দক্ষিণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গোলযোগ! ১০০ কি.মি. ফাইবার কাটা
ঢাকার দক্ষিন ও উত্তরের মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী চলছে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ইন্টারনেট সংযোগের তার অপসরণের কাজ। আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবলিং ব্যবস্থা না করেই রাজধানী জুড়ে যত্র-তত্র কাটা হচ্ছে ইন্টারনেটের ক্যাবল।বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনে ঝুলন্ত তার অপসারণ অভিযান নিয়ে চলছে ইদুর-বিড়াল খেলা। অভিযানে ইতোমধ্যেই ওই অঞ্চলে কাটা পড়েছে ১০০ কিলোমিটারের মতো ফাইবার ক্যাবল, যার ক্ষতির পরিমান হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঝুলন্ত সকল লাইন সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে, ঘোষণা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে অক্টোবর থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে প্রায় ১০ লাখ গ্রাহকের।
গত একমাস ধরে ইন্টারনেটের নিয়মিত সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হয়েছেন দক্ষিণ সিটির প্রায় ১০ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহক। নিয়মিত মূল্য পরিশোধ করেও হঠাৎ হঠাৎ ৬-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন অথবা খুরিয়ে খুরিয়ে ব্যাকআপ লাইনে চলছে দক্ষিণ সিটির ওয়ারি, মুগদা, মগবাজার, বাংলামটর, ধানমন্ডি, মোহাম্মাদপুর, পান্থপথ, লালবাগ, পুরান ঢাকা,মতিঝিল, পল্টন ও হাতিরপুলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের।
এদের মধ্যে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে আউটসোর্সিং করা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী মুক্তপেশাজীবি, ই-কমার্সের ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবিরাও নিয়মিত সেবা প্রদানে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিদিন যার ফলে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা!
ফ্রিল্যান্সার আসিফ বলেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ঘন ঘন যাওয়া আসার কারণে তিনি সময় মতো ক্লায়েন্টের সার্ভিস ডেলিভারি দিতে পারছেন না। এই কারণে তারা অর্ডার কেনসেলের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ই-কমার্স ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন ইন্টারনেটের ঘন ঘন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে তিনি তার গ্রাহকদের সময় মতো সেবা দিতে পাচ্ছেন না।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশিকুর ইসলাম টেকমাস্টারব্লগকে জানান, ইন্টারনেট পরিসেবায় বিগ্ন ঘটায় গুগল ক্লাশরুমে অনেক সময় ক্লাশ লেকচারের ভিডিও ও শব্দ স্পট দেখা ও শোনা যাচ্ছে না ।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবি বলেন ঘন ঘন ইন্টারনেট ক্যাবল কাটা পড়ার কারণে তিনি তার অফিসের গুরুত্ব পূর্ণ মিটিং সমূহে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। এমতাবস্থায় করোনা কালীন এই মহামারীতে তিনি তার চাকুরী হারানোর শঙ্কায় আছেন।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আবার তা প্রতিস্থাপনও করা হচ্ছে নিয়মিত। এ যেন নদীর ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। আর এই খেলায় ইতোমধ্যেই গচ্চা গিয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্যাবল।
অপরদিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক এনটিটিএন সেবা (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল লাইন) বা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড সলিউশন’না থাকায় লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটিতে ওভারহেড ক্যাবেলই এখনো তাদের শেষ ভরসা। গ্রহাককে সংযুক্ত রাখতে হিমশিম তারা। সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে না পারায় গ্রাহকের সঙ্গে ক্রমেই সম্পর্কের অবনতি ঘটছে এই ইন্টারনেট সেবাদাতাদের। ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবাদাতা সাড়ে ৪০০ ব্যবসায়ীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ব্যবসায়ীই এখন ব্যবসায় হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারি মিলেনিয়াম কম্পিউটারের সত্ত্বাঅধিকারী আসিফ চৌধুরী বলেন সিটি কর্পোরেশনের ঘন ঘন ঝুলন্ত তার অপসারণের কারণে তার প্রতিষ্ঠান আজ মারাত্মক ভাবে হুমির মুখে পতিত হয়েছে। তিনি আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। দ্রুত কেবল কাটা বন্ধ না হলে অচিরে তিনি ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবেন।
এমন পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই ওভারহেড ক্যাবল ও এলডিপি (আন্ডারগ্রাউন্ড লোকাল ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট) ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হয় ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। তবে দফায় দফায় বৈঠকের পরও স্থায়ী কোনো সমাধান না হওয়ায় থেমে নেই ক্যাবল বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান।
আইএসপিএবি পরিচালক নাজমুল করিম ভূঁঞা বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া, সিটি কর্পোরেশন ইন্টারনেটের ঝুলন্ত তার অপসারণ করে জনগণের ভোগান্তি ছাড়া অন্য কিছু দিতে পারবেন না।
সব মিলিয়ে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের আওাতাভুক্ত এলাকাগুলোর ডিজিটাল বাংলাদেশের ষষ্ঠ মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচিত ‘ইন্টারনেট অধিকার’ এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
তথ্যসূত্র-DT, AJkerkhobor, ডিজিবাংলা