রেডমি কে৩০ কেন কিনবোই! [ইউজার রিভিউ]
রেডমি কে৩০ যেটি অনেকেই ( ইন্ডিয়াতে পোকো এক্স ২ )নামে চিনে, শাওমির সাব ব্র্যান্ড রেডমির এ সময়ের সেরা ডিমান্ডিং ডিভাইস। স্মার্টফোনটি ১ মাস চালানর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন টেকপ্রেমী জাহিদ হাসান।
১ মাস ১০ দিন ইউজ করার পর K30 নিয়ে একটি রিভিউ দিচ্ছি। যারা এই ফোন টা নিয়ে ইন্টারেস্টেড, কিংবা কিনতে চান, তাদের জন্য।
ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে আমি এই ফোন কিনি। আমার ফোন টা চাইনিজ রম। ৮ জিবি র্যাম / ১২৮ জিবি রম ভ্যারিয়্যান্ট।
চাইনিজ রম এ সব চলেনা?
প্রথমেই চাইনিজ রম সম্পর্কে বলি। অনেকের ই আশংকা আছে, চাইনিজ রম এ অনেক কিছু চলে না, এপ গুলা ঝামেলা করে, সাপোর্ট করে না, পাঠাও উবার বিকাশ এ প্রবলেম।
আসলে সত্য কথা হচ্ছে এই গুলা চালাতে কোনো প্রবলেম আপনার ফেইস করতে হবে না। সব ঠিক ঠাক ভাবেই চলবে।
তবে যেহেতু চাইনিজ রম, তাই গুগল প্লে স্টোর টা থাকবে না। সেইটা আপনি ফোনে ইনস্টল করা Mi App Store থেকেই নামিয়ে নিতে পারবেন।
গুগল এর যাবতীয় সার্ভিস অন করে নিতে হবে কাস্টমাইজড ওয়েতে। এর পর প্লে স্টোর থেকে নামানো এপ গুলোর পার্মিশন অন করে দিতে হবে। তাহলেই আর ঝামেলা করবে না আশা করি। এই কাজ গুলো তেমন কোন পেরার কাজ না। আপনি নিজেই পারবেন। ৫ মিনিটের ব্যাপার। তাই বলা যায় চাইনিজ রম হবার কারণে ভয়ের কিছু নাই। ইউজ করতে পারবেন বিন্দাস।
পারফর্মেন্স ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স
এইবার আসি পার্ফমেন্স ও ইউজার এক্সপিরিয়ান্স নিয়ে মতামত। এই ১ মাস ১০ দিন ইউজ এর মাঝে আমি এক ফোটা ল্যাগ কিংবা সমস্যা ফেইস করি নাই। খুব স্মুথ আর সিম্পল ভাবেই ফোন টা ইউজ করতে পারবেন। ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট এ যখন আপনি ফোন চালাবেন, তখন আপনি ই বুঝবেন স্মুথনেস কত প্রকার ও কি কি। যদিও এই টা আই পি এস ডিসপ্লে, এমোলেড নয়। কিন্তু আই পি এস হওয়ার কারণে এইটা আপনাকে নিরাশ করবে না এত টুকু বলতে পারি। ভাইভ্র্যান্ট কালার রিপ্রোডাকশন আর কাট টু কাট ভ্যাজেল হওয়ার কারণে মাল্টিমিডিয়া এক্সপিরিয়ান্স রিয়ালিস্টিক লাগে একদম। আপনি ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট ইউজ করে যখন প্রশান্তি টা পাবেন, তখন হয়তো মনেই পড়বে না যে এইটা এমোলেড না।
ব্যাটারী ড্রেইন:
তবে একটা ব্যাপার অনেক রিভিউ তে বার বার বড়সড় করে বলছে যে ১২০ হার্টজ এ চালালে খুব তারাতারি ব্যাটারি ড্রেইন হয়। এই কথা টা পুরা পুরি ঠিক না। ব্যাটারি কনসাম্পশন তুলনা মূলক বেশী হবে ঠিক ই, তবে যেই ব্যাকাপ পাবেন, সেইটা নিতান্তই কম না আমি মনে করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেটে যাবে নরমাল ইউসেজ এ। আর একটানা হেভি ইউসেজ বা হাই গ্রাফিক্স এর গেইম খেললে ৬-৭ ঘণ্টা ব্যাকাপ পাবেন। অন্যথায় আপনি ৬০ হার্টজ এ যদি ইউজ করেন, নরমাল ইউসেজ এ পুরা দিন ব্যাকাপ আর হেভি ইউসেজ/গেমিং এ ৭-৮ ঘণ্টা ব্যাকাপ পাবেন। তাই খুব বেশী ব্যাটারি ড্রেইনিং এর সমস্যায় পড়বেন না আশা করি।
ক্যামেরা:
এর পর আসি ক্যামেরায়। ক্যামেরা তে সনির সেন্সর থাকার কারণে কালার রি প্রোডাকশন আর শার্পনেস যথেষ্ট ভাল। আমি পার্সোনালি সনি সেন্সর টা রিকমেন্ড করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্যাচুরেটেড কালার নাও আসতে পারে, তবে ন্যাচারাল কালার আসে। বিশেষ করে, এর শার্পনেস আমাকে মুগ্ধ করেছে। খুব মারাত্মক ডিটেইলে পিক তুলে। আমি মনে করি এই বাজেটে যথেষ্ট ভাল ক্যামেরা। তবে বেস্ট না। গুগল ক্যামেরা ইউজ করলে আরো ভাল রেজাল্ট পাবেন। সেলফি ক্যামেরা টাও ভালই। তবে এইজ ডিটেকশন এ একটু ঝামেলা করে মাঝে মাঝে। বাট ভাল লাইট পেলে চোখাম মার্কা পিক পাবেন। এর ম্যাক্রো লেন্স টা যাস্ট মাথা নষ্ট। আমি ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। এর ছবি গুলা যথেষ্ট শার্প আর ক্লিন।
৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ছবি গুলো ভাল লাইট পেলে কাপানো ছবি তোলে। পোট্রেইট মোড টাও ভাল ভাবেই ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে সাবজেক্ট ঠিক রেখে। সামনের ক্যামেরায় ডেপথ সেন্সর থাকায় সামনের ব্লার টা অসাম হয়। তবে, রাতের ছবি গুলো আমার কাছে মোটামুটি ভাল লেগেছে। আহামরি নয়। কিন্তু গুগল ক্যামেরা দিয়ে নাইট মোড ইউজ করে মাঝে মাঝে খুব সুন্দর পিক আসছিলো। ভিডিও কোয়ালিটি আর স্ট্যাবিলিটি যাস্ট তুখোড়। সত্য বলতে অনেক ভাল লেগেছে এই জিনিষ টা। আর এর ভ্লগ মোড টা যাস্ট জোস জিনিষ।
ডিজাইন:
ডিজাইন নিয়ে আসলে আমার এক্সট্রা করে কিছু বলার নাই। সবাই ডিজাইন দেখেছেন বিভিন্ন ভিডিও তে। এইটা যার যার নিজস্ব চাহিদা। এর ডিজাইন কারো কাছে ভাল, কারো কাছে খারাপ লাগতে পারে। পক্ষপাতীত্ব না করে বললে আমি বলব, শাওমি এই ফোনে একটু প্রিমিয়াম কাট দেবার চেষ্টা করেছে। আমার কাছে মোটামুটি খারাপ লাগে নি। প্রিমিয়াম একটা ভাব আছে অবশ্যই। আর লক বাটনের ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর যথেষ্ট ফাস্ট ও রেস্পনসিভ। পসিশন ঠিক ঠাক। তবে পকেটে ঢুকাইতে আর বের করতে গেলে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবেই আংগুল ফিংগারপ্রিন্টে চলে যায় আর ডিভাইস আনলক হয়ে যায়। এইটা একটু বিরক্তিকর। তবে এইটা খুব বড় সমস্যা না যদিও। যাই হোক,এর পর আসি ক্যামেরা ডিজাইন টায়। গোল ডিজাইন টা দেখলে মনে হয় ফুলে আছে কিছু। আসলে পুরাটাই ফ্ল্যাট সার্ফেস। ওইটা যাস্ট ডিজাইন। তবে ক্যামেরা বাম্প টা বেশী মোটা। যার কারণে ফ্ল্যাট সার্ফেসে রাখলে ক্যামেরা গ্লাস এ ময়লা কিংবা দাগ পড়ার পসিবিলিটি আছে। তাই ক্যামেরা গ্লাস ইউজ করা ভালো। আর ফোন গরিলা গ্লাস হলেও এক্সটার্নাল স্ক্রিন টেম্পার্ড গ্লাস ইউজ করার পরামর্শ রইল। ফোন টা ২০৭ গ্রাম। একটু হেভি অবশ্যই। বাট ইউজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে যাবে আশা করি।
পাংচুয়াল ডিসপ্লে টা এখন নতুন। খুব বেশী মডেলে নাই। তবে জিনিষ টা আমার কাছে পার্সোনালি খারাপ লাগে নাই।ক্যামেরা কাট আউটের কারণে অন স্ক্রিন এক্সপিরিয়ান্স এ কোনো সমস্যা বোধ হবে না আশা করি।
গেমিং:
এর গেমিং পার্ফমেন্স নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। ৭৩০জি প্রসেসর টা গেমিং প্রসেসর। সুন্দর ভাবেই হ্যান্ডেল করে গেইম গুলা। ফ্রেম ড্রপ বা ল্যাগ পাই নাই। পাবজি, এসফাল্ট সহ অনেক গেইম খেলেছি। হিটিং ইস্যু আছে তবে খুব বেশী না। অন্যন্য ফোনের তুলনায় এর হিটিং টা খুবই নগন্য। কারণ এতে লিকুইড কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে যার কারণে ফোন খুব গরম হয় না। পাবজি অনেক সময় ধরে খেললে হালকা গরম হয়। তবে ঠান্ডা হয়ে যায় খুব জলদি। ১২০ এফ পি এস সাপোর্টেড গেইম গুলা ১০০ এফ পি এস পর্যন্ত পেয়েছি আমি হাইয়েস্ট।
ফাস্ট চার্জ
পোকো এক্স২ তে ২৭ওয়াট ফাস্ট চার্জ স্পিড ভাল। আমি এখন পর্যন্ত ০% করা লাগে নাই একবারো। ৫% পর্যন্ত আসছিল লাস্ট। ফুল চার্জ হতে ৬০-৭০ মিনিট টাইম নেয়।
স্পিকার ও সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো। দামী হেডফোন বা ইয়ারফোন ইউজ করে মজা পাবেন। Hi-res Audio Supported রয়েছে এতে।
এই হচ্ছে ফোন টি নিয়ে আমার মোটামুটি রিভিউ। মোটামুটি আমার দিক থেকে Honest review দেয়ার চেষ্টা করলাম। আমার এক্সপিরিয়ান্স টা যাস্ট আমি শেয়ার করলাম যেন নিউ ইউজার কিংবা বায়ার দের সুবিধা হয়। এগুলো ছাড়াও কোনো কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করতে পারেন, আন্সার দেবার চেষ্টা করব।
ফোন টা কিনবেন কি না?!
My recommendation – কিনতে পারেন। আমি ইউজ করে স্যাটিসফাইড। তবে নানা জনের নানা মত ভিন্নতা রয়েছে। এইটা শুধুই আমার রিকমেন্ডেশন। বাকী টা আপনার ইচ্ছা।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
Vai 60 hrz normal use korle to 1 diner besi backup pawar kotha.