ইলেকট্রনিক্স

বিদ্যুৎ গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলো জ্বলবে

 


ইলেকট্রিক্যাল ও  ইলেক্ট্রনিক সার্কিটের জগতে এক বিস্ময়কর নাম হল জুল থিফ সার্কিট যা বাংলা অর্থ দাঁড়ায় শক্তি চোর। আসলেই এটা অনেকটা চোরের মতই কাজ করে।

কেমন আছেন বন্ধুরা?? টেকমাস্টার ব্লগের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা। এটা টেকমাস্টারে আমার প্রথম ব্লগ। এখানে আমি চেস্টা করবো খুব সহজ ভাষায় কিছু প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করতে।

তাহলে চলুন একটা সার্কিট বানিয়ে ফেলি

আপনাদেরকে সবার প্রথমে অন্য ১টা জিনিসের ব্যাপারে ধারনা দেয়া দরকার। আপনারা অনেকেই হয়ত এল ই ডি বাল্ব এর নাম শুনেছেন। LED means “Light emitting Diode”.

ডায়োড হল সিলিকন এর তৈরি এমন এক জিনিস যার ২ মাথা আছে, দেখতে অনেকটা রোধক এর মত কিন্তু এটা শুধুমাত্র একদিকে তড়িৎ প্রবাহে অনুমতি দেয়। অর্থাৎ অনেকটা পানির লাইনের ভাল্ভ এর মত কাজ করে।

বিদ্যুৎ গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলো জ্বলবে 2

আর এল ই ডি হল এক ধরনের ডায়োড যার ভেতর দিয়ে নির্দিস্ট দিকে তড়িৎ প্রবাহ করলে এতে আলো জ্বলে। নরমাল ফিলামেন্ট বাল্বের মত এতে ব্যাটারি লাগালেই আলো জ্বলে না। ১ টা নির্দিস্ট মানের ভোল্টেজ বা তার বেশি ভোল্টেজ পজিটিভ দিকে দিলে তবেই আলো জ্বলে। একে বলে বায়াসিং ভোল্টেজ।

উদাহরনঃ এলইডির রঙ ও বায়াসিং ভোল্টেজ এর মান
লাল – ১.৭ ভোল্ট ।। সবুজ – ১.৮ ভোল্ট ।। সাদা – ৩ ভোল্ট ।। নীল – ৫ ভোল্ট
ছবিতে ২ যায়গায় দেখানো হয়েছে কিভাবে কোন এলইডির + – কোনটা তা বের করতে হয়।
তো আমরা আজকে একটা জুল থিফ সার্কিট এর সাহায্যে একটা পরিত্যক্ত ১.৫ ভোল্ট ব্যাটারি দিয়ে ৫ ভোল্ট এর ১ টা নীল এলইডি জালাব।
দেখুন ছবির সার্কিট কে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। লাল বাক্স চিহ্নিত অংশটুকু হল জুল থিফ। আর বাকিটুকু হল আপনাদের জন্য বোনাস আকর্ষন, ওটুকু হল লাইট ডিটেক্টর সার্কিট।;);)

 

ওটার কাজ হল এরকমঃ

আপনি পুরা সার্কিট টা বানানোর পরও কিন্তু লাইট জলবে না । যখন আপনি সার্কিট কে অন্ধকারে নিয়ে যাবেন শুধুমাত্র তখন ই আলো জলবে। আপনার সুইচ অন অফ করার ঝামেলা নাই। রাতে কারেন্ট চলে গেলে আর মোমবাতি খুজতে হবেনা। একা একাই আলো জ্বলে উঠবে। আবার কারেন্ট চলে এলে মানে ঘরের বাতি জ্বলে উঠলে এল ই ডি একা একাই নিভে যাবে।

আপনি লাইট ডিটেক্টর না বানালে চিত্রানুযাই জুল থিফের সাথে যেখানে লাল রঙ্গের ব্যাটারির ছবি দেয়া আছে সেখানে ব্যাটারি লাগাতে পারেন। তাহলেও শুধু জুল থিফ কাজ করবে। তবে তখন সুইচ ও লাগবে। অটোমেটিক কাজ করবে না।
তাহলে সার্কিট বানাতে চিত্রে উল্লেখিত ২ টা ট্রানজিস্টর যোগাড় করুন। এটা একটা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যার ৩ টা পা আছে। এদের নাম এমিটার, বেস, কালেক্টর। খেয়াল করুন ছবিতে দেখানো হয়েছে কোন ট্রানজিস্টর এর কোন পা কোন পিন নির্দেশ করে এবং সার্কিট সিম্বল অনুযায়ি এদের কোথায় কিভাবে লাগাতে হবে।

২ টা রোধক লাগবে ১ কিলো আর ৪৭ কিলো ওহম এর। কালার কোড ও ছবিতে দেখানো হয়েছে।
“এল ডি আর” নামের যে বস্তু টা দেখতে পাচ্ছেন সেটা হল লাইট ডিটেক্টর এর চোখ বা সেন্সর। এটাই আসলে লাইট এর তীব্রতা সেন্স করে সার্কিট কে নিয়ন্ত্রন করে। আপনি এর উপর আলো ফেললে দেখবেন আপনার সার্কিট এর লাইট নিভে যাবে আর আপনি এল ডি আর কে অন্ধকারে রাখলে সার্কিট এর লাইট জ্বলে উঠবে।

জুল থিফের জন্য আপনার শেষ যা লাগবে তা হল একটা হাতে বানানো ট্রান্সফরমার। ২ টা তারের কয়েল কাছাকাছি একই অক্ষ বরাবর রাখলেই ট্রান্সফরমার হয়ে যায়। আর কয়েলের ভেতর কোন লোহার পদার্থ (বিশেষ করে ফেরাইট পদার্থ ) থাকলে ট্রান্সফরমার অনেক ভাল মানের হয়। আমি পুরানো ভাঙ্গা এনার্জি বাল্বের সার্কিট থেকে একটা গোলাকার রিং এর মত ফেরাইট কোর (ছবিতে দেখুন যার গায়ে তার পেচান আছে) পেয়েছিলাম। আমার টা গোলাকার কোর ছিল বলে আমার ট্রান্সফরমার টার নাম হচ্ছে টরয়েড। আপনারা যেরকম পান তাই দিয়েই ট্রাই মারেন।

দেখেন ছবিতে আমি ২ টা কয়েলের নাম ও তাদের তারের মাথা ৪ টার নাম আলাদা আলাদা ভাবে বলে দিয়েছি। ছবিতে তারের প্যাঁচ গুলা ভালভাবে খেয়াল করুন। আর ঠিক সেভাবেই লাগান। ভুল হলে কিন্তু জুল থিফ কাজ করবে না।
খেয়াল করুন ট্রান্সফরমার এর A কয়েল থেকে B কয়েলের প্যাঁচ সংখ্যা বেশি হতে হবে। মোটামুটি ১৫ অথবা ২০ গুন হলেই হবে। “এ” তে ৪ পাক আর “বি” তে ৬০ পাক দিয়ে দিন। এতেই কাজ হবে।

এই লেখাটি পূর্বে blog.voltagelab .com এ প্রকাশিত হয়েছিল।

ধন্যবাদ বন্ধু, কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।