হুয়াওয়কে ব্যান করছে প্রভাবশালী দেশগুলো!!
গতকাল বৃহস্পতিবার কানাডার কর্তৃপক্ষ চীনের অন্যতম প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের চীফ ফাইনান্সিয়াল অফসিার (CFO) মনে ওয়াংঝোকে গ্রেপ্তার করেছে।
যদিও গ্রেফতারের কারণ এখনো স্পষ্ট নয় তবে কানাডার বিচার বিভাগ মেনকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করেছে। গ্রেফতারের পর চীনা দূতাবাস ও হুয়াওয়ে মেনের মুক্তির আহ্বান জানান।
উল্লেখ যে, মেন ওয়াংঝো হলেন হুয়াওয়ে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেনফির কন্যা।
মূলত রেনের নেতৃত্বেই হুয়াওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেইশন কোম্পানি হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং হুয়াওয়েকে একটি নেতৃস্থানীয় স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কিন্তু চীন থেকেই চীনের কতৃপক্ষের চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশসমূহে বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলিতে হুয়াওয়ের বিস্তার এবং অনুমোদনাধীন দেশগুলিতে কোম্পানিটির প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি বিশেষজ্ঞদের কাছে একটি বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে হুয়াওয়ে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের ওপর টেলিকম ইকুয়েপমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যেগুলো দিয়ে জনসংখ্যার উপর ব্যাপক গুপ্তচরবৃত্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু আসন্ন বছরগুলিতে সমালোচনার ঝড় হুয়াওয়ের ক্রমবর্ধমান গ্লোবাল কমুইনিকেইশনের প্রভাবকে ঘিরে ফেলেছে। যেখানে এই চীনা কোম্পানিটি বিশ্বের ফাইভ-জি ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের জন্য প্রযুক্তি সরবরাহ করবে।
ফাস্ট ইন্টারনেট প্রযুক্তি ছড়িয়ে পরার আগে সিকুউরিটির কথা বিবেচনা করে কয়েকটি দেশ চীনের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করার উপর সতর্ক করে দিয়েছিল কারণ বিশেষ করে হুয়াওয়ের সেসব প্রোডাক্টের ব্যবহারকৃত ডেটার মাধ্যমে চীনা সরকার বিশ্বজুড়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য ব্যবহার করছে।
তবে হুয়াওয়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, চীনা সরকার এমন কিছু সংগ্রহের সাথে জড়িত নয়।
এ পর্যন্ত কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে যে তারা হুয়াওয়েকে ফাইভ-জি ট্রায়ালগুলিতে অংশ নিতে দিবে না।
যুক্তরাষ্ট্র
চীনের অর্থনৈতিক ও ইন্টেলিজেন্স বাজারের বৃহত্তম প্রতিযোগী আমেরিকা আশঙ্কা করছে যে, চীন তাদের ইউজারদের লোকেশন ডেটার মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অ্যাক্সেস নিতে পারে এবং তাদের টেকনোলোজি আমেরিকান ক্রিটিকাল ব্যাপারে গুলোতেও একটা সম্ভাব্য হুমকির কারণ হতে পারে।
তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা চীনের টেলিকম কোম্পানিটির যেকোনো ধরনের ট্রাকশন ও সম্ভাব্য চুক্তি থেকে আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ওয়্যারলেস নিয়ন্ত্রক কোম্পানি AT&T কে আহ্বান করেছে।
২০১২ সালে চীনের অন্য আরেকটি টেলিকম কোম্পানি জেডটিই এবং হুয়াওয়ের বিষয়ে তারা একটি তদন্ত করে যেখানে তাদের সরঞ্জামগুলি মার্কিন জনস্বার্থের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে কিনা সেটি তদন্ত করে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
ফাইভ-আইজ গ্রুপের সদস্য অস্ট্রেলিয়া এই বছর আগস্টে ফাইভজি প্রযুক্তি সরবরাহ থেকে কয়েকটি কম্পানিকে নিষিদ্ধ করেছিল তবে তারা বিশেষভাবে হুয়াওয়ের নাম উল্লেখ করেনি।
নভেম্বর মাসে নিউজিল্যান্ড ঘোষণা করেছিল যে তারা ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার মতই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
গ্রেট ব্রিটেন
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফাইভ-আইজ বুদ্ধিমত্তা গ্রুপের সদস্য হিসেবে গ্রেট ব্রিটেনকে তার সহযোগীরা বারবার হুয়াওয়েকে এর 5-জি ব্যান করার ব্যপারে আহ্বান জানিয়েছে।
এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে গোয়েন্দা সংস্থা MI6 এর প্রধান বলেছিলেন যে, টেলিকম কোম্পানিটির বিষয়ে তার সন্দেহ ছিল।
কানাডা
এদিকে হুয়াওয়ে প্রযুক্তির ঝুঁকিতে আরেকটি দেশ কানাডা তার ফাইভ-আইজ সহযোগীদের চাপের মুখে পড়েছে যেন তারা চীনা কোম্পানিটিকে তার ফাইভ-জি কার্যক্রম পরিচালনা করতে নিষিদ্ধ করে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, মার্কিন আইন প্রণেতারা কানাডার কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন কোম্পানির সাথে হুয়াওয়ের ফাইভ-জি টেকনোলজি ব্যতিত অন্য কোম্পানির পরামর্শ দিয়েছেন।
জার্মানি
ফাইভ-আইজ ইন্টেলিজেন্সের মূল সহযোগী অন্য আরেকটি দেশ জার্মানি যারা বর্তমানে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তবে তারা হুয়াওয়ের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
গত মাসে জার্মানের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেন, তারা হুয়াওয়ের মতো চীনা অন্যান্য কোম্পানিগুলোকেও দেশে ফাইভ-জি স্থাপনে বাদ দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে বুঝানোর জন্য একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে।
জাপান
শুক্রবার স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যম জানায় যে, জাপান সরকার ফাইভ-জি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ইনফ্রাসট্রাকচার কেনার ব্যাপারে বিবেচনা করবে।
তবে জাপান সরকার এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চায়নি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র যোশীহাইড সুগা বলেছেন যে, এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তারা কথা বলেছে।
ইতালি ও ভারত
অন্য আরেকটি দেশ যারাও বর্তমানে হুয়াওয়ে টেলিকমের পণ্য ব্যবহার করছে জাপানের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকেও এই কোম্পানি থেকে কোন কিছু ক্রয়ের ব্যপারে সতর্ক করেছে।
যাইহোক ইতালি ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সরবরাহের ক্ষেত্রে কোন কোম্পানি বেছে নিবে এর উপর এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।
অপরদিকে গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, তারা হুয়াওয়েকে ফাইভ-জি ট্রায়ালগুলিতে অংশগ্রহন করার ব্যপারে নিষেধ করেছিল তবে হুয়াওয়ে বলেছিলো যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল বাজারে কোম্পানিটির সরঞ্জাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আলফাজ//ডিসে০৭/১৮