ঘরে বসে অনলাইনে আয়ের উপায়
অনলাইনে অর্থ আয়ের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। আত্মপ্রকাশ পাচ্ছে তাদের প্রতিভার। আর তৈরি হচ্ছে অনলাইনে আয়ের নানা পথও। তবে অনলাইনে কাজ করে আয় করতে গেলে একটা প্ল্যাটফর্ম ধরে এগোতে হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। ঘরে বসে আয় করার এ পর্বে মো. তানভীর শেখ (সাংবাদিক) লিখছেন পর্বভিত্তিক লেখাটি।
বেকারত্বের দিন শেষ আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। ইংরেজি Unemployment শব্দ থেকে বেকারত্ব শব্দটি এসেছে। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুঁজে পায় না তখনকার পরিস্থিতিকেই বলে বেকারত্ব। কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। আর এমন সময়ই পেশা হিসেবে কোনো কাজ খুঁজে না পেয়ে অনেকেই বিকল্পপথ হিসেবে কোনো না কোনো কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন আর এসকল বিকল্পপথের মধ্যে ইন্টারনেট বা অনলাইনে অর্থ আয়ের বিষয়টি অন্যতম।
অনলাইনে আয় করার নানা সুযোগ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার মুখে পড়তে হতে পারে। অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজের ক্ষেত্র থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে যা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। জেনে নিতে হবে সেসব সম্পর্কে।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে কী এবং কীভাবে কাজ করবো কারণ অভিজ্ঞতা ছাড়া তো কিছু করা সম্ভব না। তাই অবসর সময় কে কাজে লাগিয়ে আয় করা যেতে পারে। যারা পড়ালেখা করছেন তারাও ঘরে বসে আয় করতে পারেন নিজের হাত খরচের জন্য। অনলাইনে তো আমরা সময় নষ্ট করি কিন্তু সেই সময় কে যদি কাজে লাগিয়ে হয়ে যায় কিছু বাড়তি আয় তাতে দোষ কি! কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতারণার শিকার হবেন না। যেখানে আপনি কাজ করলে প্রতিষ্ঠান আপনাকে টাকা দিবে সেখানে প্রতিষ্ঠান আপনার থেকে টাকা নেবে তা প্রশ্নই উঠে না। যদি দেখেন কেউ আপনাকে আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিচ্ছে আর আপনাকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা জমা দেয়ার কথা বলছে, তাহলে ভালোভাবে যাচাই করবেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। এ বিষয় আমাদের মতামত হচ্ছে যে সকল প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে অগ্রিম টাকা চাইবে কাজ দেয়ার আগে, সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত না হওয়াই উত্তম। কোন কোন খাত থেকে কীভাবে বৈধ উপায় আয় করা যায় সে বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।
১. ডেটা এন্ট্রি করে আয়
অনলাইনে সহজ কাজগুলোর একটি হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আয় খুব কম। তবে এ ধরনের কাজ অটোমেশনের কারণে এখন খুব কম পাওয়া যায়। যাদের কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও দ্রুতগতির টাইপিং দক্ষতা আছে, তারা এ ধরনের কাজ করতে পারবেন। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এ ধরনের কাজ রয়েছে। তবে যাদের কোনো কাজে দক্ষতা থাকে, তারা সহজে কাজ পান এবং দ্রুত আয় বাড়াতে পারেন।
২. অনুবাদক বা পরামর্শক কিংবা সহকারী হিসেবে আয়
পরামর্শক হওয়ার জন্য নিজেকে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। হয়ত আপনি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন অথবা করেছেন। আপনি সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একই ধরনের কাজে যারা নতুন এসেছে তাদেরকে পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। সেখানে আপনি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করবেন তাদের পন্যগুলো বাজারে কীভাবে গ্রাহকের কাছে চাহিদা বৃদ্ধি পায় সে বিষয় পরামর্শ দিলেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বেতনভুক্ত হিসেবেই নিয়োগ দেয়া হয় বেশি।
আমদানি-রফতানি নিয়ে যদি আপনার অভিজ্ঞতা থাকে অথবা মূল বিষয়গুলো জানা থাকে তাহলে আপনি ওয়ার্কশপ বা সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। যারা নতুন বাড়ি নির্মাণ করছে তাদেরকে আভ্যন্তরীণ সজ্জা বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে সবার আগে গ্রাহকের রুচি এবং বাসা ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনের বিষয়ে আপনাকে ধারণা নিতে হবে। আবার চাইলে নিজেই গৃহ ব্যবস্থাপনা পরামর্শ কিংবা গৃহ ব্যবস্থাপনার কাজ করতে পারেন অথবা কর্মী দিয়ে গৃহ ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। দিন দিন কিন্তু এ পেশারও চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবাই চান ঘরটা সুন্দরভাবে গোছানো থাকুক।
এখন তো বাংলায় ব্লগ লিখেও ইনকাম করা যায়, যেমনঃ টেকমাস্টারব্লগেই অনুবাদক হিসেবে কাজের সুযোগ আছে।
অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল সহকারী হিসেবে কাজের চাহিদাটা এখন বেড়েছে। ঘণ্টাপ্রতি আয়ও বেশি। বাড়ি থেকে করপোরেট অফিসের নানা কাজ অনলাইনে করে দেয়ার সুবিধা আছে এখন। ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মী বা নিজের ব্যবসা নিজেই চালানো যায়। বিভিন্ন দক্ষতার ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ফোন কল, ই-মেইল যোগাযোগ, ইন্টারনাল রিসার্চ, ডেটা এন্ট্রি, এডিটিং, রাইটিং, ব্লগ, গ্রাফিকস, টেক সাপোর্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনার মতো কাজ থাকে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মধ্যে যেমন কোনো সংস্থার নিজস্ব সংবাদ সংকলন, ফ্লায়ার, ম্যাগাজিন, ইনফরমেশন শিট, চিঠি অথবা বিজ্ঞপ্তি তৈরিতে গ্রাফিক ডিজাইনারের প্রয়োজন পড়ে। বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং অনলাইন বিজ্ঞপ্তির জন্যেও গ্রাফিক ডিজাইনার প্রয়োজন।
অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই কাজ করতে পারেন। অনুবাদ করে যেভাবে আয় করবেন, ইংরেজির পাশাপাশি অন্য কোনো ভাষা ভালোভাবে জানা থাকলে সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিভিন্ন ডকুমেন্ট অনুবাদ করে আয় করতে পারেন। সংবাদ সংকলন, ফ্লায়ার, ম্যাগাজিন, ইনফরমেশন শিট, চিঠি অথবা বিজ্ঞপ্তি। যেমন স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবি, জার্মানসহ অন্যান্য ভাষা জানা আছে এবং এগুলো থেকে বাংলা অথবা ইংরেজিতে অনুবাদ বা ইংরেজি থেকে এসব ভাষায় অনুবাদ করতে পারলেও কিন্তু ভালো আয় করা যায়। অনেক সময় কাজদাতারা নিজে সময়ের অভাবে অনুবাদের কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়ে নেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে এ ধরনের কাজ পাবেন।
৩. ফ্রিল্যান্সিং ও ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানার
অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং ও ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানার কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ দেয় কয়েকটি ওয়েবসাইট। সেখানে অ্যাকাউন্ট খুলে দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হয়। কাজদাতা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করে ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দেয়।
কয়েকটি ওয়েবাসাইটে কাজের দক্ষতার বিবরণ জানাতে হয়, যাতে ক্রেতা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সাইটের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। ঘণ্টায় ডলার হিসেবে আয় করা যায়। মনে রাখতে হবে, কাজ শেষ করার পর কাজদাতার অনুমোদন পেলে তবেই অর্থ ছাড় দেবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কাজের মানের ওপর কাজদাতা রেটিং দিতে পারেন। গ্রাহকের পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে দিতে হয় ফ্রিল্যান্সারকে। ইদানিং অনেক প্রতিষ্ঠানই সিএফপি (সার্টিফাইড ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানার) রাখে। এ পেশা শুরু করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে সিএফপি হিসেবে নিবন্ধন করে নিতে হবে। এই নিবন্ধনটি আপনার অভিজ্ঞতা ও পারদর্শীতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। আর এসব কাজে আপনার পেমেন্ট পাবেন বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে।
৪. ওয়েবসাইট বিজনেস
এখন নিজের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অনলাইনেই অনেক উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে ডোমেইন নির্বাচন, টেমপ্লেট ও ওয়েবসাইট তৈরির নকশা প্রভৃতি। যখন পাঠক বা দর্শককে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কনটেন্ট আগ্রহী করতে পারবেন এবং পাঠক বা দর্শক বাড়বে তখন গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। গুগলের বিজ্ঞাপন যখন সাইটে দেখানো শুরু হবে এবং তাতে ক্লিক পড়বে, তখন আয় আসতে শুরু করবে। ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা দর্শক যত বেশি হবে, আয়ের পরিমাণ তত বাড়বে। আবার অন্যের জন্য ওয়েব সাইট তৈরি করে বিক্রিও করতে পারবেন। এ ছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতেও নিজের ওয়েবসাইট খুলে সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনার দিয়ে ডিজাইনের ছোট ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরিতে এখন কোডিং আর ওয়েব ডিজাইন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক ও কাজের ওপর ভিত্তি করে ওয়েব বিজনেস এ আয় ক্রমাগত বাড়তে থাকে। (বাকি লেখা ২য় পর্বে)
onk sundor ekta blog
onk valo valo kotha lekhechen
thank you