বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র: এগারোর আলোচিত ১১
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো আরোও একটি বছর। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০১২ সাল। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১১ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের অন্যতম একটি ঘটনাবহুল বছর। এসময়ে পরিবর্তন এসেছে বেশকিছু, অনেক কিছু পেয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল তথ্যসেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন প্রচুর প্রকল্প চালু করা হয়েছে, তেমনি বেসরকারি উদ্যোগেও বেশকিছু সাফল্য এসেছে।
আবার বাংলাদেশের জন্য বর্তমান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ক্ষেত্রটিতে সংশ্লিষ্ঠদের অবহেলা বা অপরিণামদর্শীতার কারণে সাফল্যের পাশাপাশি রয়েছে ব্যাপক ব্যর্থতাও। এ লেখাটিতে কেবল আলোচিত (সাফল্য!) বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা। (তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ ১১ ব্যার্থতা নিয়ে না হয় নতুন একটি লেখাই তৈরি করা ফেলা যাবে!)
গার্টনারের শীর্ষ ত্রিশে!
বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার প্রতিবছর বিভিন্ন উপর গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শীর্ষ আউটসোর্সিং দেশগুলোর তালিকা তৈরি এর অন্যতম। তালিকাটিতে প্রতিষ্ঠানটি দেখায় কোনদেশগুলো আউটসোর্সিং করার জন্য উপযুক্ত, কেমন উপযুক্ত।
বছরের শুরুতে এবার গার্টনারের এ তালিকা বাংলাদেশের জন্য বেশ সুখবর বয়ে এনেছিল। প্রতিষ্ঠানটির আউটসোর্সিং প্রতিবেদনে এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে। বিশ্বে এটি স্থান পেয়েছে শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায়। আর এশিয়ার মধ্যে আমরা পেয়েছি নবম স্থান। গার্টনারের তথ্য অনুযায়ী, মূল প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে আউটসোর্সিং গন্তব্য হিসাবে বিবেচনার জন্য মোট ১০টি বিষয়কে বিবেচনা করা হয়েছিল। এগুলো হলো ভাষা, সরকারি সহায়তা, কর্মীর প্রাপ্যতা, অবকাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা, খরচ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক ক্যাপ্যটাবিলিটি, বৈশ্বিক ও আইনি ম্যাচুরিটি, ডেটা ও মেধাসম্পদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা। নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গার্টনার জানিয়েছিলো, বাংলাদেশ এখনো জনপ্রিয় আউটসোর্সিং গন্তব্য হওয়ার মতো ম্যাচুরিটি অর্জন করেনি। এখানে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করার জন্য খরচ খুবই কম তবে সামগ্রিক তথ্যপ্রযুক্তি ইকোসিস্টেম এখন অনুন্নত। তবে গার্টনারের প্রতিবেদনে যেসব বিষয়গুলোকে সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো সমাধানে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেসিস বেশ কয়েকটি সেমিনার করে এ বিষয়ে।
ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট
দরপত্র জমা দেয়ার পদ্ধতিকে সহজ করতে সরকার এবছর প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ই-জিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে ঠিকাদাররা বর্তমানে সরকারি দরপত্রে অংশ নিতে পারছেন। জানুয়ারির প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইপ্রকিউরমেন্ট সাইটটি উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে এলজিআরডি, সড়ক ও জনপথ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জন্য এ ইলেকট্রনিক দরপত্র ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
জাতীয় ই-তথ্যকোষ
ই-তথ্যকোষ মূলত সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সবধরণের তথ্যের ভান্ডার। এ তথ্যভান্ডারে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকার, নাগরিক সেবা, অকৃষি উদ্যোগ, পর্যটন, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্প ও বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান বিভাগে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে ৪ হাজারেরও বেশি নিবন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষের যেসব তথ্যগুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সেগুলো এ তথ্যকোষে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন বা এটুআই প্রকল্প ই-তথ্যকোষ বাস্তবায়ন করে। যেকোন ব্যাক্তি একেবারে বিনামূল্যেই এ তথ্যকোষ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সংগ্রহ করতে পারেন। তথ্যগুলোকে ওয়েব (এইচটিএমএল), ডকুমেন্টস (পিডিএফ), চিত্র, অডিও, ভিডিও এবং অ্যনিমেশন আকারে দেয়া হয়েছে। ব্যবহারকারীরা যেকোন ফরম্যাটের কনটেন্ট খুঁজে নিতে পারেন ওয়েবের মাধ্যমে। ব্যবহারকারীরা যে বিষয়ক তথ্য খুজতে চান সেটি লিখে সার্চ করলেই হলো। ২০১০ সালে এটির কাজ শুরু হলেও চালু করা হয় এবছরের ফেব্রুয়ারিতে। সম্প্রতি ই-তথ্যকোষ নিয়ে কথা হয়েছিল এটুআইয়ের কমিউনিকেশন অফিসার হাসান বেনাউল কাজল ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি জানালেন, বর্তমানে জাতীয় ই-তথ্যকোষে ৮ টি বিষয়ে ৯০ হাজার পৃষ্ঠারও বেশি তথ্য রয়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের নিকট ডিজিটাল কনটেন্ট পৌছে দেয়ার উদ্দেশ্যে চালু এ প্রকল্পটি অনেকের কাছে সমাদৃত হলেও এর দৈনন্দিন উন্নয়নে তেমন গতি না থাকায় বেশ সমালোচনায়ও পড়েছে। (এটি চালুর পর কালের কন্ঠে প্রকাশিত আমার একটি লেখা)
গুগলে বাংলা অনুবাদ
এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করার জন্য অনলাইনে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হলো গুগল ট্রান্সলেটর। ২০০৬ সালে এটি চালু হয়। তবে এতদিন অন্য ভাষা থেকে বাংলা ভাষা বা বাংলা ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করার কোন সুযোগ ছিলোনা। গত জুনে প্রথমবারের মতো এ সুবিধাটি চালু করা হয়। আগে ৫৮ টি ভাষায় এ সুবিধাটি ছিল। সর্বশেষ হিসাবে ৬৩ ভাষায় এ অনুবাদ সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলায় সুবিধাটি চালু হওয়ার পর ব্লগ আর সামাজিক যোগযোগ সাইটগুলোর কল্যানে মুহুর্তেই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। শেয়ার হতে থাকে সেবাটি বাংলার জন্য গুগল ইঞ্জিনিয়ার ভেনুগোপালের ব্লগ লিংক। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। (কালের কন্ঠে আমার লেখা, আসুন সবাই মিলে গড়ি বাংলা গুগল)
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র
দেশের সকল (৪৫০১টি) ইউনিয়ন পরিষদে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর স্থাপন করা হয় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র বা ইউআইএসসি। গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষকে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক তথ্য ও সেবা প্রদান করার উদ্দেশ্যে এসব কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। গতবছর এ তথ্যসেবাগুলো স্থাপন এবং উদ্বোধন করা হলেও নানা কারণে সরকারি এ সেবাটি ছিলো আলোচনায়। ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু এ সেবাকেন্দ্রগুলোতে সারাবছর বিভিন্ন নিত্যনতুন সেবা যুক্ত করায় এটি বেশ আলোচনায় ছিলো। তবে এটুআইয়ের এ প্রকল্পে নেতিবাচক অনেক আলোচনাও ছিরো বছর জুড়ে। অদক্ষ লোক নিয়োগ, ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং কাংখিত সেবা না পাওয়ার প্রচুর অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যে। আমি নিজেই রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র ঘুরেছি, সবগুলোই দেখেছি তালাবদ্ধ।
সব বই অনলাইনে
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বই যাতে অনলাইনে পাওয়া যায় সেল্েয ই-বুক প্রকল্প নিয়ে কয়েকবছর আগেই চিন্তাভাবনা শুরু করে এটুআই। এবছর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বইগুলোর ই-বুক সংস্করণ উদ্বোধন করেন। এপ্রিলে উদ্বোধন করা করা এ ই-বুক প্রকল্প বেশ সাড়া ফেলতে সম হয় সারাদেশে। যারা বছরের শুরুতেই শিা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বই পান না তারা অনলাইন থেকে বই নামিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। মুদ্রিত বইয়ের ইলেকট্রনিক সংস্করণ বা এ ই-বুক ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ যেকোন ই-বুক রিডার, মোবাইল ফোন, পিডিএ, সিডি প্লেয়ার ও আইপ্যাডেও পড়ার সুযোগ রয়েছে। এটুআই সংশ্লিষ্ঠরা জানান, প্রাথমিক স্তরের ৩৩টি এবং মাধ্যমিক স্তরের ৭৩টিসহ মোট ১০৬টি পাঠ্যপুস্তক ইতিমধ্যেই ই-বুকে রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব ই-বুক রাখা হয়েছে www.ebook.gov.bd ঠিকানার ওয়েবসাইটে। বিনামূল্যে পড়া বা সংগ্রহ করা যাবে প্রয়োজনীয় যেকোন বই।
স্যামসাং গবেষনা এবং উন্নয়নকেন্দ্র
আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশীদের অবদান অনেক আগে থেকেই, গুগল বা ইনটেলের মতো প্রতিষ্ঠানের গবেষনা বিভাগেও কাজ করে আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা। তবে তাদেরকে কাজ করতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক অফিসগুলোতে। আবার মেধা এবং যোগ্যতা থাকা সত্বেও আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা কাজ করার সুযোগ পায়না দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের কোন গবেষনাকেন্দ্র না থাকায়। এবছর প্রথমবারের মতো আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষনা ও উন্নয়ন কেন্দ্র চালু করেছে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। ফেব্র“য়ারিতে তারা আমাদের দেশে যাত্রা শুরু করে। স্যামসাং সংশ্লিষ্ঠরা জানান, গবেষণার জন্য এখানে তিনটি আলাদা বিভাগ খোলা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য রয়েছে ‘অ্যাডভান্স আর অ্যান্ড ডি গ্রুপ’, ‘মোবাইল ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ’ এবং ‘টেস্টিং গ্রুপ’। এর মধ্যে অ্যাডভান্স আর অ্যান্ড ডি গ্রুপ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার কাজ করছে। আর মোবাইল ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ কাজ করছে হ্যান্ডসেটের প্রযুক্তি নিয়ে। এর মধ্যে স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, স্মার্টফোনের অন্যান্য প্রযুক্তি গবেষণা এবং স্যামসাংয়ের নিজস্ব স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম ‘বাডা’ ডেভেলপিংয়ের কাজও করছে এ গ্রুপ। ইতিমধ্যে এ গ্রুপের উদ্যোগে বেশ কিছু স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি করা হয়েছে। গবেষণা গ্রুপগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ব্যবহারকারী পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া এবং পরীা-নিরীার জন্য কাজ করছে টেস্টিং গ্রুপটি। বর্তমানে এ গবেষনা ও উন্নয়নকেন্দ্রে ৩ শতাধিক বাংলাদেশী কাজ করছেন।
ইমেজিন কাপে বাংলাদেশ
মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের সংপ্তি রূপ হলো ‘এমডিজি’। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্তি, প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, এইচআইভি এইডস, ম্যালেরিয়াসহ জীবননাশকারী রোগ প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারির উন্নয়ন, এই আট সমস্যার সমাধান হচ্ছে এমডিজি অর্জন। মাইক্রোসফট আয়োজিত ‘ইমাজিন কাপ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এ আট ল্য মাথায় রেখে এমন কোনো সফটওয়্যার তৈরি করতে হয় যেটি এসব সমস্যা সমাধানে কাজে আসে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও আমাদের দেশ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে ২০১০ থেকে। প্রথম বছর তেমন কোন সাফল্য না আসলেও এবার বাংলাদেশ থেকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বা এআইইউবির দল ‘টিম র্যাপচার’ এবারের আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিয়ে ‘পিপল চয়েস’ বিভাগে শীর্ষ পুরস্কারটি জিতে নেয়। টিম র্যাপচারের এ অর্জন দেশের প্রযুক্তিক্ষেত্রে বেশ আলোচনায় আসে।
দোয়েল ল্যাপটপ
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিক্ষেত্রের বছরজুড়ে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি আলোচিত হয়েছে সেটি হলো দোয়েল ল্যাপটপ। গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের ডিজিটাল তথ্যসেবা পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। রাষ্ট্রায়াত্ব টেলিফোন শিল্প সংস্থা বা টেশিসের গাজীপুর কারখানায় গত ১০ জুলাই দোয়েলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। ল্যাপটপটির উন্নয়ন এবং গবেষণার কাজে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট এবং মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘থিম ফিল্ম ট্রান্সমিশন’ বা টিএফটিসহ কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞের সহায়তা থাকলেও এর নকশা, গবেষণা এবং উন্নয়নের কাজ করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘গণনা টেকনোলজিস’। চারটি ভিন্ন মডেলে ‘দোয়েল’ ল্যাপটপ বাজারে আসে। মডেলভেদে এর দাম ১৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। দোয়েল নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা যেমন এসেছে তেমনি এসেছে অনেক নেতিবাচক আলোচনাও। সরকার ১০ হাজার টাকায় ল্যাপটপ দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেও এখনও পর্যন্ত এ দামে কোন ল্যাপটপ দিতে পারেনি সরকার, প্রতিবেশী দেশ ভারত যেখানে মাত্র হাজার রুপিতে শিার্থীদের ট্যাবলেট কম্পিউটার দিচ্ছে সেখানে আমাদের সরকার কেন দশ হাজারেও ট্যাবলেট কম্পিউটার দিতে পারছে না সেটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে।
ই-এশিয়া
প্রায়ই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নেয় বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশেই আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির আসর! চিন্তাই হয়ত করা যায়নি এতদিন। তবে বাস্তবতা হলো, এবছর আমাদের দেশ এবার আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি আসর ‘ই-এশিয়া’র আয়োজন করেছিল, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো এ আসর। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে সমতা বৃদ্ধি, জনগণের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির যোগাযোগ ঘটানো, দোরগোড়ায় এ সেবা পৌঁছে দেওয়া, ুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ই-সেবা নিশ্চিত করা এবং ই-সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষের সময় ও অর্থসংক্রান্ত ভোগান্তি কমিয়ে আনাÑএই পাঁচটি উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছর আয়োজন করা হয়েছিল ই-এশিয়া সম্মেলন। সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে ৩০টি সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন ছিলো। এসব আয়োজনে বিভিন্ন দেশে তথ্যপ্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়। প্রদর্শনীতে ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান ও থাইল্যান্ডের ছয়টি প্যাভিলিয়ন ছিলো। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, নরডিক চেম্বার, এনটিএফ-২-এর প্রকল্পগুলোর জন্য ছিলো আলাদা স্টল। সম্মেলনে দেড় শতাধিক অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সলিউশন, ই-গভর্নমেন্ট সলিউশন, আইটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইউনিভার্সিটি এবং আউটসোর্সিং সেবা প্রদর্শন করে। সম্মেলন উপল্েয অনেক আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে এসেছিলেন। ইনটেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জন ই ডেভিস এবং ফ্রিল্যান্সিং সাইট ওডেস্কের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট কুপার ই ছিলেন সবচেয়ে বেশি আলোচনায়।
জেলা ই-সেবাকেন্দ্র
জেলা পরিষদ থেকে যেসব সেবা পাওয়া যায় সেগুলো সেগুলো পাওয়া জন্য জেলা পরিষদেই আসতে হবে এমন কোন কথা নেই। ডাকযোগে, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র, উপজেলা ই-সেবা কাউন্টার বা যেকোন কম্পিউটার থেকে জেলা তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে আবেদন জেলা পরিষদের সেবাগুলোর জন্য আবেদন করা যাবে। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের অধীনে দুইশতাধিক সেবা দেয়া হয়, সবগুলোর জন্যই এখন অনলাইনে আবেদন করা যাবে। আবেদনের সময় আবেদনকারী একটি রশীদ নাম্বার পান এবং সেবাটি কবে তিনি পাবেন সে সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারেন অনলাইনের মাধ্যমেই। তবে অনেক সময় সেবা প্রদানের তারিখের আগেও সেবাটি দেয়া সম্ভব হয় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে রশীদ নাম্বার দিয়ে আবেদনের অবস্থা (স্ট্যাটাস) জানা সম্ভব হয়। সম্প্রতি এ ধরণের সেবা সম্বলিত সারাদেশে জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু করেছে সরকার। গত নভেম্বরে সেবাটি চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এটুআই জানিয়েছে, আগে একটি পরচা পেতে ২০/২৫ লাগতো বর্তমানে তা ৩/৪ দিনে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন সেবার মাধ্যমে প্রশাসনে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। নতুন এ সেবাটি ইতিমধ্যে সারাদেশে বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
দেশ এগিয়ে যাক এই কামনায়