হার্ডওয়্যার

মাদারবোর্ড কিনতে যা লক্ষ্য রাখবেন

মাদারবোর্ডকে যেকোনো ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মেরুদণ্ড বলা হয়, কেননা মাদারবোর্ড এর মাধ্যমে কম্পিউটার এর সকল যন্ত্রাংশ একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। সেজন্য মাদারবোর্ডকে কখনও কখনও মেইন বোর্ড বা সিস্টেম বোর্ডও বলা হয়। মাদারবোর্ড কম্পিউটারের অন্যান্য ডিভাইসে পাওয়ার সাপ্লাই দেয় এবং অন্যান্য হার্ডওয়ার যেমন মাইক্রো প্রসেসর, প্রধান মেমোরি, অডিও ও ভিডিও নিয়ন্ত্রক, বিভিন্ন প্লাগ ইন ইত্যাদি এর সাথেও যুক্ত থাকে।

কম্পিউটার এর ইনপুট, আউটপুট যন্ত্রাংশ যেমন কি বোর্ড, মাউস এর সাথেও মাদারবোর্ড যুক্ত থাকে। বর্তমান বাজারে আসুস সব থেকে বড় ও জনপ্রিয় মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানি হলেও অন্যান্য মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানি যেমন গিগাবাইট, ইন্টেল দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাদারবোর্ড কেনার সময় কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা দরকার। যেমন আপনি কোন প্রসেসর ব্যবহার করছেন, কতখানি মেমোরি আছে, কি কি যন্ত্রাংশ যুক্ত আছে এবং কি কি ফিচার সাপোর্ট করে এর উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার এর জন্য সঠিক মাদারবোর্ড বাছাই করতে হবে। এই বিষয়ে কথা হয়েছিল  StarTech এর কয়েকজন কম্পিউটার এক্সপার্টস এর সাথে । আশা করছি তথ্যগুলো উপকারে আসবে।

মাদারবোর্ড কিনতে যা লক্ষ্য রাখবেন 2

প্রসেসর

সাধারণত মাদারবোর্ডে একটি নির্দিষ্ট টাইপের প্রসেসর সকেট থাকে। এই সকেটটিই এএমডি (AMD) বা ইন্টেল (Intel) প্রসেসর এর আসল প্যাকেজ নির্ধারণ করে যা এটিতে ইন্সটল করা যাবে। মাদারবোর্ডের সাথে কোন মডেলের প্রসেসর ব্যবহার করতে হবে সেটা মাদারবোর্ডের চিপসেট নির্ধারণ করে দেয়। সুতরাং মাদারবোর্ড কেনার আগে আপনি কম্পিউটারে কোন প্রসেসর ব্যবহার করতে চান সেটা ঠিক করে নেয়া খুব জরুরি।

মাদারবোর্ড সাইজ

সাধারণত একটি কেসিং এর মধ্যে মাদারবোর্ডটি লাগানো থাকে। সেজন্য মাদারবোর্ড নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে একটি নির্দিষ্ট সাইজের বোর্ড তৈরি করতে হয়। নাহলে সেগুলো কেসিং এর ভিতরে লাগানো সম্ভব হয়না। এই কারনে পিসিবি বোর্ড ( Printed circuit board) যে সাইজ বা নিয়ম মেনে তৈরি করা হয় তাকে মাদারবোর্ডের আকার বা ফর্ম ফ্যাক্টর বলা হয়। মাদারবোর্ড সাধারণত তিনটি সাইজের হয়ে থাকে, এটিএক্স (ATX), মাইক্রো এটিএক্স (mATX) এবং মিনি-আইটিএক্স (mITX)।

মাদারবোর্ডের শারীরিক আকার এতে কতগুলো পোর্ট ও স্লট থাকে তার উপর নির্ভর করে। যেমন একটি এটিএক্স (ATX) বোর্ডে সর্বমোট পাঁচটি PCI এক্সপ্রেস অথবা PCI স্লট থাকে। এবং একটি মাইক্রো এটিএক্স (mATX) বোর্ডে সাধারণত ৩ টি স্লট থাকবে। সব থেকে ছোট মাদারবোর্ড মিনি-আইটিএক্স (mITX) এ একটি স্লট থাকে। আমরা যদি মেমোরি স্লট এর কথা বলি তাহলে এটিএক্সে ৪ টি, মাইক্রো এটিএক্সে ২ অথবা ৪ টি এবং মিনি আইটিএক্সে ২ টি স্লট থাকে। আর সাটা (SATA) পোর্ট এটিএক্সে থাকে ৬ টি, মাইক্রো এটিএক্সে থাকে ৪ বা ৬ টি আর মিনি এটিএক্সে থাকে ২ বা ৪ টি।

মেমোরি

মাদারবোর্ডের সাথে কোন প্রসেসর ব্যবহার করতে হবে তা নির্ধারণ করতে চিপ সেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কোন ধরনের এবং কত গতির মেমোরি ইন্সটল করা হবে তাও চিপ সেট নির্ধারণ করে থাকে। মাদারবোর্ডের আকার এবং মেমোরি স্লট এর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সর্বমোট কত মেমোরি ইন্সটল করা যাবে সেটা ঠিক করা হয়। আপনার কম্পিউটারে কত মেমোরি ইন্সটল করতে চান সেটা ঠিক করে নিতে হবে মাদারবোর্ড কেনার আগে যদিও মেমোরি পরে বাড়ানো যায়।

এক্সপান্সন স্লট এবং কানেক্টর

কম্পিউটারে কি কি যন্ত্রাংশ যুক্ত করা হবে তার জন্য এক্সপান্সন স্লট এবং কানেক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউএসবি ৩.০ (USB 3:0), ই-সাটা (eSATA), থান্ডার বোল্ট (Thunderbolt), এইচডিএমআই (HDMI), অথবা পিসিআই এক্সপ্রেস (PCI Express) এর মত এমন কিছু যন্ত্রাংশ যদি আপানার কম্পিউটারে যুক্ত করার দরকার হয়ে থাকে যার জন্য আলাদা কানেক্টর বা স্লট এর দরকার হয়। তাহলে মাদারবোর্ড কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে মাদারবোর্ড টি এই ধরনের কানেকশন সাপোর্ট করে কিনা। আলাদা ভাবে কানেকশন দেয়ার জন্য কিছু কানেক্টর স্লট লাগানো যায় তবে এইগুলো খুব ভাল কাজ করবে না। মাদারবোর্ডের সাথে চিপ সেট গুলো ইন্ট্রিগেশন করা থাকলে ভাল কাজ করে।

ফিচার

মাদারবোর্ডের সাথে আলাদা করে কিছু ফিচার যুক্ত করা হয় যেগুলো কম্পিউটার পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় তবে সেগুলো বিভিন্ন কাজে লাগে। যেমন অন বোর্ড ওয়াই ফাই, অডিও এবং RAID নিয়ন্ত্রক। যদি মাদারবোর্ডে আলাদা কিছু ফিচার যুক্ত করা থাকে তাহলে মাদারবোর্ডের বেসিক ইনপুট আউটপুট সিস্টেম (BIOS) থেকে কোন ফাংশন বন্ধ হয়ে গেলেও কোন সমস্যা হবেনা। এর ফলে অতিরিক্ত কোন এক্সপান্সন কার্ড যুক্ত করা লাগবে না।

ওভার ক্লকিং

প্রতিটি কম্পিউটারে ক্লক স্পিড নামে কিছু চিপ থাকে, যেগুলো কম্পিউটার এর ডাটা প্রসেস এর গতি নির্ধারণ করে থাকে। আর একেই ওভার ক্লকিং বলা হয়ে থাকে। প্রসেসরের ওভার ক্লকিং করতে হলে আগে দেখে নিতে হবে যে মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে কিনা। যেমন চিপ সেট কে অবশ্যই CPU ও ভোল্টেজ কে একসাথে সমন্বয় করতে হবে যেটা বেশিরভাগ চিপ সেট পারে না। যে সমস্ত মাদারবোর্ডে ভাল পাওয়ার ব্যবস্থাপনা থাকে সেগুলো আরও বেশি টেকসই হয়।

Rasel

Rasel is a tech geek from Bangladesh. He loves blogging and tries to help people by sharing his knowledge about computer hardware and technologies. He currently works at Star Tech

One thought on “মাদারবোর্ড কিনতে যা লক্ষ্য রাখবেন

  • Saran

    প্রতিটি কম্পিউটারে ক্লক স্পিড নামে কিছু চিপ থাকে, যেগুলো কম্পিউটার এর ডাটা প্রসেস এর গতি নির্ধারণ করে থাকে। আর একেই ওভার ক্লকিং বলা হয়ে থাকে।

    Reply

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।