মোবাইল-ম্যানিয়াঅ্যান্ড্রয়েডপ্রযুক্তির-বিস্ময়

গুগল পিক্সেল ৪ ও ৪ এক্সএল’র মুক্তি: নতুন যা

আপনি যদি একজন প্রযুক্তিপ্রেমি হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই গুগল পিক্সেল ৪ এর নতুন ফিচারগুলো জেনে থাকবেন। আজ মুক্তি পেয়েছে কাংখিত ফোন গুগল পিক্সেল ৪ এবং ৪ এক্সেল। নতুন কি থাকছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের পোস্টে।

 

সাধারণত একটি নতুন ফোন এ আপনি একটি বা দুইটি নতুন প্রযুক্তির দেখা পাবেন। কিন্তু গুগল পিক্সেল ৪ এ থাকছে চারটি নতুনত্ব ! ফেস আনলক, বেশি রিফ্রেশ রেট, দ্রুত গুগল এসিস্ট্যান্ট এবং রাডারের মাধ্যমে স্থানিক সচেতনতা। এতে আরও থাকছে পূর্ববর্তী ফোনগুলো থেকে একটি নতুন ডিজাইন যার ক্যামেরা সেটাপ অনেকটা আইফোন ১১ প্রো এর মতো।

আইফোন ১১ প্রো গুগলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে “সেরা স্মার্টফোন ক্যামেরা” মুকুট। গুগল কে অবশ্যই তাদের ক্যামেরা সেক্টরটি উন্নত করতে হবে। আমরা এখনও জানি না তারা তাদের মুকুটটি ফিরিয়ে নিতে পারবে কিনা। তা জানা যাবে ফোনের ফুল রিভিউ থেকে।

 

ডিজাইন


গুগল পিক্সেল ৪ এর ডিজাইন আমার কাছে অনেকাংশেই আইফোন ১১ প্রো এর মতো লেগেছে। একই ক্যামেরা স্কয়ার, পিছনে একই ম্যাট-গ্লাস প্যানেল, কোনা দিয়ে একই রকমের গোল মেটাল ফিনিশিং। অবশ্য কালো রঙয়ের ভার্সনে পিছনে থাকছে গ্লসি ফিনিশিং।

গুগল পিক্সেল ৪ ও ৪ এক্সএল'র মুক্তি: নতুন যা 2

 

ফেস আনলক


পিক্সেল ৪ এ সম্ভবত সবচেয়ে দ্রুত ফেস আনলক প্রযুক্তি রয়েছে। ফোনটি তে তাকাতে না তাকাতেই আনলক হয়ে যায়। সিকুরিটি নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি গুগলের ফোন, সিকুরিটি নিয়ে কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। ফোনটি এর আনলক প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় আপনি ফোনটি হাতে ধরার আগেই। হ্যা, ঠিক শুনেছেন, গুগল এর মোশন সেন্স রাডার এর মাধ্যমে সনাক্ত করতে পারে যে আপনি ফোনটির দিকে হাত বাড়াচ্ছেন কিনা।

গুগল পিক্সেল ৪ ও ৪ এক্সএল'র মুক্তি: নতুন যা 3

 

স্ক্রিন


প্রথমেই উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এর ৯০ হার্জ ডিসপ্লে। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি ফোন দেখেছি যাতে ছিলো এই প্রযুক্তিটি। তাই আপনারা সবাই জেনে থাকবেন এটি কতটা কার্যকরী। ফোন স্ক্রল করা অবস্থায় আপনি লেখা পড়তে পারবেন। ফোনটি তখনই ৯০ হার্জ এ শিফট করবে যখন দরকার পড়বে এছাড়া এটি ৬০ হার্জ এই থাকবে। যা ব্যাটারি লাইফ এর উপর কম চাপ ফেলবে।

এতে আরও নতুন থাকছে “Ambient EQ” যা আপনার রুম এর সাথে এর কালার টেম্প্রেচার মিলিয়ে নিবে। অনেকটা এপল এর আইপ্যাড এর মতো।

গুগল পিক্সেল ৪ ও ৪ এক্সএল'র মুক্তি: নতুন যা 4

 

মোশন সেন্স


গুগল পিক্সেল ৪ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার মনে হয়েছে এটি আমার কাছে। সংক্ষেপে বলতে গেলেঃ ফোনটি তে রয়েছে একটি রাডার!

এটি ফোনের ২ ফিট এর মধ্যে একটি স্থানিক সচেতনতা তৈরি করে। এই প্রযুক্তিটির উপরে গুগল বছরের পর বছর ধরে কাজ করছিল, যার নাম ছিলো “প্রোজেক্ট সোলি” । বর্তমানে এই সেন্সরটি বেশি কিছু করে না কিন্তু গুগল বলছে ব্যাবহারকারীরা এতে অভ্যস্থ হয়ে গেলে সেন্সরটি নিয়ে আসল কাজ শুরু করবে গুগল।

এখন এই সেন্সরটির মূল কাজ হচ্ছে আপনি আপনার ফোনটির দিকে হাত বাড়াচ্ছেন কিনা তা সনাক্ত করা। আপনি যদি ফোনটি থেকে দূরে সরে যান তাহলে এটি এর “অলয়েস অন” ডিসপ্লে অফ করে দেয়, আপনি যখন ফোনটির কাছাকাছি চলে আসবেন তখন এটি স্ক্রিন ডিসপ্লেটি চালু করে দেয় এবং ফেস আনলক এর প্রক্রিয়াটি শুরু করে দেয়। আপনার কল আসলে আপনি যখন ফোনটির দিকে হাত বাড়াবেন আপনা আপনি কল এর সাউন্ড কিছুটা কমে আসবে। এরপর আপনি হাতের ইশারার মাধ্যমেই কলটি কেটে দিতে পারবেন। এলারম ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এর দ্বারা।

এই ফিচারটি নিয়ে আপনাকে সবকিছু শিখিয়ে দিবে গুগল দ্বারা বানানো একটি পোকেমন গেম। পিকাচু আপনকে কিভাবে ইশারা করতে হয় এবং বিস্তারিত সবকিছু শিখিয়ে দিবে। ইশারার মাধ্যমে আপনি পিকাচু কে শুরশুরিও দিতে পারবেন।

গুগল পিক্সেল ৪ ও ৪ এক্সএল'র মুক্তি: নতুন যা 5

ক্যামেরা


ক্যামেরা নিয়ে এখনই খুব বেশী কিছু বলতে পারছি না। গুগল অবশেষে একাধিক ক্যামেরার ব্যাবহার শুরু করেছে এত বছর পর। এতে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেল এর প্রাইমারি ক্যামেরা সেন্সর এবং একটি ১৫ মেগাপিক্সেল এর “২গুনটেলিফোটো লেন্স। এর ফ্রন্ট ক্যামেরার দৃষ্টিক্ষেত্র ৯০ ডিগ্রি!

ক্যামেরা সেকশনটির সবচেয়ে বড় উন্নয়ন হলো এটি আপনাকে প্রকৃত সময়ে দেখাতে পারবে ছবিটি তোলার পর কেমন দেখাবে। অর্থাৎ আপনি ক্যামেরা অন করেই HDR মোডে ছবি কেমন দেখায় তা দেখতে পারবেন ছবিটি না তুলে। পোট্রেট মোডে ফিচারটি কাজ করে কিনা তা এখনও অজানা।

 

গুগল পিক্সেল ৪ ও ৪ এক্সএল'র মুক্তি: নতুন যা 6

 

অন্যান্য যা থাকছে

এটি গাড়ি দুর্ঘটনা সনাক্ত করতে পারবে। দুর্ঘটনা মারাত্মক হলে নিজে থেকেই ইমারজেন্সি সার্ভিস কল করবে যদি আপনি সাড়া না দেন। যা নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলবো আরেকটি পোস্টে।

 

দাম

এর দাম শুরু হচ্ছে $৭৯৯ ডলার থেকে (৬৮ হাজার টাকা)। অর্থাৎ পিক্সেল ৪ এর দাম ৬৮ হাজার, এবং পিক্সেল ৪ এক্সেল $৮৯৯ ডলার (৭৬ হাজার টাকা)। দুটোই ৬৪ জিবি ভ্যারিয়ান্ট। ১২৮ জিবি ভ্যারিয়েন্ট এর জন্য আপনাকে আরও ৮ হাজার টাকা বেশী গুনতে হবে ফোন প্রতি। ফোনটি পাওয়া যাবে অক্টবর এর ২১ তারিখ থেকে।

এটি কি এর দাম অনুযায়ী যোগ্য একটি ফোন? এখনই এই প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারছি না কিন্তু আমরা খুবই কৌতূহলী এ ফোনটি কিভাবে বাজারের অন্যান্য ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

পিক্সেল ৪ এবং গুগল এর “Made by Google” ইভেন্টটি নিয়ে আরও পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। ধন্যবাদ!

Sabbir Hasan

প্রযুক্তি নিয়ে অত্যন্ত কৌতূহলী। জানতে এবং জানাতে ভালো লাগে, তাই মাঝে মাঝে টুকিটাকি এই অনভিজ্ঞ হাতের লেখালিখি। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার এবং ফ্রন্ট-এন্ড ওয়েব ডেভেলপার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।