ইউজার রিভিউঃ মি ব্যান্ড ৩ নিয়ার পার্ফেক্ট ফিটনেস ব্যান্ড
কিছুকাল আগে মানুষ ঘড়ি পড়ত যা যুগের সাথে তাল মিলাতে যেয়ে পড়ে স্মার্টওয়াচ/ফিটনেস ব্যান্ড। আগে ১৫০-১৫০০টাকার ঘড়ি কিনেই ক্ষান্ত কিন্তু এখন স্মার্টওয়াচ/ফিটনেস ব্যান্ড কিনতে ২৫০০-২০০০০ টাকা খরচ করতেও কার্পন্য করে না।
তেমনি একটি স্মার্টওয়াচ/ফিটনেস ব্যান্ড হল শাওমি মি ব্যান্ড ৩ যদিও বা মি ব্যান্ড৪ এসে যাচ্ছে তবুও থ্রি নিয়ে কথা এখনি শেষ হচ্ছে না।
ডিসপ্লে এবং ফিচারসঃ
মি ব্যান্ড ৩ তে যে ছোট্ট টাচস্ক্রিন ডিসপ্লেটি ব্যাবহার করা হয়েছে, সেটি একটি ০.৭৮ ইঞ্চির OLED ডিসপ্লে এবং এর রেজুলেশন ১২৮*৮০ পিক্সেল এবং এর ডিসপ্লে ডেনসিটি ১৯৩ পিপিআই যা গত বছরের মি ব্যান্ড ২ এর থেকে কিছুটা বেটার। এছাড়া OLED ডিসপ্লে হওয়ায় ডিসপ্লেটি ডিপ ব্ল্যাক এবং এর ওপরে লেটারগুলো এবং ডিজিটগুলো বেশ স্পষ্ট এবং ক্লিয়ার দেখা যায়। এছাড়া গত বছরের মি ব্যান্ড ২ এর তুলনায় এর ডিসপ্লেটি লক্ষণীয়ভাবে বেশি ব্রাইট এবং বাইরের আলোতে মি ব্যান্ড ২ এর তুলনায় বেটার ভিউইং এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে।
আর এর সম্পূর্ণ ডিসপ্লেটি টাচস্ক্রিন হওয়ায়, ডিভাইসটির বিভিন্ন স্ক্রিন এবং ফাংশনসের মধ্যে নেভিগেট করা মি ব্যান্ড ২ এর ওয়ান বাটন নেভিগেশনের তুলনায় অনেক বেশি সহজ এবং নরমাল। তবে মি ব্যান্ড ৩ এ মি ব্যান্ড ২ এর মতো একটি বাটনও আছে, তবে সেটি স্ক্রিনের সাথে ব্লেন্ড করা এবং এই একটি বাটন ব্যাবহার করে বা বাটনে ট্যাপ করে স্ক্রিন অন করা, এভেইলেবল ফাংশনসগুলোর মধ্যে সুইচ করা, লং প্রেস করে ছোট ছোট বিভিন্ন অ্যাকশন পারফর্ম করা সম্ভব হয়, যেমন কোন ইনকামিং কল রিজেক্ট করা, হার্টরেট ট্র্যাকিং স্টার্ট করা, স্টপওয়াচ স্টার্ট করা ইত্যাদি।
এছাড়া হার্টরেট ট্র্যাকিং,স্লিপ মনিটর এসব ফিচারসগুলোও বেশ কাজের। স্লিপ ট্র্যাকিং ফিচারটি মুলত মি ব্যান্ড ৩ এর মধ্যে আমার সবথেকে প্রিয় ফিচারসগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্লিপ ট্র্যাকিং এর জন্য আপনাকে আলাদা ভাবে ফিচারসটি অ্যাক্টিভ করে নিতে হবে না, বরং আপনি যখনি ব্যান্ডটি হাতে পড়ে ঘুমাবেন, তখনই এটি অটোমেটিক আপনার স্লিপ ট্র্যাক করবে। আপনি কখন ঘুমিয়েছেন, কতক্ষন লাইট স্লিপ পেয়েছেন, কতক্ষন ডিপ স্লিপ পেয়েছেন, কখন ঘুম থেকে জেগেছেন এইসব ধরনের খুঁটিনাটি ডেটা এটি ট্র্যাক করতে পারে, যদিও এমনটা মি ব্যান্ড ২ ও পারতো। অ্যালার্ম দিয়ে রাখলে হাত ভাইব্রেট করবে সময় হয়ে গেলে।
স্মার্টওয়াচ অ্যাপঃ
এটি ব্যবহার করতে হলে অ্যাপ না হলেও চলবে , কিন্তু আপনি যদি সকল ফিচার উপভোগ করতে চান তাহলে মি ফিট অ্যাপটি ইন্সটল করে নিতেই হবে,গুগল প্লে স্টোর এ গেলেি পেয়ে যাবেন অ্যাপটি, তারপর আপনার ইচ্ছামত কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন ওয়াচটিকে।
মি ব্যান্ডটি সেটাপ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ব্লুটুথের সাহায্যে
আপনার ফোনে ইন্সটল করা MI Fit অ্যাপটির সাথে ব্যান্ডটিকে কানেক্ট করতে হবে। আর এই অ্যাপটিই মুলত সম্পূর্ণ ব্যান্ডটির একমাত্র কনট্রোল প্যানেল যেখানে আপনি এই ব্যান্ডটির সব ধরনের সেটিংস এবং ফিচারস কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।
যা যা পাবেন অ্যাপটি ব্যবহার করেঃ
এই অ্যাপটিতেই মুলত আপনাকে আপনার স্টেপ গোলস, আপনার ওয়েদার প্রোভাইডার, আপনার লোকেশন ইত্যাদি আগে থেকে সেট করে দিতে হবে। এখানে আপনি আপনার গত রাতের স্লিপ ডিটেইলস, গত এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের স্লিপ ডিটেইলস ইত্যাদির রেকর্ড রাখতে পারবেন এবং সেগুলো কম্পেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া আপনার রিসেন্ট সব হার্টবিট ট্র্যাকিং রেজাল্টগুলোও সব চেক করতে পারবেন। এছাড়া আরও অনেক এক্সট্রা ফিচারসও এখান থেকে অ্যাক্টিভ করতে
পারবেন।
এছাড়াওঃ
ইনকামিং কল রিমাইন্ডার, মেসেজ নোটিফিকেশন, অ্যাপ নোটিফিকেশনস, অ্যালার্ম সেটিংস এবং আরও অনেক কিছু। মি ব্যান্ড ৩ এর আরেকটি জিনিস আমার ভালো লেগেছে, তা হচ্ছে আপনি যেসব অ্যাপের নোটিফি
কেশন রিমাইন্ডার অ্যাক্টিভ করে রাখবেন, আপনার ব্যান্ডে শুধুমাত্র অ্যাপটির আইকন এবং ভাইব্রেশন নয়, বরং নোটিফিকেশনটির টেক্সট কন্টেন্টগুলোও দেখানো হবে ব্যান্ডে। যেমন কোন মেসেজ আসলে ব্যান্ডটির ছোট স্ক্রিনেই আপনি সেটা পড়ে ফেলতে পারবেন। তবে খারাপ ব্যাপারটি হচ্ছে, ব্যান্ডে বাংলা ফন্টের সাপোর্ট নেই। তাই শুধুমাত্র ইংলিশ ফন্টগুলোই এখানে পড়তে পারবেন।
ব্যাটারি লাইফ
ব্যাটারি লাইফ হচ্ছে ফিটনেস ব্যান্ড এবং স্মার্টওয়াচগুলোর সবথেকে ইম্পরট্যান্ট একটি ফ্যাক্টর যেটি ইউজাররা ডিভাইস কেনার সময় বিবেচনা করেন। ফিটনেস ব্যান্ডগুলোর ব্যাটারি লাইফ অবশ্যই ভালো হতে হবে,
কারন, এটিকে নিশ্চই আপনি আপনার স্মার্টফোনের মতো প্রত্যেকদিন চার্জ দিতে চাইবেন না। তাছাড়া স্মার্টওয়াচগুলোর তুলনায় ফিটনেস ব্যা
ন্ডগুলোর ব্যাটারি লাইফ সবসময়ই অনেকটা বেটার হয়ে থাকে। ঠিক এই কারনেই অনেকে ফুল ফিচারড স্মার্টওয়াচের তুলনায় ফিটনেস ব্যান্ডগুলোকে প্রিফার করে থাকেন।
আমার ব্যক্তিগত ব্যবহারে ব্লুটুথ কানেক্টেড না থাকা অবস্থায় প্রায় ১৫-১৭দিন এক চার্জে চলে গিয়েছে, কোনোকোনো বার এক চার্জে ২০দিন ব্যাকাপ দিয়েছে।।এমন অবস্থা যে শেষ কবে চার্জে দিয়েছিলাম মনেই নেই।
মি ব্যান্ড ৩ এর ব্যাটারি লাইফও আমার পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স অনুযায়ী যথেষ্ট ভালো এবং গত বছরের মি ব্যান্ড ২ এর তুলনায়ও আরও কিছুটা বেটার। এই ৭ দিনের মধ্যে আমি ব্যান্ডটিকে প্রায় ২ বার চার্জ দিয়েছি এবং কোনবারই একেবারে ০% ব্যাটারি লাইফে এনে চার্জ করিনি। এখানে উল্লেখ্য, ব্যান্ডটি আমি প্রায় সারাক্ষনই ব্যাবহার করেছি। ২ বারই ২০-২৫% চার্জ থাকা অবস্থায় চার্জ দিয়েছি। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, মি ব্যান্ড ৩ একবার ফুল চার্জ দিলে প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন লাস্ট করবে যদি আপনি সারাক্ষনই এটি ব্যাবহার করেন।
তবে যে কথা না বললেই নয়, চার্জে দিতে গেলে আপনার একটু হ্যাপা নিতেই হবে, স্ট্র্যাপ থেকে খুলে নিয়ে চার্জে দিতে হবে, বক্সে দেওয়া ইউএসবি ক্যাবল ব্যবহার করে চার্জ দিতে হয়। ল্যাপ্টপ এ কানেক্ট করে চার্জ দিলে ১.৩০ঘন্টার মত সময় লাগে।
বিল্ড কোয়ালিটি
বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আপোষ করার মত ইস্যু দেখিনি এতে।
শাওমির মি ব্যান্ড ডিভাইসগুলো সবসময়ই তাদের প্রাইসের তুলনায় অনেক বেশি প্রিমিয়াম বিল্ড কোয়ালিটির হয়ে থাকে। সত্যি কথা বলতে, বাজেট স্মার্ট ব্যান্ডগুলোর মধ্যে সবথেকে ভালো বিল্ড কোয়ালিটির ডিভাইসগুলোই শাওমির মি ব্যান্ড। শাওমির প্রথম স্মার্ট ব্যান্ডটিতে কোন স্ক্রিনই ছিলো না। সম্পূর্ণ ব্যান্ডটিকেই কনট্রোল করতে হত এর কম্প্যানিয়ন অ্যাপের সাহায্যে। গত বছরের মি ব্যান্ড ২ তে তারা ছোট্ট একটি স্ক্রিন দিয়েছিলো যেটি টাচ-স্ক্রিন ছিলো না। এই ছোট্ট স্ক্রিনে টাইম, স্টেপস, হার্টরেট ইত্যাদি ছোট ছোট ইনফরমেশনগুলো চেক করা যেত। তবে সব মি ব্যান্ডেরই বিল্ড কোয়ালিটি ছিলো প্রশংসনীয়। এবারের মি ব্যান্ড ৩ এর বিল্ড কোয়ালিটি আগের দুটির থেকেও বেটার। মি ব্যান্ড ৩ তে আছে আগের তুলনায় আরেকটু বড় স্ক্রিন, যার পুরোটাই টাচ-স্ক্রিন। এছাড়া ব্যান্ডের নিচের দিকে গত বছরের মি ব্যান্ড ২ এর মতো একটি বাটনও আছে যেটিতে টাচ করে স্ক্রিন অন করা যায়। এছাড়া সম্পূর্ণ ইউআইতে নেভিগেট করার জন্য সরাসরি ছোট স্ক্রিনটিতে সোয়াইপ করাই যথেষ্ট।
মি ব্যান্ড ৩ এর স্ক্রিনটি আগের মডেলের মতো একেবারে ফ্ল্যাট নয়। স্ক্রিনটি চারদিক থেকে কার্ভড করা (অনেকটা স্যামসাং এর ইনফিনিট ডিসপ্লের এজগুলোর মতো), যার ফলে স্ক্রিনে খুব স্মুথলি আঙ্গুল সোয়াইপ করা সম্ভব হয়।
কিছু বিষয় তুলে ধরলার বুঝার সুবিধার্থেঃ
সাইজঃ ৪৬.৯*১৭.৯*১২ মিমি
ওজনঃ মাত্র ২০গ্রাম
ব্যাটারি ক্যাপাসিটিঃ ১১০ মিলিঅ্যাম্পহাওয়ার
জেনারেশনঃ থার্ড
চিপ্সেটঃ ডায়ালগ সেমিকন্ডাক্টর ১৪৬৮১,ক্লক রেট ৩২-৯৬মেগাহার্টজ
স্ট্র্যাপটির আলাদা দামঃ ১৮০-২৫০টাকা
ওভারঅল রিভিউঃ পয়সা উসুল(৮/১০)
দামঃ অফিসিয়াল দাম ২২০০-২৫০০ বাট আনঅফিসিয়াল নিতে দারাজ থেকে ছাড়ে ১৪০০-১৯০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন কিন্তু ৬ মাসের ওয়ারেন্টি পাবেন না। এছাড়াও পিকাবু থেকেও অর্ডার করতে পারেন যদি অনলাইন কমার্স এ ভরসা থেকে থাকে আপনার।
যাই হোক অনেক বড় হয়ে গেল, নেক্সট এ নতুন কিছু নিয়ে আসা হবে।
ধন্যবাদ
ফর মোর ইনফো ভিজিট শাওমি ওয়েবসাইট
রেফঃ mi.com/global/mi-band-3/