নিরাপত্তা

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা

ঘরে-বাইরে, বন্ধুর বাসায়, কফি শপে কিংবা শপিং মলে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করা আমাদের এখন একটি নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ঘরে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করা নিরাপদ হলেও; ঘরের বাইরে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করা আদৌ নিরাপদ কিনা তা আমরা কেউ ভেবেই দেখিনা। ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, অনেক ব্যক্তিগত তথ্য ডিভাউস থেকে চুরি হয়ে যায়, ডিভাইস হ্যাক হয়ে যায়, এমনকি কোন ম্যালিশাস ভাইরাসে ডিভাইসটি আক্রান্ত হয়ে পরে। আপনি জানতেও পারবেন না আপনার ব্যবহৃত শখের ফ্রি ওয়াইফাইতে ওৎ পেতে আছে কোন এক হ্যাকার। যে কিনা আপনার অজান্তে আপনার ব্যক্তিগত ডাটায় অবাধ বিচরণ করছে। তাই যত্র-তত্র ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়।

আসুন জেনে নিই ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিতঃ

১. অনলাইন লেনদেন বন্ধ করা

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেন করতে যাবেন না। সেই সাথে এমন কোন একাউন্টে প্রবেশ করবেন না যেখানে আপনার ব্যাংক একাউন্টের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা আছে। প্রয়োজনে মোবাইল ডাটা ব্যবহার করুন। এতে অন্তত আপনার ব্যাংক একাউন্টে কোন হ্যাকার অনুপ্রবেশ করতে পারবেনা।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 2

২.অযথা কানেকশন চালু করে না রাখা

যখন ওয়াইফাই ব্যবহার করার প্রয়োজন হবেনা, তখন ওয়াইফাই সংযোগ বন্ধ করে রাখুন। এতে করে ৩ ধরণের সমস্যা থেকে বেঁচে যাবেন।

(ক) অযথা ব্যাটারি অপচয় হবেনা।

(খ) কোন অনিরাপদ নেটওয়ার্কে অটোকানেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

(গ) অবাঞ্ছিত নোটিফিকেশন এবং বিজ্ঞাপনের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।

মোবাইল ব্রাউজারে এক্সটেনশন অপশনে যেয়ে “DoNotTrackMe” অপশন চালু করে রাখুন। এতে করে আপনার লোকেশন কেউ ট্র্যাক করতে পারবেনা।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 3

৩. ভিপিএন ব্যবহার

ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নিরাপদে অনলাইন ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারেও কোন সমস্যা হয়না। কারণ ভিপিএন ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কের আইপি অ্যাড্রেস প্রদর্শন করে, আপনার ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের নয়। তবে ভিপিএন ব্যবহারে মাসিক বিল প্রদান করতে হয়। যদিও এই মাসিক বিলের পরিমাণ খুবই কম। আর এটি ব্যবহারে ইন্টারনেটের গতিও কিছুটা কমে যায়। তবুও  নিরাপত্তার খাতিরে এতটুকু ত্যাগ স্বীকার করাই যায়। তবে অনেক ভিপিএন আছে যা ফ্রি সার্ভিস প্রদান করে। প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করুন।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 4

৪. “Remember me” অপশন ব্যবহার না করা

অনেক ডিভাইসই পূর্বে ব্যবহৃত ওয়াইফাই হটস্পট নেটওয়ার্ককে মনে রাখে। পরবর্তীতে ওই নেটওয়ার্কে অটো-কানেক্টেড হয়ে যায়। অনেক সময় হ্যাকাররা ওই একই নামের ওয়াইফাই আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইস হ্যাক করার রাস্তা তৈরী করে ফেলে। তাই অজানা ফ্রি ওয়াইফাই অটো-কানেক্টেড করে না রাখাটাই ভালো।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 5

৫. ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের নাম পর্যবেক্ষণ

হ্যাকাররা যেই নকল ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাতে প্রবেশ করতে বেশির ভাগ সময়ই কোন পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হয়না। আসল ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে সবসময়ই পাসওয়ার্ড এর দরকার হয়। হ্যাকারদের তৈরীকৃত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এর নামের বানানেও অনেক ভুল থাকে। যা দেখেই সনাক্ত করা যায়। তাই কোন রেস্টুরেন্ট বা কফি শপে গেলে বিক্রেতাকে নামের বানান জিজ্ঞেস করে ভালোভাবে যাচাই করে নিন।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 6

৬. অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার

ফ্রি ওয়াইফাইগুলোর মাধ্যমে সহজেই ম্যালিশাস ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই যেকোন আপডেটেড অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এখন অনেক নতুন নতুন ভাল অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার পাওয়া যায় মোবাইলের জন্য। এই সফটওয়্যারগুলো অনিরাপদ ওয়াইফাই কানেকশনের ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক করবে।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 7

৭. পাসওয়ার্ড ব্যবহার

যেই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এ কানেক্ট হতে কোন পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়না তা মূলত অনিরাপদ। কারণ নকল ও অনিরাপদ নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে কোন ঝামেলা হয়না। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। তাই যেসকল ওয়াইফাই হটস্পটে কানেক্ট হতে পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন চাবে ওই সকল হটস্পট ব্যবহার করুন।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 8

৮. পাসওয়ার্ড এনক্রিপ্ট করে রাখা

আপনি ডিভাইসে কখনো কোন ফাইলে আপনার পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না। তা যেকোন কিছুর পাসওয়ার্ডই হোক না কেন। নতুবা হ্যাকার সহজে আপনার যেকোন একাউন্টে সহজে প্রবেশ করতে পারবে। কোন ‘পাসওয়ার্ড ম্যানেজার’ ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড এনক্রিপ্ট করে রাখুন।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 9

৯. ওয়েবসাইট ইউআরএল পর্যবেক্ষণ

নকল নেটওয়ার্কগুলো আপনাকে নিয়ে যাবে কোন চেনা-জানা ওয়েবসাইটে। আপনি বুঝতেও পারবেন না এটি আসলে আপনার ব্যক্তিগত ডাটা চুরি করছে। তাই ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় ভালোভাবে প্রতিটি ওয়েবসাইটের ইউআরএল পর্যবেক্ষণ করুন। যদি কোন তফাৎ খুঁজে পান তাহলে শীঘ্রই ওই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা বন্ধ করুন। যেমন-  Google.com এবং ɢoogle.com মোটেও এক জিনিস নয়। এই ব্যাপারে নিরাপত্তা পেতে ভালো ব্রাউজার ব্যবহার করুন। কারণ একটি ভালো ব্রাউজার আপনাকে অনিরাপদ ওয়েবসাইটের ব্যাপারে সতর্ক করে দিবে।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 10

১০. নিরাপদ কানেকশন ব্যবহার

একটি নিরাপদ ওয়েবসাইটের ইউআরএল হয় এমন- https:// ।  যেখানে সাধারণ ওয়েবসাইটের ইউআরএল হয়- http:// । কিছু কিছু ওয়েবসাইট যেমন-গুগল সব সময় নিরাপদ কানেকশন ব্যবহার করে।

আপনি চাইলে “HTTPS Everywhere” এক্সটেনশনটি ইন্সটল করে আপনার ব্রাউজারকে সুরক্ষিত করতে পারেন। এটি প্রায় সব ব্রাউজারেই ব্যবহার করে যায়।

ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারে ১০ সতর্কতা 11

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।