তাহারেই খুজে বেড়াইঃ একজন স্টিভ জবসের আদি-অন্ত
৫ ই অক্টোবর ২০১১ অনেক রাত পর্যন্ত(৩.২০) জেগে থাকায় সকালে ঘুমে থেকে উঠতে স্বভাবতই দেরী হবার কথা ছিলো যদিও উঠেছিলাম একটু সকালা সকালই(৫.৪৫-৬.০০)। অবশ্য এর একটা কারনও আছে। পরীক্ষা শেষ করে মামা বাড়িতে বেড়াতে আসা আমার দুই ভাগীনারা সকাল হতে না হতেই আমার পিঠে চড়ে শুরু করে দিবে গেমস গেমস…. ভাইসসিটি গেমস খেলবো বলে :P। ঘুম ঘুম চোখেই তাদের পিসি ওপেন করে দিই, যেখানে আমি নিজের মাথা ধরার কারনে আগের মত আর নেশা করে গেমস খেলতে পারিনা । তো ওদের গেমস ওপেন করে দেবার আগে ফেসবুকে ডু মারলাম যেখানে হোম্পেইজের মার্ক জুকারবার্গের ষ্ট্যাটাস দেখেই আমি কিছুটা অবাক হলাম।
Steve, thank you for being a mentor and a friend. Thanks for showing that what you build can change the world. I will miss you.
ফেসবুকের তৎকালীন নতুন ফিচার এর কারনেরি মূলত মার্কের সেই ষ্ট্যাটাসটি পড়তে পেরেছিলাম যার জন্য ফেবুকে ধন্যবাদ দিতে কার্পন্য করবোনা । যাইহোক মার্কের ষ্ট্যাটাস বুঝতে না পাওরলেও পরপরই বন্ধিদের ষ্ট্যাটাস দেখে বুঝতে বাকী রইলোনা যে এপলের প্রতিষ্ঠাতা জবস আর নেই :’( তৎক্ষণাৎ গেলাম এপলের ওয়েবসাইটে যেখানে গিয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম। আসলেই বিশ্বাস হচ্ছিলা না, ভাবলাম হয়তো আজকে কি এপ্রিল ফুল কিনা কিংবা আইফোন ৫ এর কোন প্রচারনারই অংশবিশেষ কিনা। যাইহোক ভাগিনাদের গেমস খেলতে দিয়ে আমি পিসি থেকে সরে আসলেও মাথায় ব্যাপারটা ঠিকি ঘুরপাক খাচ্ছিলো। এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন সাইট থেকেক জানতে শুরু করলাম তখন খারাপ লাগাটা আরো একটু বাড়তে লাগলো….মনে হল যেন আপন কাউকে হারালাম…. যাইহোক এতক্ষন শুনালাম আমার নিজের অনুভূতিগুলো এবার চলুন ষ্টিভ সম্বন্দে নানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
উল্লেখ্য এখানকার ইনফো গুলো সবই সংগৃহীত যার মূল উৎস পোষ্টের শেষে দেওয়া হয়েছে। তাই কেউ যেন মামলা করে বসেবেন্না যেন 😛 ।
প্রথমে যেকোন কিছু জানার জন্য আমি বাংলা উইকিপিডিয়া দেখি। সেখানে না পেলে ইংশিল উইকিপিডিয়ার দেখি। বাংলা উইকিপিডিয়ার স্টিভ জবস সম্পকে যা দেখতে পেলাম তা তুলে দিচ্ছি প্রথমে। এটা থেকে একটু হলেও জানা যাবে কে এই ব্যাক্তি………..
স্টিভ জবস (পুরোনাম: স্টিভেন পল জবস) (ইংরেজি ভাষায়: Steven Paul “Steve” Jobs) (জন্ম ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৫৫, মৃত্যু ৫ অক্টোবর ২০১১) যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন-এর সাথে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওস-এরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্যদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে অ্যাপল কম্পিউটার নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে তিনি অ্যাপলে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯৫ সালে টয় স্টোরি নামের অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
আগেই বলে নিচ্ছি লেখাটি কিন্তু অনেক বড়………তাহলে শুরু করি…
স্টীভ এর উৎসাহপ্রবন বক্তিতাটিঃ
এই লেখাটাযে আমি কতবার পড়েছি তার হিসাব নেই। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। বক্তব্যটি অনেক আগের। তবে আমার জীবনে শোনা সবচাইতে মুগ্ধকর আর উৎসাহমূলক বক্তব্য। ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন [youtube=http://www.youtube.com/watch?v=UF8uR6Z6KLc] বক্ত্যবটির বাংলা অনুবাদ… প্রথমেই একটা সত্য কথা বলে নিই। আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করিনি। তাই সমাবর্তন জিনিসটাতেও আমার কখনো কোনো দিন উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এর চেয়ে বড় সত্য কথা হলো, আজকেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাছে থেকে দেখছি আমি। তাই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। কোনো কথার ফুলঝুরি নয় আজ, স্রেফ তিনটা গল্প বলব আমি তোমাদের। এর বাইরে কিছু নয়। আমার প্রথম গল্পটি কিছু বিচ্ছিন্ন বিন্দুকে এক সুতায় বেঁধে ফেলার গল্প।

ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মাথাতেই রিড কলেজে পড়ালেখায় ক্ষ্যান্ত দিই আমি। যদিও এর পরও সেখানে আমি প্রায় দেড় বছর ছিলাম, কিন্তু সেটাকে পড়ালেখা নিয়ে থাকা বলে না। আচ্ছা, কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম? এর শুরু আসলে আমার জন্মেরও আগে। আমার আসল মা ছিলেন একজন অবিবাহিত তরুণী। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে এমন কারও কাছে দত্তক দেবেন, যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে। সিদ্ধান্ত হলো এক আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রী আমাকে দত্তক নেবেন। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে দেখা গেল, ওই দম্পতির কারোরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই, বিশেষ করে আইনজীবী ভদ্রলোক কখনো হাইস্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। আমার মা তো আর কাগজপত্রে সই করতে রাজি হন না। অনেক ঘটনার পর ওই দম্পতি প্রতিজ্ঞা করলেন, তাঁরা আমাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, তখন মায়ের মন একটু গললো। তিনি কাগজে সই করে আমাকে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন। এর ১৭ বছর পরের ঘটনা। তাঁরা আমাকে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বোকার মতো বেছে নিয়েছিলাম এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়, যার পড়ালেখার খরচ প্রায় তোমাদের এই স্ট্যানফোর্ডের সমান। আমার দরিদ্র মা-বাবার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিল। ছয় মাসের মাথাতেই আমি বুঝলাম, এর কোনো মানে হয় না। জীবনে কী করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা এ ব্যাপারে কীভাবে সাহায্য করবে, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। অথচ মা-বাবার সারা জীবনের জমানো সব টাকা এই অর্থহীন পড়ালেখার পেছনে আমি ব্যয় করছিলাম। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মনে হলো যে এবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সিদ্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলেও এখন আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়, এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ডিগ্রির জন্য দরকারী কিন্তু আমার অপছন্দের কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারলাম, কোনো বাধ্যবাধকতা থাকল না, আমি আমার আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে নিতে লাগলাম। পুরো ব্যাপারটিকে কোনোভাবেই রোমান্টিক বলা যাবে না। কারণ তখন আমার কোনো রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমোতাম। ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। এটা আমার খুবই ভালো লাগত। এই ভালো লাগাটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রিড কলেজে সম্ভবত দেশে সেরা ক্যালিগ্রাফি শেখানো হতো সে সময়। ক্যাম্পাসে সাঁটা পোস্টারসহ সবকিছুই করা হতো চমৎকার হাতের লেখা দিয়ে। আমি যেহেতু আর স্বাভাবিক পড়ালেখার মাঝে ছিলাম না, তাই যে কোনো কোর্সই চাইলে নিতে পারতাম। আমি ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। সেরিফ ও স্যান সেরিফের বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমানো-বাড়ানো শিখলাম, ভালো টাইপোগ্রাফি কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখলাম। ব্যাপারটা ছিল সত্যিই দারুণ সুন্দর, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা আর্ট। আমি এর মধ্যেই মজা খুঁজে পেলাম। এ ক্যালিগ্রাফি জিনিসটা কোনো দিন বাস্তবজীবনে আমার কাজে আসবে—এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু ১০ বছর পর আমরা যখন আমাদের প্রথম ম্যাকিনটশ কম্পিউটার (আমরা যাকে ম্যাক বলে চিনি) ডিজাইন করি, তখন এর পুরো ব্যাপারটাই আমার কাজে লাগল। ওটাই ছিল প্রথম কম্পিউটার, যেটায় চমৎকার টাইপোগ্রাফির ব্যবহার ছিল। আমি যদি সেই ক্যালিগ্রাফি কোর্সটা না নিতাম, তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে কখনো নানা রকম অক্ষর (টাইপফেইস) এবং আনুপাতিক দূরত্বের অক্ষর থাকত না। আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাকের এই ফন্ট সরাসরি নকল করেছে, তাই বলা যায়, কোনো কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকত না। আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়তাম, তাহলে আমি কখনোই ওই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হতাম না এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এত সুন্দর ফন্ট থাকত না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এক সুতায় বাঁধা অসম্ভব ছিল, কিন্তু ১০ বছর পর পেছনে তাকালে এটা ছিল খুবই পরিষ্কার একটা বিষয়। আবার তুমি কখনোই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক সুতায় বাঁধতে পারবে না। এটা কেবল পেছনে তাকিয়েই সম্ভব। অতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অর্থবহ জিনিসে পরিণত হবেই। তোমার ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু না কিছু একটার ওপর তোমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। এটা কখনোই আমাকে ব্যর্থ করেনি, বরং উল্টোটা করেছে। আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর গল্প। আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, জীবনের শুরুতেই আমি যা করতে ভালোবাসি, তা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার বয়স যখন ২০, তখন আমি আর ওজ দুজনে মিলে আমাদের বাড়ির গ্যারেজে অ্যাপল কোম্পানি শুরু করেছিলাম। আমরা পরিশ্রম করেছিলাম ফাটাফাটি, তাই তো দুজনের সেই কোম্পানি ১০ বছরের মাথায় চার হাজার কর্মচারীর দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়। আমার বয়স যখন ৩০, তখন আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার ম্যাকিন্টোস বাজারে ছেড়েছি। এর ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। আমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হই। যে কোম্পানির মালিক তুমি নিজে, সেই কোম্পানি থেকে কীভাবে তোমার চাকরি চলে যায়? মজার হলেও আমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছিল। প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল যখন বড় হতে লাগল, তখন কোম্পানিটি ভালোভাবে চালানোর জন্য এমন একজনকে নিয়োগ দিলাম, যে আমার সঙ্গে কাজ করবে। এক বছর ঠিকঠাকমতো কাটলেও এর পর থেকে তার সঙ্গে আমার মতের অমিল হতে শুরু করল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিলে আমি অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হলাম। এবং সেটা ছিল খুব ঢাকঢোল পিটিয়েই। তোমরা বুঝতেই পারছ, ঘটনাটা আমার জন্য কেমন হতাশাজনক ছিল। আমি সারা জীবন যে জিনিসটার পেছনে খেটেছি, সেটাই আর আমার রইল না। সত্যিই এর পরের কয়েক মাস আমি প্রচন্ড দিশেহারা অবস্থায় ছিলাম। আমি ডেভিড প্যাকার্ড ও বব নয়েসের সঙ্গে দেখা করে পুরো ব্যাপারটার জন্য ক্ষমা চাইলাম। আমাকে তখন সবাই চিনত, তাই এই চাপ আমি আর নিতে পারছিলাম না। মনে হতো, ভ্যালি ছেড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম, আমি যা করছিলাম, সেটাই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। চাকরিচ্যুতির কারণে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি। তাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে মনে না হলেও পরে আবিষ্কার করলাম, অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা। আমি অনেকটা নির্ভার হয়ে গেলাম, কোনো চাপ নেই, সফল হওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের কৌশল নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। আমি প্রবেশ করলাম আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে। পরবর্তী পাঁচ বছরে নেক্সট ও পিক্সার নামের দুটো কোম্পানি শুরু করি আমি, আর প্রেমে পড়ি এক অসাধারণ মেয়ের, যাকে পরে বিয়ে করি। পিক্সার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবি টয় স্টোরি তৈরি করি। আর এখন তো পিক্সারকে সবাই চেনে। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও। এরপর ঘটে কিছু চমকপ্রদ ঘটনা। অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে আসি। আর লরেনের সঙ্গে চলতে থাকে আমার চমত্কার সংসার জীবন। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এগুলোর কিছুই ঘটত না, যদি না অ্যাপল থেকে আমি চাকরিচ্যুত হতাম। এটা আমার জন্য খুব বাজে আর তেতো হলেও দরকারি একটা ওষুধ ছিল। কখনো কখনো জীবন তোমাকে ইটপাটকেল মারবে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ো না। আমি নিশ্চিত, যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে, আমি যে কাজটি করছিলাম, সেটাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পেতে হবে, ঠিক যেভাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বের করো। তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সত্যিকারের সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন কাজ করা, যে কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা, এটা একটা অসাধারণ কাজ। আর কোনো কাজ তখনই অসাধারণ মনে হবে, যখন তুমি তোমার কাজটিকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও, তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেয়ো না। তোমার মনই তোমাকে বলে দেবে, যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পাবে। যেকোনো ভালো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতই তুমি করতে থাকবে, সময় যাবে, ততই ভালো লাগবে। সুতরাং খুঁজতে থাকো, যতক্ষণ না ভালোবাসার কাজটি পাচ্ছ। অন্য কোনোখানে নিজেকে স্থায়ী করে ফেলো না। আমার শেষ গল্পটির বিষয় মৃত্যু। আমার বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম—‘তুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবে।’ এ কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা-ই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনই এ প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কয়েক দিন ‘না’ হতো, আমি বুঝতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে। পৃথিবী ছেড়ে আমাকে একদিন চলে যেতে হবে, এ জিনিসটা মাথায় রাখার ব্যাপারটাই জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। কারণ, প্রায় সবকিছুই যেমন, সব অতি প্রত্যাশা, সব গর্ব, সব লাজলজ্জা আর ব্যর্থতার গ্লানি—মৃত্যুর মুখে হঠাৎ করে সব নেই হয়ে যায়, টিকে থাকে শুধু সেটাই, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কিছু হারানোর আছে—আমার জানা মতে, এ চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, সব সময় মনে রাখা যে একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত হয়েই আছ। তাহলে কেন তুমি সেই পথে যাবে না, যে পথে তোমার মন যেতে বলছে তোমাকে? প্রায় এক বছর আগের এক সকালে আমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই আমার। প্রায় নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য এই ক্যানসারের কারণে তাঁরা আমার আয়ু বেঁধে দিলেন তিন থেকে ছয় মাস। উপদেশ দিলেন বাসায় ফিরে যেতে। যেটার সোজাসাপটা মানে দাঁড়ায়, বাসায় গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। এমনভাবে জিনিসটাকে ম্যানেজ করো, যাতে পরিবারের সবার জন্য বিষয়টা যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয়। সারা দিন পর সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলো। তাঁরা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে দিয়ে পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে টিউমার থেকে সুঁই দিয়ে কিছু কোষ নিয়ে এলেন। আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন, তাই কিছুই দেখিনি। কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল, চিকিৎসকেরা যখন এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করলেন, তখন তাঁরা কাঁদতে শুরু করেছিলেন। কারণ, আমার ক্যানসার এখন যে অবস্থায় আছে, তা সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। আমার সেই সার্জারি হয়েছিল এবং দেখতেই পাচ্ছ, এখন আমি সুস্থ। কেউই মরতে চায় না। এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরতে চায় না। কিন্তু মৃত্যুই আমাদের গন্তব্য। এখনো পর্যন্ত কেউ এটা থেকে বাঁচতে পারেনি। এমনই তো হওয়ার কথা। কারণ, মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। এটা জীবনের পরিবর্তনের এজেন্ট। মৃত্যু পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে ‘এসেছে নতুন শিশু’র জন্য জায়গা করে দেয়। এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, কিন্তু খুব বেশি দিন দূরে নয়, যেদিন তোমরা পুরোনো হয়ে যাবে এবং তোমাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আমার অতি নাটুকেপনার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই আসল সত্য। তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ে, অর্থাৎ অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে অন্য কারও জীবনযাপন করে নিজের সময় নষ্ট করো না। যাদের মতবাদে তুমি নিজের জীবন চালাতে চাচ্ছ, তারা কিন্তু অন্যের মতবাদে চলেনি, নিজের মতবাদেই চলেছে। তোমার নিজের ভেতরের কণ্ঠকে অন্যদের শেকলে শৃঙ্খলিত করো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নিজের মন আর ইনটুইশনের মাধ্যমে নিজেকে চালানোর সাহস রাখবে। ওরা যেভাবেই হোক, এরই মধ্যে জেনে ফেলেছে, তুমি আসলে কী হতে চাও। এ ছাড়া আর যা বাকি থাকে, সবই খুব গৌণ ব্যাপার। আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন দি হোল আর্থ ক্যাটালগ নামের অসাধারণ একটা পত্রিকা প্রকাশিত হতো; যেটা কিনা ছিল আমাদের প্রজন্মের বাইবেল। এটা বের করতেন স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামের এক ভদ্রলোক। তিনি তাঁর কবিত্ব দিয়ে পত্রিকাটিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। স্টুয়ার্ট ও তাঁর টিম পত্রিকাটির অনেক সংখ্যা বের করেছিল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আমার বয়স যখন ঠিক তোমাদের বয়সের কাছাকাছি, তখন পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। বিদায়ী সেই সংখ্যার শেষ পাতায় ছিল একটা ভোরের ছবি। তার নিচে লেখা ছিল— ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো । এটা ছিল তাদের বিদায়কালের বার্তা– “ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো”। আমি নিজেও সব সময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আজ তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছেড়ে আরও বড়, নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরও এটা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।
Stay Hungry. Stay Foolish. ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো
তোমাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। — —” কেমন লাগল…………আসুন এবার এই ব্যাক্তিটি সম্পকে একটু জানি……কেমন ছিল তিনি…….কিভাবে কেটেছে ওনার জীবনের অধ্যায় গুলো
একঘেমেয়িতেই ছিলো জবসের সৃজনশীলতাঃ
স্টিভ জবস ছিলেন কলেজ পালানো এক যুবক। তরুণ বয়সে মাদকও নিয়েছেন। ঘরছাড়া সন্ন্যাসী হবার ঝোঁকও ছিলো তার। তিনি ভারতবর্ষ ভ্রমণেও এসেছেন। কিন্তু সবকিছুতেই তার মধ্যে একঘেমেয়ি ছিলো। একথা স্টিভ নিজেই স্বীকার করেছেন। স্টিভের নিজের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে, ‘সাফল স্টিভ জবস একঘেমেয়িতে তৈরি।’
প্রোফাইল:স্টিভ জবস
স্টিভেন পল জবস ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন মিলে ১৯৭০ সালে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি পিক্সার স্টুডিও এবং নেক্সট নামে আরো দুটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। জবস জন্মেছিলেন স্যান ফ্রান্সিস্কোতে। কিন্তু সুখকর ছিলো না তার ছোটোবেলা। জন্মের পরপরই তাকে দত্তক দিয়ে দেয়া হয়। পল ও ক্লারা জবস দম্পত্তি তাকে দত্তক নেন। তার নাম রাখা হয় স্টিভেন পল জবস। সামান্য ভালো খাবারের জন্য তাকে পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু তার প্রকৃত পিতা মাতা ছিলেন জোয়ন ক্যারোল এবং আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি (সিরিয়া থেকে স্নাতোকোত্তর, পরবর্তীতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েছিলেন)।জবস কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুলে এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানিতে লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। যেখানে পরবর্তীতে তিনি গ্রীষ্মকালীন কর্মচারী হিসাবে স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি হাইস্কুল শেষ করেন এবং রিড কলেজে ভর্তি হন। যদিও তিনি পরবর্তীতে কলেজ ছেড়ে দেন তার পরেও তিনি ক্যালিওগ্রাফী সহ আরো কিছু ক্লাশে যোগদান করেছিলেন। এরপরই ১৯৭৬ সালে ওজনিয়াকের সঙ্গে বাড়ির গ্যারেজে প্রতিষ্ঠা করেন ছোট্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। আর তাদের অ্যাপল ১ দিয়েই শুরু হয় যাত্রা। এরপর একে একে স্টিভ জবসের হাত ধরে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তির অনেক পণ্যই। ব্লু জিনস, টার্টলনেক ফুল হাতা কালো টিশার্ট আর কেডস পরিহিত স্টিভ মানেই আইকনিক অ্যাপল আর সাফল্যের প্রতিমূর্তি। তবে, স্টিভের সাফল্য একবারে আসেনি। তাকেও পার হতে হয়েছে চড়াই উৎরাই। ইনটেলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক মিলে যে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাকে নানা চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে, ঘটেছে নানা ঘটনা। কর্পোরেট ক্যু-র মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসকে অ্যাপল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। এরপর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের দায়ে ডুবতে বসেছিলো। কিন্তু ১৯৯৭ সালে স্টিভ জবস আবার ফিরে অ্যাপলকে দাঁড় করান। ২০০১ সালে স্টিভ জবস প্রতিষ্ঠানটির পণ্য পরিকল্পনায় ব্যপক পরিবর্তন আনেন এবং প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করতে শুরু করে। এই সিরিজের প্রথম পণ্য ছিলো গান শোনার যন্ত্র আইপড। এরপর পণ্য তালিকায় যোগ হয় আইফোন। মূলত কম্পিউটারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পণ্যের সাফল্যের সঙ্গেসঙ্গেই শুরু হয় অ্যাপলের জয়যাত্রা। পাশাপাশি স্টিভ জবসের নেতৃত্বেই দূরদর্শী কম্পিউটিং পণ্য হিসেবে যোগ হয় পাওয়ার ম্যাক, আইম্যাক, ম্যাকবুক, এবং সর্বশেষ যোগ হয় বাজার-ছাপানো আইপ্যাড। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যগত কারণে দ্বিতীয় বারের মতো ছুটিতে যান ৫৬ বছর বয়সী স্টিভ। তিনি অর্নিদিষ্ট কালের জন্য ছুটি চেয়েছিলেন। তবে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণেই সংবাদ শিরোনামে এসেছেন তিনি। তিনি আইপ্যাড ২ বাজারে আনার সময় ছুটি ভেঙ্গে চলে এসেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ছুটিতে থাকলেও অ্যাপলের সব খুঁটিনাটিই খেয়াল করতেন। বিশেষজ্ঞরা তার বিষয়ে বলেন, ‘কাজের লোক, যে কিনা কাজ ছাড়া থাকতে পারে না।’ ৫ অক্টোবর অ্যাপলের ওয়েবসাইট তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘অ্যাপলকে পছন্দ বা অপছন্দের তালিকায় ভাগ করা গেলেও স্টিভ একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি একথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার বিষয়ে আসলে আমরা খুব বেশি কিছু জানিও না। তিনি আসলে অলক্ষ্যেই অনেক জীবনে প্রেরণাদায়ী এবং জীবন পরিবর্তনের রূপকার। তার কাজকে বিশ্লেষন করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, উদ্ভাবক, অন্বেষা, অনড় একগুঁয়ে আবার চরম নিয়ন্ত্রনাধীন, দক্ষ প্রসাশক এবং নেতা, শিল্পীর চোখ যার আছে ইঞ্জিনিয়ারিং মস্তিষ্ক, দারুন পারিবারিক এবং ‘ক্ষুধার্ত বোকা’। বিশ্লেষকরা তাকে আরো বলছেন, ‘তিনি বিনোদন তৈরি করেছেন, আনন্দ দিয়েছেন এবং নতুনত্ব এনেছেন। সবচেয়ে বড়ো কথা তিনি নিজের কাজকে ভালোবাসতেন সবচেয়ে বেশি।’
স্টিভ জবসের জীবনের বাঁকগুলোঃ
তারিখএবং সনের হিসেবে কিছু তথ্য ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৫৫ সানফ্রান্সিসকোতে স্টিভ পল জবস জন্ম নেন। ববার নাম আব্দুল ফাতাহ জান্দালি এবং মা জোয়ানি স্কাবেল। অবিবাহিত এ জুটির সন্তান জবসকে দত্তক নেন পল এবং ক্লারা জবস। ১৯৬১ জবস পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ এলাকায় বসবাস শুরু করে। এ স্থানটিই পরে সিলিকন ভ্যালিতে রূপ নিয়েছে। ১৯৬৮ জবস বর্তমান হিউলেট-প্যাকার্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল হিউলেটের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। বিল হিউলেটের সঙ্গে স্পেয়ার পার্টস নিয়ে ফ্রিকোয়েন্সি কাউন্টার তৈরির কাজ শুরু করেন। হিউলেটের কেবল জবসকে পুরোনো যন্ত্রাংশই দেনননি এসময় তিনি এইচপিতে জবসের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাও করেন। ১৯৭০ এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচিত হন আরেক স্টিভ, অর্থাৎ স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে। ২০০৬ সালে স্টিভ ওজনিয়াকের অটোবায়োগ্রাফি ‘আইওজ’তে স্টিভ ওজনিয়াক লিখেছেন ৪ বছরের বয়সের ব্যবধানেও দ্রুতই অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হন দুজন। দুজন মিলেই পরবর্তীতে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ কুপারটিনোর হোমস্টেড হাই স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে ভর্তি হন। এক সেমিস্টার পরেই কলেজ ছেড়ে দেন। সে সময় রিড কলেজ ক্যালিগ্রাফি কোর্সগুলো করাতো। সুযোগে তিনি মূল কোর্স বাদ দিয়ে ক্যালিগ্রাফি পড়েন। এর ফলেই ডেস্কটপ কম্পিউটারে চমৎকার সব ফন্ট যোগ হয়। ১৯৭৬ স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়াইনের সঙ্গ মিলে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছরই ৬৬৬.৬৬ ডলারে অ্যাপল ১ কম্পিউটার বিক্রি শুরু হয়। জুন ৫, ১৯৭৭ প্লাস্টিক কেসে রঙিন মনিটর সমৃদ্ধ অ্যাপল টু বাজারে আসে। ডিসেম্বর ১২, ১৯৮০ সাধারণ মানুষের জন্য পণ্য তৈরি করতে শুরু করে অ্যাপল। জবসের সম্পদ দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়ন ডলার। জানুয়ারী ২৪, ১৯৮৪ ম্যাকিন্টশ বাজারে আসে। এবং সুপার বোল বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু হয়। সেপ্টেম্বর ১২, ১৯৮৫ অ্যাপল সিইও জন স্কালি এবং প্রকৌশলীরা কর্পোরেটর ক্যু শুরু করে। এদিন অ্যাপল চেয়ারম্যান হিসেবে পদত্যাগ করেন জবস। বোর্ড মিটিংয়ে বলেন, ‘আমি অনেক কিছু ভাবছি। এখন আমার পুরো জীবন নিয়ে অ্যাপল থেকে বের হয়ে যাবার সময় হয়েছে। আমাকে এখন কিছু একটা করতে হবে। আমার বয়স ৩০ তো হলো।’ এরপরই জবস নেক্সট কম্পিউটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ফেব্রুয়ারি ৩, ১৯৮৬ লুকাসফিল্ম-এর গ্রাফিক্স গ্রুপ ডিভিশন কিনে নেয় অ্যাপল। এটিই পরে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওতে রূপ নেয়। ১৯৮৮ নেক্সট কম্পিউটার বাজারে আসে। ১৯৯৩ নেক্সট হার্ডওয়্যার ব্যবসা বন্ধ করে নেক্সট সফটওয়্যার ইনকর্পোরেশনে পরিণত হয়। নভেম্বর ২৯, ১৯৯৫ পিক্সারের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও নির্বাচিত হন স্টিভ। এর একবছর পরেই পিক্সার এনিমেশনের ‘টয় স্টোরি’ মুক্তি পায়। ১৯৯৬ নেক্সট কিনে নেয় অ্যাপল। নেক্সট-এর মালিক হিসেবে অ্যাপলে বোর্ড মেম্বার হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেন স্টিভ জবস। তার দায়িত্ব হয় পরামর্শক হিসেবে কাজ করা। এর পরপরই তিনি ইনটার্ম সিইও হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। আগস্ট ৬, ১৯৯৭ মাইক্রোসফট ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে অ্যাপলে। নভেম্বর ১০, ১৯৯৭ অ্যাপল স্টোর চালু হয়। জানুয়ারী ৮, ১৯৯৮ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় অ্যাপল। মে ৬, ১৯৯৮ বাজারে আসে আইম্যাক কম্পিউটার। জানুয়ারী ৫, ২০০০ ম্যাক ওএস-এর যাত্রা শুরু। জানুয়ারী ৯, ২০০১ আইটিউনস-এর যাত্রা শুরু হয় স্টিভ জবসের হাতে। মার্চ ২৪, ২০০১ চিতা নামের প্রথম ম্যাক ওএস টেন চালু হয়। মে ১৯, ২০০১ ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম অ্যাপল স্টোর চালু। বর্তমানে ৩৩০ অ্যাপল স্টোর চালু আছে। অক্টোবর ২৩, ২০০১ বাজারে আসে গান শোনার যন্ত্র আইপড। এপ্রিল ২৮, ২০০৩ আইটিউনস মিউজিক স্টোর চালু। আগস্ট ১, ২০০৪ প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সার টিউমার অপসারণ করতে সার্জনের ছুরির নীচে স্টিভ জবস। জানুয়ারী ১১, ২০০৫ আইপড শাফল বাজারে আসে। জুন ৬, ২০০৫ ম্যাক বুক প্রো এবং আইম্যাক বাজারে আসে। সেপ্টেম্বর ৭, ২০০৫ আইপড ন্যানো বাজারে আসে। জানুয়ারী ১৩, ২০০৬ অ্যাপলের বাজার মুলধন ডেলকে ছাড়িয়ে যায়। জানুয়ারী ২৫, ২০০৬ ওয়াল্ট ডিজনি কিনে নেয় পিক্সার অ্যানিমেশন। স্টিভ ওয়াল্ট ডিজনির বোর্ড মেম্বার হন। ফ্রেব্রুয়ারি২, ২০০৬ আইটিউনে বিলিয়ন সংখ্যক গান বিক্রির রেকর্ড হয়। জানুয়ারী ৯, ২০০৭ আইফোন বাজারে আসে। সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৭ বাজারে আসে আইপড টাচ। ডিসেম্বর ৫, ২০০৭ ক্যালিফোর্নিয়ার হল অফ ফেম-এ স্থান হয় স্টিভের। জানুয়ারী ১৫, ২০০৮ ম্যাকবুক এয়ার বাজারে আসে। জুন ৯, ২০০৮ মোবাইল মি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ক্লাউডে যাত্রা শুরু। জানুয়ারী ১৪, ২০০৯ স্বাস্থ্যের অবনতি। ছয় মাসের মেডিকেল লিভ নেন স্টিভ জবস। জানুয়ারী ২৭, ২০১০ বাজারে আসে আইপ্যাড জানুয়ারী ১৭, ২০১১ স্বাস্থ্যের আবারও অবনতি। আবারও মেডিকেল লিভ নেন স্টিভ জবস। মার্চ ২,২০১১ আইপ্যাড ২ নিয়ে ফেরেন স্টিভ জবস। জুন ৬, ২০১১ অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্সে কি নোট স্পিচ দেন। জুন ৭, ২০১১ অ্যাপলের নতুন হেড অফিসের যাত্রা শুরু। জানুয়ারী ১৪, ২০০৯ স্বাস্থ্যের অবনতি। ছয় মাসের মেডিকেল লিভ নেন স্টিভ জবস। জানুয়ারী ২৭, ২০১০ বাজারে আসে আইপ্যাড জানুয়ারী ১৭, ২০১১ স্বাস্থ্যের আবারও অবনতি। আবারও মেডিকেল লিভ নেন স্টিভ জবস। মার্চ ২,২০১১ আইপ্যাড ২ নিয়ে ফেরেন স্টিভ জবস। জুন ৬, ২০১১ অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্সে কি নোট স্পিচ দেন। জুন ৭, ২০১১ অ্যাপলের নতুন হেড অফিসের যাত্রা শুরু। জানুয়ারী ১৪, ২০০৯ স্বাস্থ্যের অবনতি। ছয় মাসের মেডিকেল লিভ নেন স্টিভ জবস। জানুয়ারী ২৭, ২০১০ বাজারে আসে আইপ্যাড জানুয়ারী ১৭, ২০১১ স্বাস্থ্যের আবারও অবনতি। আবারও মেডিকেল লিভ নেন স্টিভ জবস। মার্চ ২,২০১১ আইপ্যাড ২ নিয়ে ফেরেন স্টিভ জবস। জুন ৬, ২০১১ অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্সে কি নোট স্পিচ দেন। জুন ৭, ২০১১ অ্যাপলের নতুন হেড অফিসের যাত্রা শুরু। আগস্ট ৯, ২০১১ এক্সন মোবাইলকে ছাড়িয়ে বাজার মূলধনের হিসেবে বিশ্বের এক নম্বর কোম্পানি হয়ে যায় অ্যাপল। আগস্ট ২৪, ২০১১ অ্যাপলের সিইও পদ থেকে অবসরে যান এবং অ্যাপলের চেয়ারম্যান পদ গ্রহন করেন। অক্টোবর ৫, ২০১১ মৃত্যুদিন।
স্টিভের মৃত্যুসংবাদে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়াঃ
অ্যাপলের ওয়েবসাইটে স্টিভ জবসের মৃত্যুসংবাদ জানানোর পর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার থেকে শুরু করে বিশ্বনেতারাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, স্টিভের বন্ধু এবং অ্যাপল সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক, ফেসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গসহ আরো অনেকেই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও তাদের প্রথম পাতা জুড়ে স্টিভের স্মরণে আর্টিকেল ছেপেছে। প্রযুক্তিবিশ্লেষকরা তাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্ন প্রযুক্তি সাইটে। টুইটার ফেসবুকেও উঠেছে বিভিন্ন মানুষের শোকের বার্তা।
স্টিভের মৃত্যুর খবর শোনার পর বিল গেটস তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘পৃথিবী গৌরবজনক প্রভাববিস্তারী এক বিরল ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ করেছে। আগামী অনেক প্রজন্ম তাকে স্মরণ করবে। আমরা যারা তার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সত্যিই ভাগ্যবান। নিশ্চিতভাবেই এ এক অসম্ভব সম্মানের বিষয়।’
গত শতকের ‘৭০ দশকের শুরু থেকে কাজ শুরুর পর কম্পিউটর জগতের চূড়োমনি হয়ে ওঠেন জবস ও গেটস। একজন অ্যাপলে, অন্যজন মাইক্রোসফটে। তাদের মধ্যে দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের প্রধান হিসেবে অলিখিত এক প্রতিদ্বন্দিতায়ও ছিলো। দুজন দুক্ষেত্রে সফলও হয়েছিলেন।
জবসের সঙ্গে দেখা প্রায় ৩০ বছর আগে, জানালেন গেটস। মৃত্যুর খবর শুনে তার প্রতিক্রিয়া ছিলো- ‘আমি ভীষণ মর্মাহত। তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমার ও মেলিন্ডার (গেটসের স্ত্রী) সমবেদনা রইলো। সহানূভূতি প্রকাশ করছি সেই সব মানুষের প্রতিও, জবসের কাজ যাদের স্পর্শ করেছিলো।’
কারো প্রশংসা করতে গেলে জবস বলতেন, ‘ইনসেইনলি গ্রেট’। বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একই বাক্যই উচ্চারণ করেছেন গেটস। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি ভাগ্যবান, তার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলাম। তাকে আমি ভীষণ মিস করবো।’
জবসের মৃত্যুর পর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকর্মী স্টিভ ওজনিয়াক জানিয়েছেন, ‘স্টিভের এভাবে চলে যাওয়া আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে। আমার মন বসাতে পারছি না, কিছু করতে পারছি না। এটা যেনো জন লেননের চলে যাওয়া বা জেএফকে (প্রেসিডেন্ট কেনেডি)-এর চলে যাওয়া। আমার মধ্যে সে বিরাট এক শূন্যতা রেখে গেলো।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জবসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘আমি আর মিশেল স্টিভের মৃত্যুতে খুবই দুঃখ পেয়েছি। মার্কিন উদ্ভাবকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠদের তালিকায় তিনি ছিলেন। তিনি গতানুগতিব ধারা থেকে ভিন্নাভাবে চিন্তা করার মতো যথেষ্টই সাহসী ছিলেন, সাহসী ছিলেন পৃথিবীকে বদলে দেবার মতো ভাবনায় বিশ্বাস করতে। আর সর্বপরি এসব করে দেখানোর ক্ষমতাও তার ছিলো।
মার্ক জুকারবার্গ, পল অ্যালেন, মাইকেল ডেল, সের্গেই ব্রিন, ল্যারি পেজ, স্টিভ বলমারসহ অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
জবস মারা যাবার পরই মিডিয়া জুড়ে তার মৃত্যুর খবরটি শিরোনামে চলে আসে। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইউএসএ টুডেসহ অনেক মিডিয়ায় শিরোনাম বসিয়েছে জবসের মারা যাবার খবরটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ‘ভবিষ্যদ্রষ্টা জবস যিনি ডিজিটাল যুগে সঙ্গীত, মুভি এবং মোবাইল যোগাযোগে সংস্কৃতির পরিবর্তন এনেছেন।’ একরকম বক্তব্য ছেপেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও। ইউএসএ টুডে আরো জুড়ে দিয়েছে ‘মানুষের প্রযুক্তি ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন তিনি। এমনকি পাল্টে দিয়েছেন প্রযুক্তির ব্যবহারও।’
যে কারণে স্টিভ জবস গুরুত্বপূর্ণঃ
সময়ের সঙ্গে কখনো কখনো এমন সৃষ্টি এসে হাজির হয় যা ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের চাকা। কোনো ব্যক্তি যদি তার কর্মসূত্রে এমন একটিও যুগান্তকারী উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন তবে তিনি অসম্ভব ভাগ্যবান। অ্যাপলে আমাদের সুযোগ হয়েছে যুগ পাল্টে দেয়া এমন একাধিক পণ্য নিয়ে কাজ করার। ১৯৮৪ সালে আমরা নিয়ে আসি ম্যাকিন্টস। এটা কেবল অ্যাপলকে বদলে দেয়নি, এটা পুরো কম্পিউটার শিল্পকেই বদলে দিয়েছিল। ২০০১ সালে আমরা নিয়ে আসি আইপড। এটা যে কেবল আমাদের গান শোনার অভ্যাস বদলে দিয়েছে তা নয়, এটা পুরো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ধরন পাল্টে দিয়েছে। আজ আমরা এমনই একটি দিনে হাজির হয়েছি। আজ আমরা নতুন করে টেলিফোন আবিষ্কার করবো…’
ওপরের কথাগুলো স্টিভ জবস বলেছিলেন ২০০৭ সালে আইফোন লঞ্চ করার
অনুষ্ঠানে। নূন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিমাত্রই জানেন বর্তমান টেলিকম বিশ্বে অ্যাপ্লিকেশন বেইজড যে মোবাইল যুগ চলছে সেটি শুরু হয়েছিল আইফোনের ‘স্পর্শেই’।
আইফোনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই ‘যুগ পাল্টে দেয়া’ প্রযুক্তির কৃতিত্ব স্টিভ জবস অ্যাপল নামের প্রতিষ্ঠানকে দিলেও, যারা এই টেকনোলজি জায়ান্ট সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা ঠিকই জানেন এর পুরো কৃতিত্ব দলনেতা এবং গুরু হিসেবে স্টিভ জবস-এর। একজন মানুষ কীভাবে একটি যুগের গতিপথ তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারেন তার সর্বশেষ উদাহরণ স্টিভেন পল জবস, কাছের লোকজনের কাছে যার নাম ছিলো স্টিভ।
কথিত আছে, ১৯৭৬ সালে নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াক-এর সঙ্গে কাজ করার সময় ওজনিয়াক বেঁকে বসেছিলেন এই বলে যে, টেবিলে বা ডেস্কে সেট করা যাবে এমন কম্পিউটার বানানো সম্ভব নয়। জবাবে স্টিভ বলেছিলেন, ‘ওজ, আমি জানি এটা করা সম্ভব এবং তুমিই সেটা পারবে’। এই ধারাবাহিকতাতেই এসেছিলো অ্যাপল ম্যাকিন্টস। জবস ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, ইলেকট্রিক ক্যাপাসিটরভিত্তিক সার্কিটের যে ভবিষ্যৎ এবং ওজনিয়াকের ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে যে জ্ঞান তাতে ডেস্কটপ কম্পিউটার কল্পনার কোনো বিষয় নয়। এই দূরদৃষ্টিই স্টিভকে আলাদা করে দেয় অন্য যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে। অন্যরা যেখানে অর্থিক লাভের ভবিষ্যত দেখেন, স্টিভ সেখানে দেখেছেন যুগ নির্ধারণ করে দেয়া প্রযুক্তি।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে যদি মূল্যায়ন করতে হয়, তবে একটি উপমা সম্ভবত যুক্তিযুক্ত হবে। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ইভেন্টে যদি একজন অ্যাথলেটকে মাঝপথে ট্র্যাক থেকে বের করে দিয়ে তারপর আবার দৌড়াতে বলা হয়, আর ওই দৌড়বিদই যদি শেষ পর্যন্ত সোনার মেডেলটি জিতে নেন, তবে তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব? ঠিক একই ধরনের ঘটনার উদাহরণ ছিলেন স্টিভ নিজেই।
নিজে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবেন বলে অ্যাপলে স্টিভ নিয়ে এসেছিলেন পেশাদার একজন সিইও। সেই পেশাদার ব্যক্তি অ্যাপলে এসেই ক্ষমতার পেশাদারী লড়াই আর বোর্ডরুম পলিটিক্সে নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে সিইওর ক্ষমতাবলে চাকরিচ্যুত করেন প্রতিষ্ঠাতাকেই। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৫ সালে। তখন স্টিভের বয়স ৩০, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপল টু কম্পিউটার তখন বাজার মাত করেছে আর ব্যক্তি জীবনে স্টিভ তখন মাত্রই বিয়ে করেছেন।
এরপর মাত্র এক দশকের মাথায় বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি অ্যাপল লোকসান দিতে দিতে দেউলিয়া হবার উপক্রম হয়। ১৯৯৭ সালে আবার তাকে অ্যাপলে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এরপর স্টিভ শুন্য থেকে আবার অ্যাপল গড়ে তুলতে শুরু করেন। এরই মাঝে তিনি তৈরি
করেন পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও এবং সফটওয়্যার কোম্পানি নেক্সট।
১৯৯৭ থেকে ২০১১ এই ১৪ বছরে স্টিভ জবস অ্যপলকে শুন্য থেকে গড়ে তোলেন বিশ্বের ১ নম্বর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আর বিশ্বাব্যপী ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাপল পৌছায় দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা হিসেবে স্টিভ অ্যাপলের দুটি প্রধান ধারা সেট করে নেন। একটি হলো পুরোনো কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ কম্পিউটার আর দ্বিতীয়টি হলো ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা। ২০০১ সালে আইপডের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসে অ্যাপল। এরপর এতে যোগ হয় আইটিউনসভিত্তিক গানের ব্যবসা এবং এরপর যোগ হয় অ্যাপল টিভি এবং আইফোন। সেইসঙ্গে আসে আইফোন আইপড এবং আইপ্যাডভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবসা। মূলত এর পরপরই অ্যাপলের আর্থিক অবস্থার দিগন্ত ক্রমশ বিস্তৃত হতে শুরু করে।
যাত্রার শুরু থেকেই অ্যাপল পণ্যে প্রোডাক্ট ডিজাইন বিবেচিত হতে থাকে অসম্ভব গুরুত্বের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন বিভাগের প্রধান জনি আইভ যুক্ত আছেন প্রায় ১৫ বছর যাবত। তিনি অ্যাপল পণ্যের ডিজাইন সম্পর্কে বলেছিলেন, একটি ভালো ডিজাইন মানে হলো যতো কম ‘ডিজাইন’ সম্ভব। মুলত ডিজাইন বিষয়ে স্টিভের দৃষ্টিভঙ্গিও ছিলো একই। কোনোরকম বাহুল্যহীন ডিজাইনের পণ্য- যা কাজ করবে চমৎকারভাবে। অ্যাপল পণ্যে এই থিমটিই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন স্টিভ।
ব্যক্তি জীবনেও একই ফিলসফি দেখতে পাই আমরা। নিজের ক্যারিশমা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানকে, বিনিময়ে বেতন নিয়েছেন বছরে ১ ডলার। প্রভাবশালী সংবাদ সময়িকী টাইম-এ ৭বার প্রচ্ছদে এসছেন স্টিভ জবস, অথচ এ নিয়ে স্টিভ বা তার প্রতিষ্ঠান নীরবতা পালন করেছেন বরাবরই। এমনকী অ্যাপল যখন আর্থিক ক্ষমতায় মাইক্রোসফট বা খোদ মার্কিন সরকারের আর্থিক ক্ষমকাতেও টপকে যায়, তখনো স্টিভ বিনয়ী আচরণ করেছেন।
এ বছরই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর প্রযুক্তি সম্পাদক ওয়াল্ট মসবার্গ এক সাক্ষাৎকারে স্টিভকে জিজ্ঞেস করেন, অ্যাপলের মোট সম্পদের পরিমাণ মাইক্রোসফটকে ছাড়িয়ে গেছে, এ বিষয়ে আপনার অনুভ‚তি কী? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক ক্ষমতা দিয়ে মাণ নিধারণ করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, ব্যবসায় লাভ হয়তো এক ধরনের ভালোলাগার জন্ম দেয়, কিন্তু সেটি কখনোই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অ্যাপল সবসময় চেয়েছে ‘ইসসেনলি গ্রেট’ পণ্য তৈরি করতে এবং অ্যাপল সবসময় সেটিই করবে।’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন সিএসআর বা কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটি ফলাও করে প্রচার করে, সেখানেও স্টিভ অবম্ভব নিরব হয়ে বিনয়ী। এই বছরই নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় আকারে একটি আর্টিকেল ছাপা হয় যাতে প্রশ্ন করা হয়েছিলো বিল গেটসের বেলায় যেমনটা জানা যায় তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যায় করেন, স্টিভ জবসের বেলায় তেমন শুনতে পাই না কেন? এই প্রশ্নটির উত্তর অ্যাপল বা স্টিভ জবস দেননি, দিয়েছিলেন মিউজিক্যাল ব্যান্ড ইউটু-র ভোকালিস্ট এবং আফ্রিকায় মানবউন্নয়ন কর্মী বনো।
ওই আর্টিকেলটি ছাপা হবার পরের দিনই বনো একটি চিঠি পাঠান নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়। সেখানে তিনি বলেন, স্টিভ জবস রঙ্গিন আইপড-এর মডেলগুলো তৈরি করেছিলেন চ্যারিটির কথা মাথায় রেখেই। তিনি বিশেষ একটি মডেলের রঙ্গিন আইপড-এর লাভের পুরো টাকা দিয়েছিলেন আমার প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি সংস্থায়।’ বনো বলেছিলেন, ‘স্টিভ অন্য রঙ্গিন মডেলগুলোর লাভের অর্থ কোন প্রতিষ্ঠানে কতো দান করছেন তা আমি বলতে পারছি না, তবে আমি জানি আমার প্রতিষ্ঠানে তিনি কতো মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।’
বিশ্বের বেশিরভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যখন মার্কেটে চলতি চাহিদা অনুসারে পণ্য তৈরি করেছে, তখন স্টিভ হেটেছেন উল্টো পথে। তিনি একেবারে নতুন ধারণার পণ্য প্রবর্তণ করেছেন এবং তারপর সেই পণ্যটির চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ কথাটি সত্যি ডেস্কটপ কম্পিউটার, আইপ্যাড, আইফোন এমনকি হালের আইপ্যাড সম্পর্কেও। মানুষ কোন প্রযুক্তি অবচেতনভাবেই পেতে চায় সেটি অনুমান করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো স্টিভ জবসের।
‘বাট দেয়ার্স জাস্ট ওয়ান মোর থিং’- ঠিক এই কথাটিই বলতেন স্টিভ। নতুন কোনো পণ্য সম্পর্কে মঞ্চে বক্তৃতা দেয়ার সময় স্টিভ বরাবরই একটি শেষ চমক রাখতেন। তার জাদুকরি প্রেজেন্টেশনের শেষের এই চমকটির জন্যও একধরনের আগ্রহও কাজ করতো দর্শকদের মধ্যে। এর ফলে শেষের বছরগুলোতে স্মিত হেসে স্টিভ যখন বলতেন ‘দেয়ার্স জাস্ট ওয়ান মোর থিং’ গোটা অডিটোরিয়াম করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠতো। উপস্থিত সবাই জানতেন সবচেয়ে বড় চমকটিই আসছে এখন।
আজকের বাস্তবতা হলো কেউ আর বলবেন না, আরো একটি বিষয় বাকী আছে। ব্লু জিন্স, টার্টলনেক টিশার্ট আর স্নিকার পরে এসে কেউ আর হাসি মুখে মঞ্চে এসে দাঁড়াবেন না। অসম্ভব আত্মবিশ্বাস নিয়ে কেউ বলবেন না, ‘গুড মর্নিং, উই হ্যাভ সাম ওয়ান্ডাফুল থিংস টু শেয়ার উইথ ইউ টুডে!’
তথ্যপ্রকৌশলে স্টিভ জবসের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় থাকা প্রায় ৩০০ প্রযুক্তি পেটেন্টের উদ্ভাবক অথবা সহ-উদ্ভাবক হিসেবে জবসের নাম জড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি উপকরণের উদ্ভাবক ও এগুলোর তৈরির আগে প্রাথমিক ভাবনার নিয়ামক হওয়ার কারণে অনেকেই এই প্রযুক্তিবিদকে আধুনিক পৃথিবীর ‘লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রিয় পাঠক, আসুন দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিই, তথ্যপ্রযুক্তি জগেক বদলে দেওয়া স্টিভ জবসের ১০টি যুগান্তকারী কাজের ওপর।
তথ্যপ্রকৌশলে স্টিভ জবসের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় থাকা প্রায় ৩০০ প্রযুক্তি পেটেন্টের উদ্ভাবক অথবা সহ-উদ্ভাবক হিসেবে জবসের নাম জড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি উপকরণের উদ্ভাবক ও এগুলোর তৈরির আগে প্রাথমিক ভাবনার নিয়ামক হওয়ার কারণে অনেকেই এই প্রযুক্তিবিদকে আধুনিক পৃথিবীর ‘লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রিয় পাঠক, আসুন দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিই, তথ্যপ্রযুক্তি জগেক বদলে দেওয়া স্টিভ জবসের ১০টি যুগান্তকারী কাজের ওপর।
১. অ্যাপল-১ (১৯৭৬):
এটি ছিল অ্যাপল কম্পিউটারের উদ্ভাবিত প্রথম পণ্য। মূলত শখের কম্পিউটার ব্যবহারকারী ও প্রকৌশলীদের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি হয়েছিল। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজিয়ানিকের ডিজাইন করা এই অ্যাপল-১ কম্পিউটারের অর্থায়ন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্টিভ জবসের নাম। এই অ্যাপল-১ বদলে দিয়েছিল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ধারণা।
২.অ্যাপল-২ (১৯৭৭):
অ্যাপল-১-এর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পরের সংস্করণটি তৈরি করে অ্যাপল কম্পিউটার। অ্যাপল-১ খুব অল্প কয়েকটি তৈরি হলেও অ্যাপল-২-এর ক্ষেত্রে গণ-উত্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়। এটি বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয় ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে। পরের প্রায় ১৪-১৫ বছর ধরে এই অ্যাপল-২ কম্পিউটারের বাজারে টিকে ছিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নত সংস্করণও বাজারে ছাড়া হয়। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে এটি অ্যাপল-২ নামেই টিকে ছিল।
৩. লিসা (১৯৮৩):
লিসা ছিল একটি বাণিজ্যিক কম্পিউটার। মূলত বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এটি তৈরি করা হয়। এতেই প্রথমবারের মতো আইকন, মাউস-নিয়ন্ত্রিত কারসর ও গ্রাফিক্যাল ইউজারস ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি, সেটার ধারণা এই লিসা থেকেই উত্সারিত।
৪. ম্যাকিনটোশ (১৯৮৪):
এটিও গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস ব্যবহার করে তৈরি। লিসার চেয়েও ম্যাকিনটোশ ছিল সস্তা ও দ্রুতগতির। ব্যাপক বিপণন ও প্রচারণার মধ্য দিয়ে ম্যাকিনটোশ পৃথিবীময় বাজারজাত করা হয়। ম্যাকিনটোশ বাজারে আসার পরপরই ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারে, বিভিন্ন অলংকরণের জন্য গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস কতটা জরুরি। ডেস্কটপ প্রকাশনার জগতেও নতুন বিপ্লব ঘটায় এই ম্যাকিনটোশ।
৫. ‘নেক্সট’ কম্পিউটার (১৯৮৯):
স্টিভ জবস ততদিনে অ্যাপল ছেড়ে দিয়েছেন অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন নেক্সট কম্পিউটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যারা তৈরি করা শুরু করল বিভিন্ন কম্পিউটার প্ল্যাটফর্ম। সেই সময়ই তৈরি হয় এই ‘নেক্সট কম্পিউটার।’ এতে প্রথম সংযোজিত হয় ওয়েব ব্রাউজিংয়ের সুবিধা। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা www এর আবিষ্কার এই টিম বার্নারস লি এই নেক্সট কম্পিউটারটি পৃথিবীর প্রথম ইন্টারনেট সার্ভার হিসেবে ব্যাবহার করেন বর্তমান কালের বহুল আলোচিত প্রতিষ্ঠান CERN এর কার্যালায়ে! তবে নেক্সট কম্পিউটার কখনোই তেমন অধিক পরিমাণে বিক্রি হয়নি। কিন্তু একে বলা হয়, আজকের আইফোনের অপারেটিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। একে আইফোনের জনকও বলা যেতে পারে।
৬. আই-ম্যাক (১৯৯৮):
বিল গেটসের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশনের ‘উইন্ডোজ’ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে তখন মেতে আছে গোটা পৃথিবী। তখন ব্যক্তিগত কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম বলতেই মানুষ বোঝে উইন্ডোজের কথা। ১৯৯৬ সালে স্টিভ জবস ফিরে এসেছেন অ্যাপলে। সে সময় তাঁর প্রচ্ছন্ন উত্সাহ ও ভাবনার ফল ছিল এই আই-ম্যাক। নব্বই দশকের শেষ দিকে রং-বেরঙের বাহারি আই-ম্যাকের কথা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি। পুরো কম্পিউটার ও মনিটরটি ছিল একটি প্লাস্টিক বাবলের ভেতর। সেই সঙ্গে ছিল একটি মাউস। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য দারুণ উপযোগী ছিল সেই আই-ম্যাক। কম্পিউটার ব্যবহারকারীরাও পেয়েছিল উইন্ডোজের বাইরে গিয়ে পছন্দের কম্পিউটারটি কেনার সুযোগ।
৭. আইপড (২০০১):
আইপড হার্ডড্রাইভ-সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার। যদিও এটি পৃথিবীতে উদ্ভাবিত প্রথম ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার নয়, তার পরও সফলতার দিক দিয়ে এটিকে শীর্ষে রাখতেই হবে। এটি সংগীতপ্রিয়দের এনে দেয় একসঙ্গে কয়েক হাজার পছন্দের গান একটি ছোট্ট ডিভাইসে স্টোর করে রাখার অনন্য সুযোগ। গান শোনার ক্ষেত্রেও এটি তৈরি যোগ করে নতুন এক মাত্রা।
৮. আই-টিউন স্টোর (২০০৩):
এই দশকের শুরুর দিকে পাইরেসি ও ডিজিটাল চুরি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছিল বিশ্বের সংগীতশিল্প। ব্যবসায়িকভাবেও মার খাচ্ছিল তারা। জবস এই সমস্যা সমাধানে ২০০৩ সালে নিয়ে এলেন আই-টিউন স্টোর নিয়ে। এটি হয়ে উঠল সংগীতের এক বিরাট সংগ্রহ। সংগীতশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও খুঁজে পেলেন ডিজিটাল যুগে আদর্শ পরিবেশক-মাধ্যম। ২০০৮ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে ওঠে সংগীতের সবচেয়ে বড় খুচরা ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র।
৯. আইফোন (২০০৭):
মোবাইল ফোন আইফোন আসার আগে ছিল কথা বলার মাধ্যম। একই সঙ্গে সেটাতে ইন্টারনেট ব্যবহারেরও সুযোগ ছিল। কিন্তু আইফোন নিয়ে এল স্পর্শের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনন্য সুযোগ-সুবিধা। ম্যাকিনটোশ যেমন ব্যক্তিগত কম্পিউটারের বিপ্লব ছিল, ঠিক তেমনি আইফোন হলো মোবাইল ফোনে একধরনের বিপ্লব। আইফোন বাজারে নিয়ে আসার পর খুব দ্রুতই অ্যাপল পরিণত হয় মোবাইল ফোন বাজারের শীর্ষ খেলোয়াড়ে।
১০. আইপ্যাড (২০১০):
আইপ্যাড কিন্তু প্রথম ট্যাবলেট পিসি নয়। এর আগে অ্যাপলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ট্যাবলেট পিসি বানানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। আইপ্যাড ২০১০ সালে এসে বদলে দেয় ট্যাবলেট পিসির ধারণা। ল্যাপটপের পর কম্পিউটার কী চেহারার হবে, এটি প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অ্যাপলের আইপ্যাড।
এবার আইপ্যাড সম্পকে একটা মজার তথ্য………….যেটা আমার পেয়েছিলাম ২০১০ তা কিন্তু আমার ২৫ বছর আগে পেতাম যদি না স্টীভ জবস না সরানো হত………..:(
২৫ বছর আগেই স্টিভের হাতে ছিলো আইপ্যাড!
মোবাইল কম্পিউটিংয়ের জগতটাকে পাল্টে দেওয়া আইপ্যাড ২৫ বছর আগেই অ্যাপল সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভের হাতে দেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার প্রতিবেশী এবং প্রযুক্তির ভবিষ্যতবক্তা রে হ্যামন্ড। খবর টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এর।
রে দাবি করেছেন, আইকনিক উদ্ভাবক স্টিভ জবসকে অ্যাপল থেকে তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও জন স্কালি ‘তাড়িয়ে’ দেওয়ার আগেই স্টিভ জবস আইপ্যাড নিয়ে কাজ করছিলেন।
রে হ্যামন্ড ১২ অক্টোবর ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত ন্যাসকম ইঞ্জিনিয়ারিং সামিটে এ তথ্য জানিয়েছেন। ১৯৮৪ সালে হ্যামন্ড ‘দ্য অনলাইন হ্যান্ডবুক’ নামে ই-কমার্সের ওপর বিশ্বের প্রথম বই লিখেছিলেন। প্রযুক্তি বিষয়ে তার অনেক অনুমানই সঠিক হয়েছে। ফলে প্রযুক্তির ভবিষ্যতবক্তাই এখন তার পরিচয়। এ ছাড়াও তিনি একসময়ে স্টিভের প্রতিবেশী ছিলেন।
রে হ্যামন্ড জানিয়েছেন, স্টিভ জবসই আমাকে প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ঘটনার দিনটিতে আমি আমার গাড়িটি পরিষ্কার করছিলাম। একটু দূরেই আরেকটি লোক তার গাড়িতে কি জানি করছিলো। আমার সঙ্গে জানাশোনা অতোটা ছিলো না। আমার দিকে এগিয়ে এসে একটি স্প্যানার চাইলো। এর কিছুদিন পর সে একটি কম্পিউটার তৈরি করেছে বলে আমাকে দেখালো। তার সে কম্পিউটারটি দেখেই আমার প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেলো। এ ঘটনার দশ বছর পর আমি যখন অ্যাপলের হেডকোয়ার্টারে গেলাম তখন জানতে পারলাম প্রতিবেশী সেই লোকটির চাকরিই চলে গেছে!’
‘এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও স্কালি আমাকে একটি ভিডিও দেখালেন এবং বললেন, স্টিভ অ্যাপল থেকে চলে যাবার সময় এ ভিডিওটি তৈরি করে গেছে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, সে ভিডিওটি ছিলো এখনকার আইপ্যাডের।’
হ্যামন্ড আরো বলেছেন, ‘স্কালির সঙ্গে ভিডিওটি দেখার পরে স্কালি আমাকে বলেছিলেন ২০১০ সালে ডিভাইসটি বাজারে আসবে।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৭ মার্চ বাজারে আসে আইপ্যাড। আইপ্যাডের দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে আসে চলতি বছরের মার্চে। বর্তমানে এর তৃতীয় সংস্করণটি তৈরি করছে বলেই বাজারে খবর রয়েছে।
৪ বছরের পণ্য আগাম ঠিক করে গেছেন স্টিভ জবস
সদ্যই পৃথিবী ছেড়ে গেছেন ‘শিল্পী মন আর ইঞ্জিনিয়ার মস্তিষ্ক’ স্টিভ জবস। কিন্তু মৃত্যুর আগেই তার প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের ভবিতব্য তিনি ঠিক করে গেছেন। আগামী ৪ বছর নতুন পণ্যের জন্য অ্যাপলকে যেনো সংশয়ে ভুগতে না হয় সে ব্যবস্থা করে গেছেন তিনি। আইপড, আইপ্যাড, আইফোন এবং ম্যাকবুকসহ নতুন অনেক পণ্যেরই নকশা চূড়ান্ত করে গেছেন স্টিভ। খবর ডেইলি মেইল-এর।
‘স্পেসশিপ’ আকারের অ্যাপলের নতুন হেডকোয়ার্টার তৈরির পরিকল্পনা ছিলো তার। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চলতি বছরের জুন মাসেই তিনি অনুমতি দিয়ে গেছেন।
অ্যাপল সূত্রে বলা হয়েছে, জবস জানতেন, তার সময় ফুরিয়ে আসছে তাই তিনি পুরো এক বছর প্রচুর পরিশ্রম করেন। সে সময়ে তিনি অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা পণ্যগুলোর জন্য কাজ করেছেন।
অ্যাপল সূত্রে আরো হয়েছে, অ্যাপলের পাইপ লাইনে চার বছরের পণ্য স্টিভ নিজেই নকশা করে গেছেন। শেষদিকে তিনি ধরেছিলেন আইক্লাউডের কাজও।
জবস মৃত্যুর সময় রেখে গেছেন, প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের বিশাল সম্পদ, অ্যাপল, কাছের বন্ধুসহ অসংখ্য ভক্ত এবং পরিবারে তার স্ত্রী, একটি ছেলে এবং দুজন মেয়েকে। এ ছাড়াও রেখে গেছেন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টিভের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভার এখন অ্যাপলের বর্তমান সিইও টিম কুক-এর ওপর। তার সহযোগী হিসেবে আছেন জনি আইভ, ফিল শিলার সহ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মোট নয় জন।
চলুন এবার কিছু ছবি দেখি……………….
(ছবি ১: হাইস্কুলের বন্ধু স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক। সিলিকন ভ্যালির অ্যাপল গ্যারেজে। ১৯৭৬ সালে প্রথম অ্যাপল কম্পিউটার ৬৬৬.৬৬ ডলারে বিক্রি শুরু হয়)
(ছবি২: ১৯৮০ সালে অ্যাপল কম্পিউটার হাতে স্টিভ)
(ছবি ৩: ১৯৮৫ সালে স্টিভ জবসের সঙ্গে অ্যাপল সিইও জন স্কালির মতপার্থক্য দেখা দয়ে। জবস এবং ওজনিয়াক দুজনই অ্যাপল ছেড়ে দেন)
(ছবি ৪: ১৯৮৬ সালে স্টিভ নেক্সট নামে নতুন একটি কোম্পানি চালু করেছিলেন। এ কোম্পানিটির প্রথম কম্পিউটার বিক্রি শুরু হয়েছিলো ৪ বছর পরে)
(ছবি ৫: ১৯৯৭ সালে অ্যাডভাইজার হিসেবে অ্যাপলে ফিরলেন স্টিভ জবস। ৪৩ কোটি ডলারে নেক্সট কিনলো অ্যাপল। ফিরলেন স্টিভ)
(ছবি ৬: ১৯৯৮ সালে স্টিভ জবসের হাত ধরে এলো আই ম্যাক। বদলে গেলো অ্যাপল)
(ছবি ৭: আইবিএম এবং মটোরোলার সঙ্গে চুক্তি করে চিপ তৈরির কাজ শুরু করলো অ্যাপল যা পাওয়ারবুক ল্যাপটপ তৈরিতে সাফল্যা এনে দিলো স্টিভ জবসকে।)
(ছবি ৮: এলো আইপড ন্যানো)
(ছবি ৯: ২০০৬ সালে স্টিভ প্রতিষ্ঠিত পিক্সার কিনো নিলো ডিজনি। স্টিভ হয়ে গেলেন ডিজনির বোর্ড অফ মেম্বারদের অন্যতম।)
(ছবি ১০: ২০০৭ সালে এলো আইফোন। সেটি হাতেই স্টিভ দাঁড়িয়ে)
(ছবি ১১: এরপরই আইপ্যাড)
(ছবি ১২: টিম কুক এবং স্টিভ জবস)
(২০১১ স্টীব জবস এর বর্তমান অবস্থা। শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ……:'( )
এরকিছুদিন পরই মারা গেলে স্টীভ জবস……….
আরকিছুদিন পরই মারা গেলে স্টীভ জবস……….
খুব মিস করব এই প্রযুক্তি পাগল মানুষকে…….
স্টীভ জবসকে নিয়ে একটা
Steve Jobs Documentary
দেখুন ৫ টি Documentary ভিডিও… সময় ৪৮ মিনিট……
প্রথম পর্ব
[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=QgiEG-NsAB0&feature=share]
দ্বিতীয় পর্ব
[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=3zvBLxvg7ds]
তৃতীয় পর্ব
[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=6tnz3NpR1xg]
চতূর্থ পর্ব
[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=K7tdqL_M87Y]
পর্ব পাচঁ
[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=TUXUbVG-Lx8]
এই পোষ্টটি লিখতে আমার অনেক দিন সময় লেগেছে…………..এবং এত বড় লেখাটি পড়ার জন্য…………….. ধন্যবাদ..জানি অনেকেই সম্পূন লেখাটা পড়বে না। কারন এতবড় লেখা পড়ার সময় নেই আমাদের্।কেউ পড়ুক কিংবা না পড়ুক আমার কিছু যায় আসে না। নিজের তৃপ্তির জন্য লিখাটি লিখলাম……………