর’ থেকে ‘এসডি ইনসাইট’ এপটি নামিয়ে পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
অথবা কেনার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রেখে বুঝতে পারেন মেমরি কার্ডটি নকল কিনা। যেমন-
(ক) মেমরি কার্ড ও অ্যাডাপ্টারটির গায়ে ব্র্যান্ডের নাম ও অন্যান্য তথ্য সঠিক ভাবে ছাপা থাকেনা। হালকা ঝাপসা এবং কিছু অংশ ঘোলাটে মনে হয়। অর্থাৎ বাজে প্রিন্টিং কোয়ালিটি।
(খ) প্যাকেটের গায়ে কোন সিরিয়াল নম্বর থাকেনা।
(গ) মূল্য মেমরি কার্ডের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে ১০-১৫% কম থাকে।
(ঘ) মেমরি কার্ডের গায়ে ধারণ ক্ষমতা যত লেখা বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম হয়।
৬. ব্র্যান্ডের প্রতি গুরুত্বারোপঃ
ব্র্যান্ডের পণ্য স্বভাবতই ভালো ও উন্নত মানের হয়। তাই জেনে-শুনে ভাল ব্র্যান্ডের মেমরি কার্ড কেনা উচিত। অনেক মেমরি কার্ড দেখা যায় কিছুদিন ব্যবহারের পর আর কাজ করেনা। কিংবা অনেক স্লো হয়ে যায়। তাই একটু বেশি দাম দিয়ে ভাল ব্র্যান্ডের মেমরি কার্ড কেনাই ভাল। আর যদি মেমরি কার্ডে ওয়ারেন্টি এবং রিকভারি সফটওয়্যার যোগ করা থাকে তাহলে আরও ভাল হয়। ‘লেক্সার’ এবং ‘সেনডিস্ক’ কোম্পানি এই ধরণের সুবিধা প্রদান করে থাকে।