অ্যান্ড্রয়েডমোবাইল-ম্যানিয়া

এন্ড্রয়েড খুটিনাটিঃ পর্ব-১ এন্ড্রয়েড কি? এর প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস

এন্ড্রয়েড বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়  স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম। মোবাইলের জগতে এখন সবচেয়ে বেশি রাজত্ব করছে এন্ড্রয়েড চালিত ডিভাইসগুলো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এন্ড্রয়েড কি? এর প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস নিয়েই আজকে টেকপ্রেমী তুসিন আহমেদ টেকমাষ্টারব্লগ এর জন্য লিখছেন…

যেখানে টানা ১২ বছর বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানে নকিয়ার পিছনে ফেলতে সক্ষম হয় স্যামসাং, এই এন্ড্রয়েড এর জনপ্রিয়তাম কারনে। এন্ড্রয়েড এর বর্তমান ভার্শন সর্বশেষ জেলীবিন।পরবর্তীতে আসছে “কি লাইম পাই”।

AndroidWallpaper

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কি এই এন্ড্রয়েড?

এই লিখাটি যারা পড়ছেন তারা হয়ত সবাই জানেন আসলে কি  এই এন্ড্রয়েড।চলুন এরপর ও দেখি এই প্রশ্নের উওরটি।

এন্ড্রয়েড কি?

imagesএন্ড্রয়েড(ইংরেজি: Android) হল মোবাইলের জন্য কিছু সফটওয়্যারের সম্মিলন যেটাতে অপারেটিং সিস্টেম, মিডলওয়্যার এবং এপ্লিকেশনগুলো থাকে।গুগল ইনকর্পোরেটের প্রাথমিক ডেভেলপারদের (এন্ড্রয়েড ইনকর্পোরেট) কিনে নেয় ২০০৫ সালে। এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কারনেলের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে। গুগল এবং অন্যান্য মুক্ত হ্যান্ডসেট এল্যায়েন্সের সদস্যরা এন্ড্রয়েডের উন্নয়ন এবং বাজারে উন্মুক্ত করা নিয়ন্ত্রন করে। এন্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট’টি (এওএসপি) এন্ড্রয়েডের রক্ষনাবেক্ষন এবং ভবিষ্য উন্নয়নের কাজ করে থাকে। এন্ড্রয়েড হল বিশ্বের শীর্ষ বিক্রিত স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম।

এন্ড্রয়েডের অনেক উন্নয়নকারী আছে যারা এর জন্য বিভিন্ন এপ্লিকশন তৈরী করে থাকে এতে করে এই অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রায় ২০০,০০০ সংখ্যক এপ্লিকশনের উপরে বাজারে এন্ড্রয়েডের এপ্লিকেশন রয়েছে। এন্ড্রয়েড মার্কেট একটি এপ্লিকশন বাজার যেটা গুগল চালায়, যদিও এপ্লিকেশনগুলো বাইরের কোন থার্ড পার্টি সাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়। উন্নয়নকারীরা প্রাথমিকভাবে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে লিখে থাকে, যেটা গুগল জাভা লাইব্রেরি দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা হয়।

ওপেন হ্যান্ডসেট এল্যায়েন্সের শুরু সাথে সাথে এন্ড্রয়েডের বিতরন উন্মুক্ত করা হয় ৫ই নভেম্বর ২০০৭ সালে যেখানে ৮০টি হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং টেলিকম কোম্পানী ছিল। তাদের সকলের উদ্দেশ্য ছিল মুক্ত আদর্শ মোবাইল প্লাটফর্ম তৈরী করা। গুগল এন্ড্রয়েডের বেশিরভাগ কোড ছাড়ে এপ্যাচি এবং মুক্ত উৎসের লাইসেন্সের আওতায়।

এন্ড্রয়েডের সফটওয়্যারটি জাভা এপ্লিকেশনের সমন্বয়ে গঠিত যা জাভার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা, এটি ডেলভিক ভার্চুয়াল মেশিনে (জেআইটি কম্পাইলেশন ব্যবহার করে) জাভা কোর লাইব্রেরীতে চলে। লাইব্রেরীটি প্রোগ্রামিং ভাষা সি’তে লিখা যাতে আছে সারফেস ম্যানেজার, ওপেন কোর[২০] মিডিয়া ফ্রেমওর্য়াক, এসকিউলিট রিলেশনাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ওপেনজিএল ইএস ২.০ ৩য় মাত্রার গ্রাফিক্স এপিআই, ওয়েবকিট লেআউট ইন্জিন, এসজিএল গ্রাফিক্স ইন্জিন, এসএসএল এবং বাইওনিক লিবক। এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি (যাতে লিনাক্স কারনেলও আছে) প্রায় ১২ মিলিয়ন কোডিং লাইনের সমন্বয়ে তৈরী যাতে আছে প্রায় ৩ মিলিয়ন এক্সএমএল লাইন, প্রায় ২.৮ মিলিয়ন সি (প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ) লাইন, ২.১ মিলিয়ন জাভা লাইন, ১.৭৫ মিলিয়ন সি++ (প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ) লাইন।

প্রতিষ্ঠা

এন্ড্রয়েড ইনকর্পোরেট প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পালো আল্টো, ক্যালিফোর্নিয়ায় ২০০৩ সালের অক্টোবরে। এটার প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি রুবিন (ডেন্জারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা),

ছবি : এন্ডি রুবিন
ছবি : এন্ডি রুবিন

রিচ মাইনার (ওয়াইল্ডফায়ার কমউনিকেশনস, ইনকর্পোরেটেডের সহ প্রতিষ্ঠাতা), নিক সিয়ারস (টি-মোবাইলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট) এবং ক্রিস হোয়াইট (ওয়েবটিভি’র ডিজাইন এবং ইন্টারফেস প্রধান)।

যেহেতু তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন তাই এন্ড্রয়েড প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যক্রম চালাত অনেকটা লুকিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে এটা বলা হত যে তারা শুধু মোবাইলের একটি সফটওয়্যারের কাজ করছে।

গুগল এবং এন্ড্রয়েড

২০০৫ সালের আগষ্ট মাসে গুগল এন্ড্রয়েড কিনে নেয় এবং এটাকে এবং এর অধীনস্থদের (এন্ডি রুবিন, রিচ মাইনার এবং ক্রিস হোয়াইট) গুগল ইনকর্পোরেটের সহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কেনার সময় এন্ড্রয়েড সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি বিস্তারিত, কিন্তু অনেকেই ধারনা করেছিল যে গুগল মোবাইল বাজারে আসতে যাচ্ছে।

উন্নয়ন

গুগলে, রুবিন দ্বারা পরিচালিত দল মোবাইলের প্লাটফর্ম হিসেবে লিনাক্স কারনেল উন্নয়ন করে। গুগল এই প্লাটফর্মকে বাজার ছাড়ে হ্যান্ডসেট এবং মোবাইল সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শর্ত হিসেবে বলে যে তারা এর আপডেট বা উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে। গুগল কিছু হার্ডওয়্যার উপাদান এবং সফটওয়্যার অংশীদারের কথা উল্লেখ্য করে যা অনেক ক্ষেত্রে মুক্ত এবং এমনকি তাদের অংশেও।

গুগলের কার্যক্রম দেখে অনেকেই মনে মনে ভাবতে শুরু করে গুগল মোবাইল যোগাযোগ বাজারে প্রবেশ করবে (২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে)।

 

বিবিসি এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল উল্লেখ্য করে গুগল তাদের সার্চ ইন্জিন এবং এপ্লিকেশন মোবাইল ফোনে চালাতে চায় এবং তারা তা করার জন্য কাজ করছে। অনলাইন এবং কাগজে গুজব ছড়াতে থাকে যে গুগল তাদের নিজস্ব ব্যান্ডের হ্যান্ডসেট তৈরী করছে। কেউ কেউ মতামত দেয় যে যেহেতু গুগল কারিগরী দিকগুলোর কথা বলছে সেহেতু এটা মোবাইল ফোনের নমুনা উৎপাদক এবং নেটওর্য়াক অপারেটরদের দেখাচ্ছে।

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে, ইনফরমেশন উইক প্রকাশ করে যে গুগল কিছু মোবাইল এপ্লিকেশনকে প্যাটেন্ট করে নিয়েছে।

ওপেন হ্যান্ডসেট এল্যায়েন্স

৫ই নভেম্বর, ২০০৭ সালে ওপেন হ্যান্ডসেট এল্যায়েন্স সূচনা করে যাতে ছিল ব্রডকম কর্পোরেশন, গুগল, এইচটিসি, ইন্টেল, এলজি, মার্ভেল টেকনোলজি গ্রুপ, মটোরোলা, এনভিডিয়া, কোয়ালকম, স্যামস্যাঙ ইলেক্ট্রনিকস, স্প্রিন্ট নেক্সটেল, টি-মোবাইল এবং টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট। ওপেন হ্যান্ডসেট এল্যায়েন্সের উদ্দেশ্য হল মুক্ত ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট প্লাটফর্ম তৈরী করা। একই দিনে, ওপেন হ্যান্ডসেট এল্যায়েন্স তাদের প্রথম পন্য এন্ড্রয়েড ছাড়ে যা লিনাক্স কারনেল ২.৬ এর উপর ভিত্তি করে তৈরী।

৯ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে, আরো ১৪ নতুন সদস্য যোগ দেয় যাতে ছিল এআরএম হোল্ডিংস, এথিরস কমিউনিকেশনস, আসুসটেক কম্পিউটার ইনকর্পোরেট, জারমিন লিমিটেড, হাওয়াই টেকনোলজিস, প্যাকেটভিডিও, সফটব্যাংক, সনি এরিকসন, তোসিবা কর্পোরেশন এবং ভোডাফোন গ্রুপ।

লাইসেন্স

এন্ড্রয়েড পাওয়া যেত ওপেন সোর্স লাইসেন্সের আওতায় ২১শে অক্টোবর ২০০৮ সাল পযর্ন্ত। এরপর গুগল তাদের পুরো সোর্স কোড ছাড়ে এপ্যাচি লাইসেন্সের আওতায় । গুগল তাদের প্রকাশিত কোডগুলোকে উন্মুক্ত করে সবার দেখার এবং মন্তব্য করার সুযোগ দেয়।

যদিও সফওয়্যারটি উন্মুক্ত, তবুও মোবাইল প্রস্ততকারকরা এন্ড্রয়েড ব্যবহার করতে পারবে না কারণ গুগলের ট্রেডমার্ক করা অপারেটিং সিস্টেমের কপি গুগল সার্টিফিকেট প্রদান করার আগ পযর্ন্ত কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।

One thought on “এন্ড্রয়েড খুটিনাটিঃ পর্ব-১ এন্ড্রয়েড কি? এর প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস

  • অনেক ধন্যবাদ
    সুন্দর পোষ্ট অনেক তথ্য সমৃদ্ধ করে লেখার জন্যে …

    Reply

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।