শিশু-যৌন নিপীড়নে এগিয়ে ইন্সটাগ্রাম
শিশু-যৌন নিপীড়নের সব থেকে বড় প্ল্যাটফরম হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্সটাগ্রাম- সদ্য এমনই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিশু-অধিকার রক্ষাবিষয়ক সংগঠন ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দি প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েল্টি টু চিল্ড্রেন সংক্ষেপে এনএসপিসিসি।
সংগঠনটির সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে যুক্তরাজ্য পুলিশের বরাত দিয়ে জানান হয়েছে, শিশুদের প্রতি বিভিন্ন যৌন হয়রানি বা যৌন আচরণের ৭০ ভাগ ঘটনা ঘটে এক বা একাধিক সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর মধ্যে ইন্সটাগ্রামে ৩২ ভাগ, ফেসবুকে ২৩ ভাগ ও স্ন্যাপচ্যাটে ১৪ ভাগ ঘটনা ঘটে।
তবে ২০১৭-১৮ সালের ১৮ মাসের মধ্যে ইন্সটাগ্রামে এই রকমের অপরাধের হার বেড়েছে ২০০ ভাগ। এই অপরাধের আওতায় শিশুর প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন যৌন আচরণ বা আচরণের চেষ্টা, বিভিন্ন ধরণের যৌন উদ্দিপনামূলক চিত্র বা মন্তব্য বা ইঙ্গিত প্রধান ও অন্যান্য অশালীন আচরণ ও মন্তব্য বা ইঙ্গিতকে গণ্য করা হয়।
শিশুদের প্রতি এই রকমের যে কোন অপরাধকে যুক্তরাজ্য সরকার ২০১৭ সাল থেকে ‘গুরুতর অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে আসছে। এনএসপিসিসি’র দেয়া তথ্য মতে, উক্ত ১৮ মাসে ৫ হাজারের বেশি বিভিন্ন বয়সের শিশু-যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীরা সবথেকে বেশি এই অপরাধের শিকার হয়েছে। উল্লেখ্য, শিশু-যৌন নিপীড়নের এই অপরাধকে ‘গ্রুমিং’ এবং এই রকমের অপরাধীদের ‘গ্রুমার্স’ বলে অভিহিত করা হয়।
শিশু নিপীড়নের এই রকমের ঘটনা রুখতে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম কর্তৃপক্ষ ‘ম্যাসেবল’ নামক জনপ্রিয় প্রযুক্তিবিষয়ক পোর্টালকে এক বার্তায় জানিয়েছে, ‘তরূণ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ সামাজিক প্ল্যাটফরম নিশ্চিত করা আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং যে কোন রকমের শিশু নির্যাতন রুখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।’
তারা আরও জানায়, ‘ইতিমধ্যে আমরা এই অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ৯৯.২ শতাংশ কন্টেট (ছবি, ভিডিও, পোস্ট, মন্তব্য) ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম থেকে সরিয়ে ফেলেছি এবং একই সাথে এই রকমের অপরাধী বা সন্দেহমূলক যে কোন আইডিকে ব্লক করে দিয়েছি।’
শিশু নিপীড়নের ঘটনাসমূহ অনলাইন জগতের সব থেকে বড় অপরাধগুলোর একটি। আন্তর্জাতিক পরিসরেও এই রকমের অপরাধকে সর্বাধিক গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রযুক্তি অভূতপূর্ব উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে এই অপরাধের হার বাড়ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশুর প্রটি নির্যাতন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রকমের বিকৃত অপরাধকে রুখতে শুধু প্রশাসন বা পুলিশের ভূমিকাই যথেষ্ট না বরং সকলের সার্বিক অংশগ্রহণ দরকার। আর দরকার সামাজিক সচেতনতা। এক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিলে শিশু-নিপীড়নের অপরাধের অনেকাংশে কমে আসবে।