কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মজার ঘটনা
প্রথমেই বলে নিতে হয়ে এটি হয়ত অনেকেই জানেন তারপরও এটাকে পোষ্ট আকারে দেওয়া হল যাদের অজানা তারা জানতে পারবে নিশ্চত এবং একটু হলে আশা করি বিনোদিত হবে। 😛
প্রথমেই আসুন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জেনে নেই।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরটি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কারনে বিখ্যাত। এখানেই অবস্থিত আছে বহু পুরনো বিখ্যাত এক বিশ্ববিদ্যালয়, যার নাম কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় যার প্রতিষ্ঠাকাল ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে। ঐসময়ে ডেনমার্কে এটাই ছিল একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে এখানে কেবল রোমান ক্যাথেলিক তত্ত্ববিদ্যা সম্পর্কেই পড়ানো হতো। কিন্তু সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠেও নিয়ে আসা হয় আমূল পরিবর্তন। ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়টি একেবারেই নতুন করে সাজানো হয়। ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া হয় নারীদের। কিন্তু ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নারী শিক্ষার্র্থী আর ভর্তি হয়নি। ওই বছরই প্রথম একজন নারী শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। শুরু থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপকরা। ফলে দ্রুতই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত করে দেয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় কোপেনহেগেন আজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ডেনমার্কের মাটিতে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্ব আজ বহুদূর এগিয়ে গেছে। বদলে গেছে পুরনো অনেক কিছুই। সবকিছুর সঙ্গে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয় নতুন নতুন বিষয়। বাড়ানো হয় ফ্যাকাল্টির সংখ্যাও। এমনকি ভর্তিকৃত বর্ধিত শিক্ষার্থীদের আরও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের জন্য নতুন করে স্থাপন করা হয় ক্যাম্পাস। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি-বিদেশি মিলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার আর কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে সাত হাজার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোপেনহেগেন এখন বিশ্বের অনন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ক’টি ফ্যাকাল্টির অধীনে পড়াশোনা করানো হয় সেগুলো হলো_
ফ্যাকাল্টি অব হেলথ সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব হিউম্যানিটিজ, ফ্যাকাল্টি অব ল’, ফ্যাকাল্টি অব লাইফ সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, ফ্যাকাল্টি অব সোশ্যাল সায়েন্সেস,
ফ্যাকাল্টি অব থিওলজি।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চারটি স্থানে অবস্থিত, অর্থাৎ কয়েকটি ফ্যাকাল্টি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা আলাদা ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসগুলোর নাম হলো
নর্থ ক্যাম্পাস
ফ্যাকাল্টি অব হেলথ সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, রিসার্চ অ্যান্ড ইনভেনশন সেন্টার।
সিটি ক্যাম্পাস
ফ্যাকাল্টি অব ল’, ফ্যাকাল্টি অব সোশ্যাল সায়েন্সেস, ফ্যাকাল্টি অব থিওলজি, সেন্টারাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য আছে সুবিশাল ও মনোরম ছাত্রাবাস। তবে এখানে থাকতে হয় অনেকটাই অস্থায়ী ভিত্তিতে। আবার থাকার জন্য পরীক্ষারও মুখোমুখি হতে হয়। এসব ডরমিটরিতে রয়েছে এক রুমবিশিষ্ট কক্ষ। ফলে অস্থায়ী হলেও এসব ডরমিটরিতে থেকে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পেয়ে থাকে।
বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে পড়াশোনার জন্য হয়তো ডেনমার্ক অনেকেরই পছন্দের তালিকায় আছে।
একবার কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় নীচের প্রশ্নটা এসেছিল।
“একটি ব্যারোমিটারের সাহায্যে কিভাবে একটি গগণচুম্বী বহুতল ভবনের উচ্চতা নির্ণয় করা যায় বর্ণনা কর।”
একজন ছাত্র উত্তর দিলঃ-
“আমাদেরকে ব্যারোমিটারের মাথায় একটা দড়ি বাধতে হবে। এরপর ব্যারোমিটারটিকে ভবনের ছাদ থেকে নীচে নামিয়ে মাটি পর্যন্ত নিতে হবে।তাহলে ব্যারোমিটারের দৈঘ্য আর দড়ির দৈঘ্য যোগ করলেই ভবনের উচ্চতা পাওয়া যাবে।”
ছাত্র আসল। এসে চুপচাপ পাচ মিনিট ধরেকপাল কুচকে বসে বসে চিন্তা করতে লাগল। বিচারক তাকে সতর্ক করে দিলেন যে তার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছাত্রটি বলল, তার কাছে কয়েকটি যথাযোগ্য উত্তর আছে, কিন্তু সে ঠিক করতে পারছে না যে কোনটা সে বলবে। বিচারক তাকে তাড়াতাড়ি করতে বললে ছাত্রটি যে উত্তরগুলি দিলঃ
“প্রথমত আপনি ব্যারোমিটারটা নিয়ে ছাদে উঠবেন, এরপর ছাদের সীমানা থেকে ব্যারোমিটারটা ছেড়ে দিবেন এবং হিসাব করবেন মাটিতে পড়তে ব্যারোমিটারটির কতটুকু সময় লাগল। এরপর h=(0.5)*g*(t)^2 সূত্রটির সাহায্যে আপনি ভবনের উচ্চতা মেপে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ব্যারোমিটারটার দফারফা হয়ে যাবে।”
“অথবা যদি রোদ থাকে তাহলে ব্যারোমিটারটার দৈঘ্য মাপবেন। এরপর ব্যারোমিটারটাকে দাড়া করিয়ে এর ছায়ার দৈঘ্য মাপবেন। এরপর ভবনের ছায়ার দৈঘ্য মাপবেন। এবং এরপর অনুপাতের ধারণা ব্যাবহার করে কিছুটা হিসাব কষলেই ভবনের উচ্চতা পেয়ে যাবেন।”
“কিন্তু আপনি যদি এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি রকমের বিজ্ঞানমুখী হতে চান তাহলে আপনি ব্যারোমিটারের মাথায় ছোট একটা সুতা বেধে প্রথমে মাটিতে এরপরে ভবনের ছাদে পেন্ডুলামের মত দোলাবেন এবং এইক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের সংরক্ষণশীলতার কারনে T=2*π*sqrt(l/ g) সূত্র থেকে ভবনের উচ্চতা বের করতে পারবেন।”
“অথবা যদি ভবনটির কোন বহিঃস্থ জরুরী নির্গমন সিড়ি থাকে তাহলে আপনি সেখানে যেয়ে ব্যারোমিটারের দৈঘ্য অনুযায়ী ব্যারোমিটার দিয়ে মেপে মেপে ভবনের উচ্চতা বের করে ফেলতে পারেন।”
“আর আপনি যদি একান্তই প্রথাগত এবং বিরক্তিকর পথ অনুসরণ করতে চান তাহলে, প্রথমে ব্যারোমিটারটা দিয়ে ছাদের উপর বায়ুচাপ এবং এরপর মাটিতে বায়ুচাপ মাপবেন। এরপর বায়ুচাপের পার্থক্যকে মিলিবার থেকে ফিটে পরিনত করলেই ভবনের উচ্চতা পেয়ে যাবেন।”
“কিন্তু যেহেতু আমাদের সবসময় চিন্তাশক্তির ব্যাবহার এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের উপর জোর দেওয়া হয়, সেহেতু নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হবে ভবনের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বপালনকার কাছে যাওয়া এবং তাকে বলা, “যদি আপনি নতুন একটি সুন্দর ব্যারোমিটারীর পেতে চান, তাহলে আমি আপনাকে এই ব্যারোমিটারটি দিব, কিন্তু সে জন্য আপনাকে বলতে হবে এই বহুতল ভবনটির উচ্চতা কত!”
খুব সুন্দর